আন্তর্জাতিক ডেস্ক : নিউ ইয়র্ক ও নিউজার্সির পরিচিত মুখ বিউটি এক্সপার্ট বাংলাদেশি আমেরিকান ফাতেমা খান খুকির (৪৪) মরদেহ মিশরের কায়রোর একটি হোটেল থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। কয়েকদিন আগে খুকি ব্যক্তিগত ভ্রমণে কায়রো গিয়েছিলেন। সেখানে গত মঙ্গলবার হোটেল কক্ষে তাকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করে স্থানীয় পুলিশ।
ফাতেমা খান খুকির ঘনিষ্ট একজন বান্ধবী নামপ্রকাশ না করার শর্তে বলেন, খুকি বেশ অনেকদিন ধরেই একাকী ছিলেন। তিনি সব সময় একজন সঙ্গী খুঁজতেন।
তিনি আরও জানান, ‘সম্প্রতি অনলাইনে একটি ডেটিং সাইটে মিশরের এক ছেলের সাথে তার পরিচয় হয়। ধারণা করি, ওই ছেলের সাথে দেখা করতেই সে মিশরে গিয়েছিল।’
অপর একটি সূত্র জানায়, খুকি ঘনিষ্ট কয়েকজন বন্ধুকে বলে গিয়েছিলেন, তিনি পাস্টিক সার্জারি করতে মিশরের কায়রো যাচ্ছেন। খুকির ভারতীয় এক ছেলে বন্ধু তাঁকে কায়রোতে যাওয়ার দিন বিমানবন্দরে নামিয়ে দেন। তাকেও একই কথা বলেছিলেন খুকি।
জানা গেছে, খুকি ছিলেন ডিভোর্সি। তার কোনো সন্তান ছিল না। সুন্দরী, স্মার্ট খুকি চাকরি করতেন যুক্তরাষ্ট্রের কারেকশন ডিপার্টমেন্টে। সেখানকার চাকরি ছেড়ে দিয়ে তিনি কিছুদিন মেসি’জ এ কাজ করেছেন। তিনি ছিলেন একজন বিউটি এক্সপার্ট।
তবে বেশ কিছুদিন ধরে তিনি কোনো কাজ করছিলেন না। আইটিতে পড়াশোনা করছিলেন। থাকতেন নিউ ইয়র্ক সংলগ্ন নিউজার্সির একটি এলাকায়। সেখানে আরও তিনজন বান্ধবীর সাথে একটি বাসা শেয়ার করে থাকতেন তিনি। তবে পেনসিলভেনিয়ায় খুকির একটি কেনা বাড়ি রয়েছে বলে জানা গেছে। স্থানীয় একজন বিএনপি নেতা বাড়িটি তত্ত্বাবধান করেন বলে জানা গেছে।
বিভিন্ন সূত্র জানায়, খুকি আর্থিকভাবে স্বচ্ছল ছিলেন। কিন্তু সব সময় একাকী বোধ করতেন। এজন্য তিনি সঙ্গী খুঁজতেন। আর এজন্য বেপরোয়া ছিলেন তিনি। শেষমেষ সেই সঙ্গীর খোঁজেই গিয়েছিলেন মিশরের কায়রোতে। সেটাই তার কাল হলোÑ জানালেন তারই এক বান্ধবী।
জানা গেছে, ফেইসবুকে ‘রাসেল’ নামে একটি একাউন্ট ছিল খুকির। ঢাকায় খুকির পরিবারের ঘনিষ্ট একটি সূত্র জানায়, খুকি চাইতো না পরিচিতজনরা তাকে খুঁজে পাক। এজন্য সে নাম, পরিচয় গোপন করে ফেইসবুকে একাউন্ট খুলেছিল।
সূত্রটি বলে, “একদিন দেখলাম ‘রাসেল’ থেকে একাউন্টটি ‘ফাতেমা খান খুকি’ হয়ে গেছে।”
মিশরে কায়রোতে হোটেল কক্ষে খুকির মৃতদেহ উদ্ধারের পর স্থানীয় পুলিশ তদন্তে নেমেছে। তদন্ত করছে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই।
জানা গেছে, খুকির পরিবার চাইলেও তার মরদেহ কায়রো থেকে সরাসরি বাংলাদেশে পাঠানো হচ্ছে না। মার্কিন নাগরিক হওয়ার কারণে তার মরদেহ আনা হবে যুক্তরাষ্ট্রে। খুকির মা প্রতি বছরই যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। তিনি একজন ক্যান্সার রোগী।
গত মঙ্গলবার মিশরের কায়রোর মার্কিন দূতাবাস বাংলাদেশে ফাতেমা খান খুকির বোনকে টেলিফোনে মৃত্যুর খবরটি জানায়। এরপর পরিবার থেকে খুকির বান্ধবীদের জানানো হলে মৃত্যুর খবরটি নিউ ইয়র্ক ও নিউজার্সিতে তার পরিচিত মহল জানাজানি হয়।
গত বুধবার ফাতেমা খান খুকির মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে ফেইসবুকে একটি পোস্ট দেন তার বান্ধবী জাতীয় পার্টির নেত্রী শাহজাদী নাহিনা নূর।
শাহজাদী তার ফেইসবুক পেইজে লিখেন, ‘আমাদের প্রিয় দোস্ত ফাতেমা খান খুকি আর নেই। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। কোভিড নাইনটিনে আক্রান্ত হয়ে নয়, সাত দিন আগে তাঁর লাশ পাওয়া গেছে মিশরের একটি হোটেলে। এইমাত্র আমাকে এক বন্ধু বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।’
শাহজাদী আরও লিখেন, ‘গত সপ্তাহেই (১১ জুলাই) তার জন্মদিন ছিল। আমি বাকরুদ্ধ। কে তাকে হত্যা করলো কিংবা কিভাবে সে মারা গেল, তার কারণ কেউ জানে না। খুকি, কেন তুমি মিশর গিয়েছিলে?’
খুকির বান্ধবী নিউ ইয়র্কের টিভি উপস্থাপিকা শারমিনা সিরাজ সোনিয়া বলেন, ‘আমিও খবরটি পেয়েছি। আমি কোনোভাবেই বিষয়টি মেনে নিতে পারছি না। খুকি কেন মিশর গিয়েছিল, কারো সাথে গিয়েছিল কি-না, কিংবা কারো সাথে দেখা করতে গিয়েছিল কি-না তার কোনো কিছুই আমরা পরিস্কারভাবে জানি না। পুরো বিষয়টি রহস্যাবৃত।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।