বুধ, শুক্র ও মঙ্গলে আমরা নামতে পেরেছিলাম। তেমন একটা স্বাচ্ছন্দ্যকর না হলেও অন্ততপক্ষে কোনো কিছুর ওপর পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে চারপাশটা নিরীক্ষণ করা যায়। কিন্তু বৃহস্পতি ও শনির কথা যদি বলো, সেখানে নামা একেবারে অসম্ভব। এই দুই গ্রহ বস্তুতপক্ষে স্রেফ মেঘ দিয়ে তৈরি বললেও আপত্তি করার কিছু নেই।
বৃহস্পতি গ্রহটি—যত বড় দেখায় আসলে তত বড় নয়।কিন্তু বৃহস্পতির আছে দস্তুরমতো ৯৫টি উপগ্রহ। তাদের মধ্যে কতগুলো খুব বড়। দুটো আমাদের চাঁদের সমান, দুটো তো আবার আয়তনে বুধের চেয়ে কম না।
পৃথিবী থেকে বৃহস্পতির উপগ্রহগুলোর কোনো রকম খুঁটিনাটি আলাদা করে বোঝার উপায় নেই। অনেক দূরে। কিন্তু হালে মার্কিন স্বয়ংক্রিয় স্টেশন ‘পাইওনিয়ার’ ও ‘ভয়েজার’ বৃহস্পতি ও শনির পাশ দিয়ে উড়ে গেছে। তারা খুব কাছ থেকে ওই দুই গ্রহ এবং তাদের উপগ্রহদের ছবি তুলেছে। দেখা গেছে, বৃহস্পতির সবচেয়ে বড় বড় উপগ্রহগুলো খুব কৌতূহলোদ্দীপক।
‘ইউরোপা’—উজ্জ্বল, সাদা-সোনালি রঙের, সমান, যেন পালিশ করা। কিন্তু আগাগোড়া চিড়-খাওয়া। ‘গ্যানিমিড’—সবচেয়ে বড়, কালো, তার গায়ে আগাগোড়া সাদা সাদা আঁচড়। দেখে মনে হয় যেন কঠিন বরফে তৈরি, কালো খোসায় ঢাকা, তার ওপরে যেন ধারালো কোনো কিছু দিয়ে সপাং সপাং করে মারা হয়েছে।
‘ক্যালিস্টো’—বিশাল, খয়েরি রঙের, একেবারে ভাঙাচোরা। আগাগোড়া গর্তে আর গর্তে ক্ষতবিক্ষত। বৃহস্পতিকে রসিয়ে রসিয়ে দেখতে গেলে নামতে হয় আইওতে। আর সব উপগ্রহের চেয়ে এটাই বৃহস্পতির সবচেয়ে কাছে। বৃহস্পতি খুব দ্রুত ঘুরছে বলে তার বিষুবরেখা বরাবর এলাকায় মেঘের প্রলেপ পড়েছে—খরস্রোতা নদীর বুকে জলের ধারার মতো।
মেঘের এই ধারাগুলো অনবরত একটা আরেকটাকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে, কুণ্ডলী পাকিয়ে উঠছে, আকার বদল করছে। এক জায়গায়, বৃহস্পতির সাদা সাদা ফালির মধ্যে কোনো কোনো সময় চোখে পড়ে একটা অদ্ভুত লাল দাগ। নদীর তলা থেকে জল ঘুলিয়ে উঠলে যেমন হয়, এই জায়গাটায়ও যেন ঠিক তেমন। কোনো গভীর তলদেশ থেকে উঠছে লাল ধোঁয়া। রক্তিম মেঘ সাদা মেঘের ধারা কেটে কুণ্ডলী পাকিয়ে উঠছে, কখনো উজ্জ্বল হয়ে আসছে, কখনো-বা ফ্যাকাসে।
বলা যায় না, হয়তো এই মেঘের সমুদ্রের তলায় কোনো এক আগ্নেয়গিরি ফুঁসে উঠে অগ্ন্যুদ্গীরণ করছে, কখনো নিভে যাচ্ছে, কখনো নবোদ্যমে জ্বলে উঠছে? কোনো একদিন বৃহস্পতির এই রহস্যের সমাধান অবশ্যই হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।