জুমবাংলা ডেস্ক : ‘ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রে’নেড হামলায় দৃশ্য এটি, আমি গুরুতর আহত। আমাদের দলের দুই নারী নেত্রীর সহায়তায় কোনোভাবে একটি বাসে উঠেছিলাম। সেদিন আমার জীবন রক্ষা করার জন্য তাদের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা। যখন আমি হাসপাতালের পথে তখন অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মনে হচ্ছিল আমার সমস্ত শক্তি নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। যদি আর এক ঘণ্টা দেরি হতো তাহলে সেদিন অন্যকিছু হয়ে যেতে পারতো। এখনো আমার শরীরের নিচের অংশে ৪০টি স্প্রিন্টার আছে। আমাদের সবার উচিত ঐক্যবদ্ধভাবে সেই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া।’
তথ্যমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদের ফেসবুক স্ট্যাটাস এটি। ২০১৬ সালের ২৫ মে নিজের ফেসবুকে ইংরেজিতে এই স্ট্যাটাসের সঙ্গে দুর্লভ ছবিটি জুড়ে দেন তিনি।
ছবিতে দেখা যায়, গ্রে’নেড হামলায় গুরুতর আহত তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ সহকারী, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ রক্তে রঞ্জিত। তাঁর সারা শরীরে রক্ত ঝরছে। রক্তে লাল হয়ে গেছে পরনের শার্ট। কাঁদছেন হাছান মাহমুদ। খুলে গেছে শার্টের বোতাম। এমন দৃশ্যেই দলের দুই নারী নেত্রীর কাধে ভর দিয়ে হাসপাতালের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করছেন তিনি। হাছান মাহমুদের সাহায্যে এগিয়ে আসা সেই দুই নারী নেত্রীর একজন অ্যাডভোকেট রুবিনা মিরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রি য়ো এই নেত্রী বর্তমানে সংরক্ষিত আসনের একজন সংসদ সদস্য।
অত্যন্ত মর্মস্পর্শী এই ছবি ও স্ট্যাটাস দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই সময় লাইক-কমেন্টে ভরে উঠে ফেসবুক। সহানুভূতি, সহমর্মিতা জানানোর পাশাপাশি শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় রাজনীতিতে হাছান মাহমুদের ত্যাগ ও অবদান স্মরণ করতে দেখা যায় অনেককেই। ফেসবুকের বাইরে রাজনৈতিক মহলেও সে সময় এই নিয়ে অনেক আলোচনা ও মূল্যায়ন হয়েছে। সেই মূল্যায়ন থেকে বেরিয়ে আসছে নানা কথা, নানা তথ্য।
সেদিন গ্রে’নেড হামলার সময় দলের যে ক’জন নেতা শেখ হাসিনাকে রক্ষার জন্য মানবব্রহ্ম তৈরি করেছিলেন তাদের একজন হাছান মাহমুদ। এক-এগারোর সময় দলের বেশিরভাগ নেতা যখন আত্মগোপনে কিংবা সংস্কারপন্থীর ভূমিকায়, তখন হাছান মাহমুদ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শেখ হাসিনার পাশে দাঁড়ান। শেখ হাসিনার গ্রেফতারের পর প্রতিদিন গণমাধ্যমের সামনে হাজির হয়ে দেশবাসীকে কারান্তরীণ শেখ হাসিনার খবর জানানোর পাশাপাশি আওয়ামী লীগের অস্তিত্ব রক্ষা ও নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙ্গা রাখতে উদ্দীপনামূলক বক্তব্য দিতেন।
আর এসব করতে গিয়ে তৎকালীন সেনা সমর্থিত সরকারের বিভিন্ন হুমকি ও রক্তচক্ষুর মুখোমুখি হতে হয় তাঁকে। প্রতিনিয়ত তাড়া করে গ্রেফতার ও গুমআতঙ্ক। তবুও এক মুহূর্তের জন্য তিনি ছেড়ে যাননি আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগ প্রধানকে।
ছাত্রজীবনে হাছান মাহমুদ ছিলেন চট্টগ্রাম মহসিন কলেজ ছাত্রলীগের নির্বাচিত সাধারন সম্পাদক, ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি।
পরবর্তীতে জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে পিএইচডি করতে বেলজিয়াম গমন করেন। পিএইচডি শেষে নেত্রীর একান্ত সহকারীর দায়ীত্ব পালন করেন। পরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক হন।
গ্রে’নেড হামলায় আহত হাছান মাহমুদ ২০০৮ এর নির্বাচনে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত বন ও পরিবেশ মন্ত্রী হয়েছিলেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে তিনি সংসদ সদস্য হলেও মন্ত্রীত্ব পাননি। ২০১৮ সালের ৩০ জানুয়ারির নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হলে তাকে সরকারের তথ্যমন্ত্রী করা হয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।