জুমবাংলা ডেস্ক : বগুড়া, যশোর ও ঝিনাইদহসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তিন দশকের বেশি সময় ধরে মিনিকেট নামের ধানের চাষ করছেন কৃষকরা। অথচ দেশে সরকার অনুমোদিত এ জাতের কোনো ধান নেই বলে জানান কৃষিবিদরা। মূলত নব্বই দশক-পরবর্তী সময়ে ভারত উদ্ভাবিত চিকন জাতের ধান দেশে মিনিকেট নামে চাষাবাদ শুরু করেন কৃষকরা।
রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে বিস্তীর্ণ মাঠে সোনালি ধান ফলান কৃষকরা। ধানের উৎপত্তির ইতিহাস নিয়ে তাদের নেই কোনো মাথাব্যথা। যে জাতের ধানে ফলন আর দাম ভালো পাওয়া যায়, সেটি চাষেই আগ্রহ বাড়ে তাদের।
বর্তমান বাজারে মিনিকেট চালের কদর বাড়ায় দেশের কমবেশি সব জেলাতেই কয়েক বছর ধরে এ নামের ধানের আবাদ বেড়েছে। চলতি বছর বগুড়ার নন্দীগ্রামে ১০ হাজার ৭২২ হেক্টর জমিতে মিনিকেট নামের ধানের আবাদ করা হয়েছে।
কৃষকরা জানান, এ ধানকে মিনিকেট নামেই তারা চেনেন। বীজ যেটা বিক্রি হচ্ছে, সেটাও মিনিকেট বলেই লেখা আছে।
কৃষকের মাঠে মিনিকেট নামে এ ধানের আদৌ কোনো জাত নেই বলে জানান কৃষিবিদরা। মিল মালিক সমিতির নেতাদের দাবি, ভোক্তাদের চাহিদা মেটাতে সুযোগ বুঝে একশ্রেণির মিল মালিক চিকন ধান, যেমন: জিরাশাইল, নাজিরশাইল, বিআর-২৮, বিআর ২৯ জাতের ধান ছেঁটে মিনিকেট বলে বাজারজাত শুরু করেন।
নওগাঁর মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘এই ধানের নাম কোথাও জিরাশাইল আবার কোথাও মিনিকেট বলা হয়। চালের ক্ষেত্রে ভোক্তার চাহিদা অনুযায়ী, ঢাকায় মিনিকেট নামে বাজারজাত করে থাকি।’
নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তা মো. আবু হোসেন বলেন, সাধারণত যেসব চাল চিকন, সেগুলোই মিনিকেট নামে বাজারে ছাড়া হয়।
জাত নেই; কিন্তু বাজারজুড়ে মিনিকেটের রাজত্ব। এর আদ্যোপান্ত জানতে অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে মিনিকেটের রহস্য।
জানা যায়, মিনিকেট শব্দটি এসেছে ইংরেজি শব্দ ‘মিনি’ ও ‘কিট’ থেকে। ভারত সরকার নতুন উদ্ভাবিত কোনো ধানের বীজ ছোট বা মিনি প্যাকেটে কৃষকদের দেয়, তা থেকে কথ্য ভাষায় এ নাম হয়। পরে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে সরকারের অনুমোদন ছাড়াই কিছু ধান এনে দেশের মাটিতে রোপণ করেন খুলনার কিছু এলাকার কৃষকরা।
এদিকে, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) কাছে মিনিকেট নামের কোনো ভিত্তি না থাকলেও বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলা কৃষি অফিসের নথিতে মিনিকেটকে জাত হিসেবেই তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
বগুড়ার বিএডিসির উপপরিচালক (বীজ বিপণন) কৃষিবিদ মো. জাকির হোসেন বলেন, বিএডিসির একটি বীজ আছে বাংলাজিরা। এটি স্থানীয়ভাবে মিনিকেট নামে পরিচিত। যদিও সেটা মিনিকেট নয়। আসলে সেটা হচ্ছে বাংলাজিরা।
দেশের প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকার চালের বাজারে মিনিকেট চার হাজার কোটি টাকার। আর দেশের প্রায় ৮০০টি চালকল মিনিকেট প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।