জুমবাংলা ডেস্ক : চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রীদের বিমান ও টার্মিনাল থেকে যাওয়া-আসা করার জন্য বোর্ডিং ব্রিজ আছে দুটি। এর মধ্যে ঈদুল আজহার আগের দিন থেকে একটি বিকল। অন্য বোর্ডিং ব্রিজ দিয়ে চলছে আন্তর্জাতিক রুটের যাত্রীদের যাতায়াত। একটিমাত্র ব্রিজ দিয়ে যাত্রীদের চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। কালের কণ্ঠের প্রতিবেদন থেকে বিস্তারিত-
এর মধ্যে আগামী ১৭ জুন থেকে এই বিমানবন্দরে হজের ফিরতি ফ্লাইট আসা শুরু হবে। তখন যাত্রীদের ভোগান্তি আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। তবে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিকল বোর্ডিং ব্রিজ সচল করতে কমপক্ষে আরো সপ্তাহখানেক সময় লাগতে পারে।
বোর্ডিং ব্রিজ হচ্ছে একটি আধুনিক চলনযোগ্য সেতু, যা বিমানবন্দরের টার্মিনাল ভবনকে সরাসরি উড়োজাহাজের দরজার সঙ্গে সংযুক্ত করে।
এর প্রধান উদ্দেশ্য হলো যাত্রীদের টার্মিনাল থেকে উড়োজাহাজে এবং উড়োজাহাজ থেকে টার্মিনালে সহজে, নিরাপদে এবং আরামদায়কভাবে ওঠানামা নিশ্চিত করা। এটি জেট ব্রিজ বা অ্যারো ব্রিজ নামেও পরিচিত।
বোর্ডিং ব্রিজ মূলত একটি দূরনিয়ন্ত্রিত বা স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা দ্বারা পরিচালিত হয়। এটি প্রয়োজন অনুযায়ী প্রসারিত বা সংকুচিত হতে পারে এবং উড়োজাহাজের দরজার উচ্চতা ও অবস্থানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে ওপরে বা নিচে ওঠানামা করতে পারে।
এর চাকাযুক্ত ভিত্তি থাকে। অপারেটররা উড়োজাহাজ পার্ক করার পর বোর্ডিং ব্রিজটিকে নিপুণভাবে উড়োজাহাজের দরজার সঙ্গে সংযুক্ত করে। এর ভেতর সাধারণত শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা থাকে, যাতে যাত্রীরা আরামদায়কভাবে চলাচল করতে পারে।
জানা যায়, শাহ আমানতে বোর্ডিং ব্রিজ রয়েছে দুটি, যা ২০০১ সালে স্থাপন করা হয়েছিল। এই ব্রিজ দুটি ২৪ বছর ধরে সেবা দিচ্ছে।
এর মধ্যে আন্তর্জাতিক অ্যারাইভাল ৪ নম্বর গেটের একটি বোর্ডিং ব্রিজ ঈদের আগের দিন থেকে বিকল হয়ে আছে। সচল আছে ৫ নম্বর গেটের বোর্ডিং ব্রিজটি। এই একটি ব্রিজ দিয়ে যাত্রীরা পারাপার করছে। অথচ প্রতিদিন ১৪ থেকে ১৮টি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা করার পাশাপাশি এই দুটি সেতু বৃহৎ অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের জন্যও ব্যবহৃত হয়। একটি সেতু অকার্যকর হওয়ায় পুরো বোঝা এখন একমাত্র কার্যকর থাকা সেতুর ওপর পড়েছে। এর ফলে যাত্রীদের, বিশেষত আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের যাত্রীদের বিমান থেকে টার্মিনালে তীব্র গরমের মধ্যে হেঁটে আসা-যাওয়া করতে হচ্ছে।
শাহ আমানত বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার জন্য ১৯৯৬ সালে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। তখন জাপান সরকার কারিগরি ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করে। এ উন্নয়নকাজ ১৯৯৮ সালের ১২ মার্চ শুরু হয়ে শেষ হয় ২০০০ সালে। এর মোট ব্যয় হয়েছিল ৫৬০ কোটি টাকা। এই প্রকল্পের অংশ হিসেবেই বোর্ডিং ব্রিজগুলো স্থাপন করা হয়েছিল।
বর্তমানে শাহ আমানত বিমানবন্দরে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ চলছে। এর মধ্যে রানওয়ে ও ট্যাক্সিওয়ের শক্তি বৃদ্ধিকরণে ৫৪০ কোটি ৫২ লাখ টাকার একটি প্রকল্প এবং নতুন করে বোর্ডিং ব্রিজ স্থাপন, কানেক্টিং করিডর ও ডিপার্চার লাউঞ্জ নির্মাণের জন্য আরেকটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এই প্রকল্পগুলো ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু এখনো শেষ হয়নি।
দুবাইফেরত যাত্রী মুহাম্মদ শাহাজাহান বলেন, ‘আমি কুরবানির পরের দিন দুবাই থেকে ঢাকা হয়ে চট্টগ্রামে আসি। কিন্তু চট্টগ্রামে বিমান থেকে নামার পর কোনো বোর্ডিং ব্রিজ পেলাম না। উপায় না দেখে আমার মতো অনেকেই তীব্র গরমের মধ্যে হেঁটে টার্মিনালে গেছি। দুবাইয়ে যদি কোনো বোর্ডিং ব্রিজ বিকল হয়, তাৎক্ষণিক বিকল্প ব্যবস্থা করা হয়। আমাদের দেশে এমন ব্যবস্থা নেই কেন? অথচ চট্টগ্রাম শাহ আমানত একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। তাহলে কি এটি শুধু নামেই আন্তর্জাতিক? কাজের না?’ প্রশ্ন শাহাজাহানের।
মইনুদ্দীন নামের আরেক যাত্রী বিরক্তি প্রকাশ করে বলেন, মাত্র ২০ কোটি টাকা খরচ করলেই নতুন বোর্ডিং ব্রিজ সংযোজন করা সম্ভব। অথচ এই পুরনো বোর্ডিং ব্রিজ ভাড়া দিয়ে আন্তর্জাতিক বিমানগুলো থেকে অনেক টাকা নিচ্ছে। ওই টাকা দিয়ে বছরে কয়েকটি ব্রিজ কেনা সম্ভব। বর্তমান সরকারের প্রবাসীদের স্বার্থে হলেও এদিকে নজর দেওয়া উচিত।
চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মুখপাত্র ও জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রকৌশলী মো. ইব্রাহিম খলিল বলেন, দুটি বোর্ডিং ব্রিজ ২৪ বছর আগে স্থাপন করা। এগুলো নিয়মিত মেরামতের মাধ্যমে সচল রাখা হয়। একটি রক্ষণাবেক্ষণের অধীনে থাকলে অন্যটি কার্যকর থাকে। বর্তমানে ৪ নম্বর গেটের সেতুটি অকেজো। তবে ৫ নম্বর গেটেরটি ব্যবহার করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, গেট ৬-এ প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি নতুন বোর্ডিং ব্রিজ স্থাপনের কাজ চলছে এবং চলতি বছরের আগস্ট মাসের মধ্যে এর কাজ শেষ হবে। এখন বিকল থাকা বোর্ডিং ব্রিজটি সচল করতে আরো সপ্তাহখানেক সময় লাগতে পারে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।