প্রশ্নটা শুনে একটু অবাক হতে পারেন। বিজ্ঞানীরা ইতিমধ্যে গ্রহরাজ বৃহস্পতির কয়েক ডজন চাঁদ আবিষ্কার করেছেন। তবে এ প্রশ্নের উত্তরটা যতটা সহজ মনে হয়, তার চেয়ে একটু জটিল। এককথায় উত্তর দেওয়া সহজ নয়। গত ১৪ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে বৃহস্পতির অন্যতম বড় চাঁদ ইউরোপার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার ইউরোপা ক্লিপার মিশন।
ইউরোপায় প্রাণ বা প্রাণ থাকতে পারে এমন জায়গা খুঁজে বের করাই এ মিশনের উদ্দেশ্য। পৃথিবীর বাইরে জীবন সন্ধানের জন্য অন্যতম সেরা জায়গা মনে করা হয় এই ইউরোপা চাঁদকে। তাই বিজ্ঞানীদের কাছে বৃহস্পতির চাঁদ বেশ মূল্যবান। এরকম আরও অনেক চাঁদ গ্রহটির চারপাশে ঘুরছে। ঠিক কতটি চাঁদ আছে বৃহস্পতির?
বিজ্ঞানীরা এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহটির ৯৫টি চাঁদের কথা নিশ্চিত করেছেন। এগুলো আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিজ্ঞান ইউনিয়ন স্বীকৃতি দিয়েছে। তবে স্বীকৃত নয়, এমন অনেক উপগ্রহও রয়েছে বৃহস্পতির। এখন পর্যন্ত বৃহস্পতির সর্বাধিক পরিচিত চারটি চাঁদ হলো গ্যালিলিয়ান চাঁদ। ১৬১০ সালে বিজ্ঞানী গ্যালিলিও গ্যালিলি এ চাঁদগুলো আবিষ্কার করেছিলেন বলে এগুলোকে বলা হয় গ্যালেলিয়ান চাঁদ।
প্রাচীন গ্রিক পুরাণের দেবতা জিউসের সঙ্গে সম্পর্কিত নাম থেকে এই চারটি উপগ্রহের নামকরণ করা হয় গ্যানিমিড, ক্যালিস্টো, আইও এবং ইউরোপা। এগুলো প্রাচীন গ্রিক নাম হলেও জুপিটার কিন্তু জিউসের প্রাচীন রোমান নাম। এই চারটি চাঁদের প্রত্যেকটি আকারে আমাদের চাঁদের (পৃথিবীর একমাত্র চাঁদ) চেয়ে বড়।
এতটাই বড় যে বৃহস্পতির সব চাঁদের মধ্যে এই চারটির মোট ভর প্রায় ৯৯.৯৭ শতাংশ। আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষিত বাকি আর ৯১টি চাঁদের প্রত্যেকটি ব্যস মাত্র ১ কিলোমিটার বা তারচেয়ে একটু বেশি। এরমধ্যে ৫৭টি চাঁদের নাম আছে এবং আরও ৮টি চাঁদ প্রায় বৃত্তাকার কক্ষপথে নিয়মিত বৃহস্পতির চারপাশে ঘোরে।
তবে এই নিয়মিত চাঁদগুলো ছাড়াও আরও হাজার হাজার ছোট ‘মুনলেট’ আছে, যা গ্রহরাজকে কেন্দ্র করে ঘোরে। মুনলেট মানে গ্রহাণু বা ধ্বংসাবশেষের টুকরোকে বোঝানো হচ্ছে। বৃহস্পতির চারপাশে এমন মুনলেট রয়েছে অগণিত। সেগুলোকে ভালোভাবে বিজ্ঞানীরা পর্যবেক্ষণ করতে পারেনি বলে এখনো নামকরণ করা হয়নি এবং সেগুলোকে স্বীকৃত চাঁদ বলেও ঘোষণা দেয়নি। তবে ওগুলোর বৈশিষ্ট্য এবং কক্ষপথ সম্পর্কে জানা গেলে স্বীকৃত দেওয়া সময়ের অপেক্ষা মাত্র।
প্রশ্ন করতে পারেন, এগুলো সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা জানবেন কীভাবে? আসলে কোনো নভোযান গ্রহটির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় এসব মহাকাশীয় বস্তুর ছবি তোলে। সেগুলো বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা নানা তথ্য পান। সেই তথ্যানুসারে কোনো মুনলেট বা মহাকাশীয় বস্তুকে চাঁদ বলে স্বীকৃতি দেন।
সম্প্রতি ইউরোপার উদ্দেশ্যে পাঠানো ক্লিপার মিশনের সাহায্যে হয়তো আরও এমন কিছু মুনলেটের সম্পর্কে জানা যাবে। তখন বেড়ে যাবে বৃহস্পতির চাঁদের সংখ্যা। তবে সে জন্য আরও প্রায় ৫ বছর অপেক্ষা করতে হবে। কারণ, ইউরোপা ক্লিপার মিশন ইউরোপায় পৌঁছাবে ২০৩১ সালে।
শুধু বৃহস্পতি নয়, এমন ততোধিক চাঁদের মালিক শনি, ইউরেনাস ও নেপচুন। তবে বর্তমানে সৌরজগতের সবচেয়ে বেশি চাঁদের মালিক শনি গ্রহ। ১৪৬টি চাঁদ নিয়ে রয়েছে শীর্ষে। ক্লিপার মিশন শেষে হয়তো আবার শনিকে ছাড়িয়ে যাবে গ্রহরাজ বৃহস্পতি।
ফলে বৃহস্পতির ঠিক কতটা চাঁদ রয়েছে, তা হয়তো নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। তবে স্বীকৃত চাঁদের সংখ্যা ৯৫টি। যেকোনো সময় এই সংখ্যাটা বেড়ে যেতে পারে। একই কথা শনি, ইউরেনাস ও নেপচুনের ক্ষেত্রেও খাটে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।