জুমবাংলা ডেস্ক: সময়টা ২০০৮ সালের জুলাই মাস। নিউ ইয়র্কের মন্টকের জনপ্রিয় সমুদ্রসৈকত ডিচ প্লেনসে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন তিন বন্ধু। সৈকতে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ থমকে দাঁড়িয়ে পড়েন তারা। দেখেন সৈকতে পড়ে রয়েছে একটি জন্তুর মৃতদেহ। জন্তুটিকে দেখলে আঁতকে উঠবেন যে কেউ। ভয়ঙ্কর দেখতে জন্তুটি কী?
একঝলক দেখলে মনে হবে যেন কোনো শিকারি কুকুর। অদ্ভুত দেখতে জন্তুটির মুখের ভেতর থেকে ধারালো দাঁত ঠিকরে বেরিয়ে আছে। চঞ্চুও রয়েছে। দেখেই মনে হবে, যেন এক হিংস্র অজানা জন্তু।
একঝলক দেখলে মনে হবে যেন কোনো শিকারি কুকুর। অদ্ভুত দেখতে জন্তুটির মুখের ভেতর থেকে ধারালো দাঁত ঠিকরে বেরিয়ে আছে। চঞ্চুও রয়েছে। দেখেই মনে হবে, যেন এক হিংস্র অজানা জন্তু।
জন্তুটির শরীরে ততক্ষণে পচন শুরু হয়েছে। চেহারা বিবর্ণ হয়ে গিয়েছে। ২০০৮ সালের জুলাই মাসে ইন্টারনেট এবং সংবাদপত্রে এমনই এক জন্তুর ছবি ঘিরে হইচই পড়ে গিয়েছিল। নাম দেওয়া হয়েছিল ‘মন্টক মনস্টার’। এক দশকেরও বেশি সময় চলে গেছে। কিন্তু এখনো মন্টকের সমুদ্রসৈকতে উদ্ধার হওয়া ঐ ভয়ঙ্কর দেখতে জন্তুকে ঘিরে রহস্যের কোনো সমাধান মেলেনি। সব ধারণায় যেন ধোঁয়াশার চাদরে ঢাকা।
২০০৮ সালের ১২ জুলাই ওই ভয়ঙ্কর জন্তুটির ছবি তোলা হয়েছিল বলে দাবি করা হয়। যারা ঐ জন্তুর ছবি তুলেছিলেন বলে দাবি করেছিলেন, তারা হলেন জেনা হিউইট ও তার দুই বন্ধু রাচেল গোল্ডবার্গ ও কোর্টনি ফ্রুইন। এর দুই সপ্তাহ পর সে বছরের ২৯ জুলাই নিউ ইয়র্ক সংবাদমাধ্যমে ‘মন্টক মনস্টার’ নিয়ে হইচই শুরু হয়। জন্তুটিকে নিয়ে প্রথম লেখা প্রকাশিত হয় একটি ব্লগে। ব্লগটি পোস্ট করার কয়েক মিনিটের মধ্যে সমাজমাধ্যমে শোরগোল পড়ে যায়।
জন্তুটি সম্পর্কে ভয়ঙ্কর কাহিনির কথা এর পর প্রকাশ করা হয় ‘ফক্স নিউজ’, ‘হাফিংটন পোস্ট’, ‘এনবিসি’-র মতো সংবাদমাধ্যমে। তবে সমুদ্রসৈকতে জন্তুটির দেহ নিমেষের মধ্যে উধাও হয়ে গিয়েছিল। কে বা কারা দেহটি নিয়ে গেলেন কিংবা কী ভাবে জন্তুটির দেহ উধাও হল, এ নিয়ে নানা মুনির নানা মত। এখনও এ ব্যাপারে কিছু জানা যায় না।
জন্তুটিকে নিয়ে স্থানীয়রা বিভিন্ন সময় নানা কথা বলেছেন। তবে সকলের কথার নির্যাসই ছিল, ‘খুঁজতে যেয়ো না, কারণ খুঁজে পাবে না।’ ২০০৮ সালের অগস্টের শুরুর দিকে আমেরিকার সংবাদপত্র ‘নিউজডে’তে এক অজ্ঞাতপরিচয় প্রত্যক্ষদর্শী দাবি করেন যে, তিনি নাকি শুনেছেন, সৈকত থেকে জন্তুটির দেহ কোনো এক অজ্ঞাত জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তিনি বলেছিলেন, ‘শরীরে পচন ধরে গিয়েছে। শুধুই হাড়গোড় রয়েছে।’
ঐ প্রত্যক্ষদর্শী এ-ও দাবি করেন যে, কয়েক জনের ফোনে নাকি তিনি জন্তুটির ছবি দেখেছেন। তার দাবি, জন্তুটি আকারে বিড়ালের থেকে খুব একটা বড় নয়। কিন্তু জন্তুটির শরীর কোথায় ফেলা হয়েছে, এই প্রশ্নের উত্তর তিনি এড়িয়ে যান।
