জুমবাংলা ডেস্ক: মাঠ ভরা তরমুজ নিয়ে খুলনার কৃষকদের কান্নার সেই দৃশ্য এখনও ঝাপসা হয়নি। দাম কমে যাওয়ায় গেল বছর খেতেই নষ্ট হয়েছে কোটি কোটি টাকার তরমুজ। লোকসানের ধাক্কা কাটাতে এবারও আশার বীজ বুনেছিলেন কৃষকেরা।
তরমুজের ফলনও ভালো হয়েছে। কিন্তু ভারি বর্ষণ এবং দাম নিয়ে দুশ্চিন্তা ভর করেছে কৃষকদের মনে।
গত ২১ মার্চ একদিনের শিলা বৃষ্টিতেই নষ্ট হয়েছে ২০৩ হেক্টর জমির প্রায় ১০ কোটি টাকার তরমুজ। তাই এখন মাঠ ভরা তরমুজ দেখেও স্বস্তি পাচ্ছেন না কৃষকেরা।
স্থানীয় কৃষক ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৬ সালে খুলনা জেলায় তরমুজ চাষ হয়েছিল মাত্র ৪০৭ হেক্টর জমিতে। অল্প সময়ে স্বল্প পুঁজিতে অধিক লাভের আশায় গত কয়েকবছর ধরে খুলনার উপকূলীয় উপজেলাগুলোর কৃষকরা তরমুজ চাষে ঝুঁকেছেন। দিন দিন তরমুজ চাষের পরিমাণও বাড়ছিলো খুলনায়।
২০২১ সালে খুলনায় তরমুজ চাষ হয়েছিল সাত হাজার ৫১২ হেক্টর জমিতে।
বিপুল পরিমাণ মুনাফা হওয়ায় ২০২২ সালে রেকর্ড ১৩ হাজার ৯৭০ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়।
কিন্তু অতিরিক্ত জমিতে দেরিতে চাষ শুরুই কাল হয়ে দাড়ায় কৃষকদের জন্য। তরমুজ বাজারে আসতে আসতে ঈদ চলে আসে। শুরু হয় বর্ষা মৌসুম। রাতারাতি দাম তলানিতে নেমে আসে।
ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়েন কৃষকরা। মাঠ থেকে তরমুজ সংগ্রহ করে বিক্রির খরচ না ওঠায় মাঠেই পড়ে ছিলো তরমুজ।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, লোকসানের কারণে এ বছর তরমুজ চাষ কমেছে। চলতি বছর খুলনায় ১২ হাজার ২২৫ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে। যা গত বছর থেকে এক হাজার ৭৪৫ হেক্টর কম।
এবার হেক্টর প্রতি ৩৫ থেকে ৪০ মণ ফলনের আশা করছে অধিদপ্তর।
তাদের হিসাবে, হেক্টর প্রতি দাম পাঁচ লাখ ধরে এ বছর ৬১১ কোটি টাকার তরমুজ বিক্রির সম্ভাবনা ছিলো।
কিন্তু শিলাবৃষ্টি ও লাগাতার বর্ষণে সব হিসাব ভেস্তে যেতে বসেছে।
খুলনার তরমুজ চাষের অর্ধেকই হয় দাকোপ উপজেলায়। এ বছর দাকোপে ছয় হাজার ৩২০ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে। যা গত বছর থেকে এ হাজার ২৮৫ হেক্টর কম।
দাকোপের পরে বেশি তরমুজ চাষ হয় বটিয়াঘাটা উপজেলায়। এছাড়া কয়রা, পাইকগাছা ও ডুমুরিয়া অনেক জমিতে তরমুজ চাষ হয়।
সরেজমিন দেখা গেছে, দাকোপের বাণিশান্তা, সুতারখালী, কামারখোলা ও বাজুয়া ইউনিয়নে এবার আগেভাগেই তরমুজ চাষ শুরু করেন কৃষকরা। এসব জমির তরমুজ ৩/৪ কেজি ওজনের হয়েছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে এসব তরমুজ বাজারে আসবে।
দাকোপের অন্যান্য ইউনিয়ন ও বটিয়াঘাটার তরমুজ বাজারে আসতে আরও ২০/২৫ দিন সময় লাগবে।
কয়রা উপজেলায় এবার আগেভাগে এ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে। আর ১৫ দিনের মধ্যেই ফসল বাজারে আসবে। এরইমধ্যে গত ২১ মার্চ শিলাবৃষ্টিতে কয়রায় ২০০ হেক্টর এবং পাইকগাছায় তিন হেক্টর জমির তরমুজ পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে।
এখন দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে অন্য কৃষকদের।
দাকোপ উপজেলার বাণিশান্তা ইউনিয়নের কৃষক উৎপল রপ্তান জানান, গতবছরের তুলনায় বিঘাপ্রতি উৎপাদন খরচ চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা বেড়েছে। তারপরও গতবারের লোকসান পোষাতে তিন বিঘা জমিতে চাষ করেছেন। কিন্তু বৃষ্টি ও দাম নিয়ে দুশ্চিন্তা হচ্ছে।
একই উপজেলার পানখালী ইউনিয়নের কৃষক আজগর হোসেন জানান, গতবছর ১০ বিঘা জমিতে করলেও এ বছর তিন বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন। তরমুজ বাজারে আসতে আরও ২০/২৫ দিন লাগবে। এরমধ্যে শুরু হয়েছে বৃষ্টি। ফলন ভালো হলেও বৃষ্টি নিয়ে দুশ্চিন্তা কাটছে না।
কয়রা উপজেলার ভারপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা অসীম কুমার দাস বলেন, লোকসান কাটাতে এবার আগেভাগেই চাষ শুরু হয়েছিল। কিন্তু একদিনের শিলা বৃষ্টিতে ২০০ হেক্টর জমির তরমুজ পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১০ কোটি টাকার।
দাকোপ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কে এম মাকসুদুন্নবী বলেন, লোকসানের কারণে এবার কিছুটা কম জমিতে তরমুজ হয়েছে। তবে গতবারের তুলনায় এবার ফলন ভালো। ভারী বৃষ্টিতে দুই-এক জায়গায় গাছ নষ্ট হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনার অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, এবার ভালো ফলন হওয়ায় গতবারের ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার আশায় ছিলাম। কিন্তু শিলাবৃষ্টি ও অতি বৃষ্টিতে দুশ্চিন্তা বাড়ছে।
তিনি আরও বলেন, তারপরও হেক্টর প্রতি পাঁচ লাখ টাকা দাম ধরে ৬০০ কোটি বা কাছাকাছি টাকার তরমুজ বিক্রি হবে বলে আশা করছি। –ইউএনবি
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।