জুমবাংলঅ ডেস্ক : শত কর্মব্যস্থতা ও পরিবারের ভরণপোষণের দায়িত্ব পালনে সদা সচেষ্ট থেকেও শিক্ষা জীবন থেকে পিছপা হননি খিজির। অর্ধেক জীবনে এসে মাধ্যমিক সার্টিফিকেট অর্জন করেছেন তিনি। সেই আনন্দে মন খুলে হাসছেন মহসীন হলে বসে। সবাইকে বলে বেড়াচ্ছেন আনন্দের খবর।
‘ইচ্ছা থাকলে উপায়ও আছে’ বয়স কোনো ব্যাপার না। খিজির বলেন, নিজের সম্তানও এখন ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। পরিবারের ভরণপোষণের দায়িত্ব মাথায় চেপেছিলো বলে মাঝখানে পড়ালেখা করতে পারিনি কিন্তু সুযোগ কাজে লাগিয়ে কাজের ফাঁকে একটি বিশাল অর্জন করতে পরেছি। স্বপ্নকে দীর্ঘ ১৬ বছর বুকে ধারণ করে পুনরায় শিক্ষার দ্বার ধরেছি। এবার এসএসসি পরীক্ষায় ৩ দশমিক ৭৭ পেয়ে পাস করেছি। আমার চেয়ে আমার সন্তানেরা বেশি খুশি।
২০০৫ সালের শেষদিকে পারিবারিক অসচ্ছলতার কারণে পড়ালেখা থেকে ছিটকে পড়তে হয় চাঁদপুরের খিজিরকে। ঐ সময়ে তিনি চাঁদপুরের সিতুষী উচ্চবিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন। পরিবারের বড় ছেলে হিসেবে তাকে পারিবারের হাল ধরতে হয়। করতে হয় দিনমজুরের কাজ। নিজের হেয়ালি মনোভাব আর পরিবারের অভাব মোচন করতে গিয়ে আর পড়ালেখা করা হয়ে ওঠেনি। কিন্তু আশেপাশের পড়ুয়া ছেলে মেয়েদের দেখে তার মনে উদ্দীপনা কাজ করতো। আর ভাবতো সময় একদিন আসবে ‘আমি আবার পড়াশোনা করবো। স্কুলে গিয়ে ক্লাস করবো’। কিন্তু দেখতে দেখতে ষোলোটি বছর পার হয়ে যায়। সেভাবে আর পড়ালেখার প্রতি মনযোগ দেয়া হয়ে ওঠেনি।
এখন তার বয়স ৩৩ এর প্রায় শেষের দিকে। পরিবারে এখন তার স্ত্রী, ছেলে ইফতেকার আহমেদ আরফান ও মেয়ে আফসানা আক্তার ও তার বাবা মা রয়েছে। মেয়েটি ৬ষ্ট শ্রেণিতে পড়ালেখা করছে। খিজির বর্তমানে ঢাকা বিশ্বিদ্যালয়ের হাজী মুহাম্ম’দ মহসীন হলের দোকানে খিচুড়ি বিক্রি করেন। ২০১৭ সালে তিনি মহসীন হলের দোকানে কাজ করা অবস্থায় বিভিন্ন ছাত্রদের পরামর্শে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস টেনে ভর্তি হন। কিন্তু কর্মব্যস্ততার কারণে সেখানেও ছিলেন অনিয়মিত। অবশেষে ২০২১ সালে এসে তিনি এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে সক্ষম হন। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ভলোবাসার দিবসে হাতক পেলেন তার কাঙ্ক্ষিত ফলাফলের খবর।
ফলাফল হাতে পেয়ে আনন্দের অনুভূতি ব্যাখ্যা করে খিজির বলেন, আমার বয়স মাত্র ৩৩ শেষ হতে চললো। পড়ালেখা মাঝখানে করতে পারিনি পরিবারের ভরণপোষণের দায়িত্ব মাথায় চাপাছিলো তাই। কিন্তু খুব বেশি ইচ্ছা ছিলো পড়ালেখা করার। সামনে দিয়ে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা হেটে গেলে মনে মনে ভাবতাম আমিও আবার পড়ালেখা করবো। বাংলাদেশে আমাদের মত পড়াশুনায় আগ্রহী ছাত্রদের জন্য উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষ সুযোগ সুবিধা সম্পর্কে জানতে পারি বিশ্ববিদ্যালয়ে দোকান করতে এসে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ভাইদের পরামর্শে উন্মুক্ততে ভর্তি হয়। গতবছর এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছি। ফলাফল হাতে পেয়েছি গতকাল।
তিনি বলেন, ফলাফলের খবর পেয়ে বেশি খুশি হয়েছেন আমার মেয়েটি। তার (মেয়ে) কথা হচ্ছে আমাকে আরো পড়ালেখা করতে হবে। আমারও পড়ালেখা করার ইচ্ছা আছে। ইচ্ছা আছে ঢাকা ইস্পাহানি কলেজে পড়ার। যতো বাঁধাই আসুক পড়ালেখা চালিয়ে যাবো। এসএসসি পরীক্ষায় পাস করেছি একটি যোগ্যতা লাভ করছি। সামনে আরো যোগ্যতা অর্জন করবো। তারপর দোকান ছেড়ে সরকারী চাকরি করার ইচ্ছা। পরীক্ষার ফলাফল আমার আশানুরূপ হয়েছে। এতে আমি অনেক খুশি।
এই সম্পর্কে মহসীন হল ছাত্রলীগের সভাপতি শহীদুল হক শিশির বলেন, খিজির ভাইয়ের কাজটি আমাদের সমাজে খুবই ইতিবাচক চিন্তার পরিচয় বহন করে। দুই সন্তানের বাবা হয়ে পড়ালেখা করার চিন্তাভাবনা কতোজনই বা করছে। সংসার-পরিবারের দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে নিজের দায়িত্বকেও তিনি ভুলে যান নি। আমাদের দেশে এমনও অনেকজন আছে যারা বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে ভিক্ষা করে পড়াশোনা তো দূরের কথা। এটি এমন একটি খবর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে দেশের সর্বস্তরের জনসাধারণের জন্য অনুপ্রেরণার দৃষটান্ত। খিজির ভাইয়ের ইতিবাচক চিন্তাধারার প্রশংসা করছি। সামনে তিনি আরো পড়তে চায়লে যেকোনো সাহায্য সহযোগিতায় আমরা মহসীন হল ছাত্রলীগ সবসময় পাশে থাকবো।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।