জেনা হিউইট নামে যে নারী প্রথমে এই জন্তুটির শরীর দেখতে পেয়েছিলেন, তিনি পরে ‘নিউজডে’কে জানান যে, শরীরটি এক ব্যক্তির বাড়ির পেছনের জঙ্গলে রয়েছে। তবে কে সেই ব্যক্তি, তার পরিচয় জানাতে অস্বীকার করেন তিনি। এ ব্যাপারে মুখে কুলুপ আঁটেন তিনি।
এই জন্তুটি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন পোর্টল্যান্ডের ক্রিপ্টোজুয়োলজিস্ট লরেন কোলেম্যান। তিনিই এর নাম রেখেছিলেন ‘মন্টক মনস্টার’। খুব স্বাভাবিক ভাবেই প্রথমে কৌতূহলী ছিলেন তিনি। সে কারণেই জন্তুটি নিয়ে খবরাখবর নিতে শুরু করেন।
এ নিয়ে কোলেম্যান যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিলেন ঐ তিন নারীর সঙ্গে, যারা প্রথম জন্তুটির শরীর দেখেছিলেন বলে দাবি করেছিলেন। কিন্তু কোলম্যানের কথায়, এ ব্যাপারে তারা আর সেভাবে মুখ খুলতেই চাননি।
হ্যাম্পটন্সের কেবল স্টেশন ‘প্লাম টিভি’-তে সেই সময় ওই তিন মহিলার সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন নিক লেইটন নামে এক ব্যক্তি। সেই সাক্ষাৎকারের ভিডিয়ো পরবর্তী কালে ব্রিটিশ সংবাদপত্র ‘অবজার্ভার’কে দিয়েছিলেন তিনি। জন্তুটির দেহ কোথায় গেল? সাক্ষাৎকারে এই প্রশ্নের উত্তর এড়িয়েছিলেন ওই তিন মহিলা।
লেইটন বলেছিলেন, ‘ঐ তিন নারী বলেছিলেন যে, একটা বাক্সের মধ্যে রাখা হয়েছিল জন্তুটির শরীর।’ কিন্তু এ ব্যাপারে জুতসই জবাব দিতে পারেননি তারা। লেইটনের কথায়, ‘সাক্ষাৎকারের সময় তিন নারীর কথা শুনে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলাম।’
এ-ও জল্পনা ছড়ায় যে, পাম আইল্যান্ডে ‘অ্যানিমেল ডিজ়িজ় সেন্টার’ (যেখানে বিভিন্ন জন্তুর রোগ নিয়ে গবেষণা করা হয়) থেকে জন্তুটি বেরিয়ে এসেছিল। কিন্তু ঐ কেন্দ্রে নিরাপত্তা এতটাই আঁটসাঁট যে, সেখান থেকে ‘মন্টক মনস্টার’ বেরোনোর কোনো সম্ভাবনাই নেই বলে দাবি করেন কর্তৃপক্ষ।
তাহলে ঐ জন্তুটি কী? কোথা থেকে এল? আর তার দেহই বা কোথায় উধাও হয়ে গেল? এর উত্তর এখনও অধরাই থেকে গিয়েছে। কয়েকটি স্থানীয় সংবাদমাধ্যম দাবি করেছিল যে, আসলে এ জন্তুকে ঘিরে রহস্য ছড়ানোর নেপথ্যে কোনও চক্রান্ত রয়েছে। যে তিন মহিলা জন্তুটির ছবি তুলেছিলেন বলে দাবি করেছিলেন, তাঁরা অর্থ উপার্জনের জন্য এ কাজ করেছিলেন বলে চর্চা শুরু হয়েছিল। যদিও জেনা হিউইটের বাবা এ কথা অস্বীকার করেন।
পরবর্তী সময়ে ক্রিপ্টোজুয়োলজিস্ট লরেন কোলেম্যান দাবি করেন যে, ‘মন্টক মনস্টার’ আসলে একটি পচনশীল রেকুন। যদিও সেই দাবি প্রমাণিত হয়নি।
এত বছর পেরিয়েছে, এখনো ‘মন্টক মনস্টার’ রহস্যের চাদরেই ঢেকে রয়েছে। এখনো সেখানে মানুষের মুখে মুখে এ নিয়ে চর্চা চলে। কিন্তু আদতে এই ‘মন্টক মনস্টার’ কী, সেই রহস্যের জাল এখনও খোলেনি।
সূত্র: আনন্দবাজার
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।