ফারুক তাহের, চট্টগ্রাম: দক্ষিণ চট্টগ্রামের তিন উপজেলার ২ লাখেরও বেশি পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহক চারদিন ধরে বিদ্যুৎবিহীন রয়েছে। জেলার চন্দনাইশ, সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া উপজেলার সিংহভাগ এলাকা ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
এই তিন উপজেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত শঙ্খ ও মাতামুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি থাকায় এখানে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া যাচ্ছে না বলে জানান পল্লী বিদ্যুৎ কর্মকর্তারা। তবে বিদ্যুৎ দিতে না পারলেও ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে চাল, ডালসহ শুকনো খাবার, ওষুধ, স্যালাইন ও বিশুদ্ধ পানিসহ প্রাথমিক সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে জেলা প্রশাসন কর্তপক্ষ।
বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বিআরইবি) চট্টগ্রাম কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, উজানের পাহাড়ি ঢলের কারণে সাতকানিয়া, লোহাগাড়া ও চন্দনাইশ উপজেলার সাব স্টেশনগুলোর যন্ত্রপাতি পানিতে তলিয়ে গেছে। বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়েছে বিভিন্ন জায়গায়। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে পানি জমে যান চলাচলও বন্ধ রয়েছে ওই ৩ উপজেলায়। ভয়াবহ এই বন্যার কারণে এখানে ফসলী জমি ও কাঁচাপাকা ঘর ডুবে যাওয়ায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো নিরূপণ করা যায়নি।
চট্টগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সূত্রে জানা গেছে, দোহাজারী বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চন্দনাইশ, পটিয়া ও বাঁশখালী উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়।
চট্টগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর উপ মহাব্যবস্থাপক (টেকনিক্যাল) মো. আমজাদ হোসেন বলেন, ‘আমাদের সংশ্লিষ্ট এলাকার সাবস্টেশনগুলো পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ৩ উপজেলার ২ লাখ গ্রাহক এখন বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় আছেন। পাহাড়ি ঢলে সাঙ্গু নদী দিয়ে ভেসে আসা গাছের গুঁড়িতে লেগে সঞ্চালন তার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় পটিয়ার বিদ্যুৎ বন্ধ আছে। তবে আমরা শিকলবাহা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিকল্প সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে পটিয়া ও এর আশেপাশের এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করছি। বাঁশখালীতে গতকাল ৫টি বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙে পড়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে। পানির কারণে মঙ্গলবার থেকে চন্দনাইশ উপজেলা বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘সাতকানিয়ার কেরানিরহাটের পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে পড়েছে। এলাকার স্থানীয় সাবস্টেশনটি এখন ৬ ফুট পানির নিচে তলিয়ে আছে। যন্ত্রপাতি ডুবে গেছে। মহাসড়ক ও এর আশপাশের এলাকায় পানি থাকায় আমাদের প্রকৌশলী ও কর্মীরা বিভিন্ন এলাকায় আটকে আছেন। কবে নাগাদ বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে তাও এই মুহূর্তে বলা কঠিন। আমাদের অনেক যন্ত্রপাতি পানির নিচে। সঞ্চালন লাইনগুলো ক্ষতিগ্রস্ত।’
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যুৎ না থাকায় অবর্ণনীয় দুর্ভোগে রয়েছেন এই তিন উপজেলার লোকজন। অনেকে নিজের বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন। বন্ধ রয়েছে দোকানপাট। মোবাইলে চার্জ না থাকায় অনেকেই স্বজনদের সঙ্গেও যোগাযোগ করতে পারছেন না।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জেলার ১৫টি উপজেলার মধ্যে সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া উপজেলার অবস্থা খারাপ।
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. আবদুল মালেক বলেন, ‘বন্যায় ৩ উপজেলার ৩১ হাজার বেশি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া উপজেলার সবকটি ইউনিয়ন বন্যায় আক্রান্ত, জেলার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। আমরা ইতোমধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের মাধ্যমে এবং স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সহায়তায় চাল, শুকনো খাবার, ওষুধ, বিশুদ্ধ পানি বিতরণ করা হচ্ছে। কোথাও কোথাও ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে প্রাথমিকভাবে আর্থিক সহযোগিতাও দেওয়া হচ্ছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।