জুমবাংলা ডেস্ক : ইলিশ আমাদের জাতীয় মাছ। এটি প্রাকৃতিক ভাবেই সমুদ্র ও নদীতে বেড়ে ওঠে। গত কয়েক বছরে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে কয়েকগুণ। সরকারী তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯৯-২০ অর্থবছরে ইলিশের উৎপাদন ছিল ২ লাখ ১৯ হাজার টন। যেটি ২০২১-২২ অর্থবছরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৬৭ হাজার টনে। আর বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মতে, বর্তমানে ইলিশের সর্বোচ্চ টেকসই ফলন সাত লাখ দুই হাজার টন।
উৎপাদন এত বৃদ্ধি পেলেও এ মাছের দাম দিন দিনই ভোক্তাদের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। এ মাছের এত দাম কেন এ নিয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক নিজেও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এ ছাড়া মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম নিজেও ইলিশের এত দাম নিয়ে বিষ্ময় প্রকাশ করেছেন।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী এক অনুষ্ঠানে বলেন, গত কয়েক বছরে দেশে ইলিশের উৎপাদন কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞার সময় জেলেদের খাদ্য সহায়তাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করি। জেলেদের সহায়তা করে দেশে ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে কাজ করি। তবে বাজারে ইলিশের দাম অনেক বেশি।
এটা কেন এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে বলবো এ বিষয়ে আমার মন্ত্রণালয়ের কিছু করার নেই। কারণ আমরা বাজার পর্যবেক্ষণ করতে পারি না। কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এবং অন্যান্য সরকারী সংস্থা দামের বিষয়ে কথা বলতে পারে, কারণ তারা মনিটরিং কর্তৃপক্ষ। ইলিশের দামের পেছনে কোনো সিন্ডিকেট থাকলে মনিটরিং কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেছেন, ইলিশ প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদন হয়, এর জন্য কোনো খরচ লাগে না। শুধু মাছ আহরণ করতে খরচ হয়। চাষের মাছ উৎপাদন করতে অনেক টাকা খরচ হয়। কিন্তু ভালো মানের একটি রুই বা কাতল মাছ যে দামে বিক্রি হয়, তার থেকে পাঁচগুণ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে বিনা খরচায় উৎপাদিত ইলিশ। এটি নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে।
ইলিশের দাম এত বেশি কেন এ প্রশ্ন শুধু শুধু মন্ত্রী বা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের নয়। এ নিয়ে ক্রেতারাও ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। গত শুক্রবার মালিবাগ বাজারে ইলিশ কিনতে আসেন গোলাম কিবরিয় নামের এক ক্রেতা। তিনি ঢাকা বলেন, টিভিতে এবং পত্র-পত্রিকায় দেখছি এখন ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ছে। অথচ বাজারে এলে ইলিশের দাম শুনে পিলে চমকে যায়। আমাদের মতো নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে এই জাতীয় মাছটি দিন দিন অধরা হয়ে যাচ্ছে। আমরা ইলিশ কেনার কথা এখন ভাবতেও পারিনা।
ইলিশের উচ্চ মূল্যের জন্য ব্যবসায়ীরা বেশ কয়েকটি কারণের কথা বলেছেন। তাদের দাবি, ইলিশের প্রাপ্যতা, নদী ও সমুদ্রের ইলিশের মধ্যে স্বাদের বৈষম্য, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি এবং পরিবহন ব্যয়ের কারণে ইলিশের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়া একটু বড় সাইজের ইলিশ ওপারে চলে যাচ্ছে।
কাওরান বাজারের ব্যবসায়ীদের দাবি মাছের পরিমাণ কম, তাই দাম বেশি। এ ছাড়াও ট্রাক ভাড়া, কুলির ভাড়া, ভ্যান ভাড়া, শ্রমিক খরচ সব মিলিয়ে প্রতি ঝুড়িতে অনেক টাকা খরচ হয়। অনেকে মাছ মজুদ করেন। এতে বাজারে পর্যাপ্ত মাছ না আসায় দাম বেশি। মাছগুলো বেছে বেছে ওপারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এখানে মাছ কম পাওয়া যায়, যে কারণে দাম বেশি।
রাজধানীর অন্যতম বড় বাজার কাওরান বাজারে দেড় কেজি ওজনের ইলিশ প্রতি কেজি ১,৫০০ থেকে ১,৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সাগর বা নদী থেকে ধরা প্রায় একই ওজনের মাছ কক্সবাজার ও চাঁদপুরে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১,১০০ থেকে ১,২০০ টাকায়। তবে পদ্মা নদীতে ধরা ইলিশ চাঁদপুরে বিক্রি হচ্ছে ১,৬০০ টাকা কেজিতে।
বিশ্বের ১১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ইলিশ উৎপাদনে প্রথম। এটিকে বাংলাদেশের জাতীয় মাছ এবং ভৌগলিক নির্দেশক পণ্য বলা হয়। ইলিশ শুধু বাংলাদেশেই নয়, এর অনন্য স্বাদ ও গন্ধের জন্য অন্যান্য অনেক দেশেও ব্যাপক জনপ্রিয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।