বেদেপল্লীতে পৌঁছায় না শিক্ষার আলো

জুমবাংলা ডেস্ক: পূর্ব পুরুষের পেশাগত কারণে সামাজিক অবজ্ঞা ও অশিক্ষিত অভিভাবকদের সচেতনতার অভাবে শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত বেদে শিশুরা। জীবন-জীবিকার তাগিদে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ঘুরে বেড়ায় বলে যাযাবর বলা হয় তাদের। কোথাও স্থায়ী ভাবে বসবাস না করায় পরিবারের সঙ্গে যাযাবরের জীবন কাটে শিশুদেরও। দেশের সব শিশুরা যখন নতুন বই হাতে নিয়ে পাঠ্য বইয়ের সুগন্ধী নেয় তখন বই উৎসবের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয় বেদে জনগোষ্ঠীর শিশুরা। আর এভাবেই চলছে শিক্ষার মতো মৌলিক চাহিদা পূরণ না করেই যুগের পর যুগ।

বেদেপল্লীতে পৌঁছায় না শিক্ষার আলো

একজন কোমলমতি শিশুর হাতে যখন বই-খাতা থাকার কথা, তখন বেদে শিশুর হাতে তুলে দেওয়া হয় সাপের বাক্স। বেরিয়ে পড়তে হয় পরিবারের আহার জোটাতে।

সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার নোয়ারাই ইউনিয়নে, গোবিন্দগঞ্জ সৈদেরগাঁও ইউনিয়নের গোবিন্দনগর এলাকায় দেখা মিলে পলিথিন ও ছেঁড়া-ফাটা কাপড় দিয়ে তৈরি অস্থায়ী বেদেপল্লীর প্রায় ৫০০ পরিবারের শিশুরাও এভাবেই দূরে আছে শিক্ষার আলো থেকে।

বেদেপল্লীর মোহাম্মদ সৌরভ স্কুলে ভর্তি হবার আগ্রহ প্রকাশ করে জানায়, আমি পড়ালেখা করতে চাই। ঘরে আব্বা আম্মা স্কুলে ভর্তি করে না।

কারণ জানতে চাইলে সৌরভ জানায়, তাদের এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় থাকতে হয়। তাই পড়ালেখা করতে পারে না।

গোবিন্দগঞ্জ বেদেপল্লীর সাবিয়া বেগমের (৭) বাবা মোহাম্মদ সালমান বলেন, ‘সকাল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা উপার্জন করতে গ্রামগঞ্জের পাড়া-মহল্লায় ঘুরে বেড়াই। সারা দিন শেষে ফিরতে ফিরতে প্রায়ই সন্ধ্যা। কোনো কোনো দিন আমাদের সাহায্যের জন্য তাকেও নিয়ে যাই। এখন থেকেই তাকে পেশাগত সব বিষয় জানতে হবে। নইলে বড় হয়ে কি করে খাবে শিশুরা?’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের তো স্কুলের কথা চিন্তা করাই যায় না। সারা বছর এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ঘুরে বেড়াই। কোথাও স্থায়ী ভাবে বসবাস করিনা। তাই স্কুলে ভর্তি হয়ে লাভ কি? তবুও আমার বড় ছেলেকে জগন্নাথপুরের একটি স্কুলে ভর্তি করেছিলাম সে স্কুলে যায় না। খেলায় নতবু কাজে চলে যায় তাই আর স্কুলে ভর্তি করিনা। এখানকার কোনো স্কুলে ভর্তি করলে ছয় মাস পর চলে যেতে হবে দেশের কোনো কোনো প্রান্তে। তাছাড়া দারিদ্রের কারণে আমাদের শিশুদের পড়াশোনা করানোও সম্ভব হয় না।’

গোবিন্দগঞ্জ বেদেপল্লীর সর্দার বকুল মিয়া বলেন, ‘কোনো অভিভাবক চায় না তার সন্তান অশিক্ষিত থাকুক। কিন্তু আমাদের যে আয় তাতে সন্তানদের পড়াশোনা চালানো কঠিন। আমাদের এখানে ২১টি পরিবারে মোট ১৫ জন শিশু রয়েছে। তাদের প্রায় ছয় জনের জনেরই বয়স সাত বছর পেরিয়েছে। তারা কেউ স্কুলে যায় না। অক্ষরজ্ঞানও নেই তাদের। যাযাবর জীবনে একেক সময় একেক স্থানে অবস্থান নেওয়ায় শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ নেই তাদের।

বেদেপল্লীর শিশু শিমুল মিয়া জানায়, তাদের টাকা-পয়সার সমস্যার কারণে স্কুলে যেতে চাইলেও যেতে পারে না। ভাত খাওয়ার অভাব থাকে স্কুলে কেমনে যাবো?

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা শফিউর রহমান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বেদেপল্লী, উপজাতিসহ দেশের সাধারণ মানুষজনের জন্য ভাতা, বিশেষ শিক্ষা বৃত্তিসহ বিভিন্ন ধরনের স্কিম চালু করেছেন। তবুও বেদেপল্লীর মানুষজন আসতে চায়না। শিশুদের স্কুলে ভর্তি করতে চায় না।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) গোলাম মুস্তফা মুন্না বলেন, ‘শিক্ষা গ্রহণ একজন নাগরিকের মৌলিক অধিকার। যা বেদে শিশুদের রয়েছে, কিন্তু তাদের ক্ষেতে ব্যতিক্রম তারা শিশুদের পড়াতে চাননা। বেদেপল্লীর শিশুদের শিক্ষাদানের জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকল সহায়তার সুযোগ করে দিয়েছেন। তাদের সমস্যা থাকলে তো আমার কাছে আসতে হবে।’

গাজীপুরে সিলিন্ডার বিস্ফোরণ: আতঙ্ক কাটেনি মানুষের