ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে একটি বড় পার্থক্য হলো ভাইরাস নিষ্প্রাণ, কিন্তু ব্যাকটেরিয়া জীবিত। এখন প্রশ্ন হলো ভাইরাস নিষ্প্রাণ পদার্থ হয়েও মানুষের শরীরে ঢুকে এত বড় ঝুঁকি সৃষ্টি করে কীভাবে? ভাইরাস সংক্রমণের চিকিৎসাও কঠিন। অথচ অনেক ব্যাকটেরিয়া মানুষের জীবনের জন্য ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে বটে, কিন্তু চিকিৎসা আছে; তাদের চিহ্নিত করে অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে নিষ্ক্রিয় করা সহজ। আবার সব ব্যাকটেরিয়াই কিন্তু মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর নয়। উপকারী ব্যাকটেরিয়াও আছে।
ভাইরাস হলো বিভিন্ন অণুর জটিল সমাবেশ। এদের মধ্যে রয়েছে প্রোটিন, নিউক্লিক অ্যাসিড, লিপিড, কার্বোহাইড্রেট প্রভৃতি। কিন্তু এরা নিজেরা কিছুই করতে পারে না। কেবল কোনো জীবন্ত কোষে ঢুকতে পারলেই এরা সক্রিয় হয়ে ওঠে। এ ছাড়া এরা এদের বংশ বিস্তার করতে পারে না। এ জন্য এরা মানুষের শরীরের কোষ আক্রমণ করে কোষের নিয়ন্ত্রণ দখল করে। এরপর কোষের কার্যপদ্ধতি ব্যবহার করে দ্রুত বংশ বিস্তার করতে থাকে।
অন্যদিকে ব্যাকটেরিয়া হলো প্রাণসম্পন্ন সরল এককোষী পদার্থ। বেঁচে থাকার জন্য এদের শক্তি দরকার। মানুষের শরীরে বিভিন্নভাবে ঢুকে এরা শক্তি সঞ্চয় করে।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে, ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া সম্পূর্ণ ভিন্ন নিজস্ব প্রক্রিয়া ও পদ্ধতিতে কাজ করে। তাদের উভয়েরই প্রধান লক্ষ্য হলো মানুষের দেহে ঢুকে টিকে থাকা ও বংশবিস্তারের ব্যবস্থা করা। এ জন্য ব্যাকটেরিয়া নিজস্ব রাইবোজোম (ribosome) ব্যবহার করে তাদের বংশবিস্তার ও টিকে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যাকটেরিয়াল প্রোটিন তৈরি করে। তাই একে চিহ্নিত করা সহজ।
কিন্তু ভাইরাস যেহেতু প্রথমেই দেহকোষ আক্রমণ করে কোষের কার্যক্রমের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় এবং আমাদের দেহকোষ ব্যবহার করে ভাইরাল প্রোটিন তৈরি করতে থাকে, তাই এদের চিহ্নিত ও দমন করা একটু কঠিন। কারণ, একবার দেহকোষের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ফেললে আমাদের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থার আক্রমণে খোদ দেহকোষ ধ্বংস হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
তাহলে তো আমাদের জীবনই বিপন্ন হবে। তাই ভাইরাস দমনের জন্য প্রয়োজনীয় টিকা (ভ্যাকসিন) তৈরি করতে হয়, যেন ভাইরাস আমাদের দেহকোষ দখলের আগেই দেহের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা তাদের চিনতে পারে এবং দ্রুত নির্মূল করে। যেহেতু ভ্যাকসিন আবিষ্কার সময়সাপেক্ষ, তাই ভাইরাসের চিকিৎসা ব্যাকটেরিয়ার তুলনায় কঠিন।
আমরা জানি, ঠান্ডায় গলাব্যথা, কাশি, জ্বরের জন্য সাধারণত তিন দিন দেখতে হয় জ্বর কমে কি না। এরপর ডাক্তার প্রয়োজনীয় পরীক্ষা–নিরীক্ষা করে নিশ্চিত হলে অ্যান্টিবায়োটিক দেন। নির্দিষ্ট মাত্রায় ওষুধ খেতে হয়। অসুখ ভালো হয়ে যায়। কিন্তু যদি কোনো ভাইরাসের কারণে অসুস্থতা হয়, তাহলে ডাক্তার নিশ্চিত হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।
এখন যেমন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে অ্যান্টিবায়োটিকে কাজ হয় না। অন্য পদ্ধতিতে চিকিৎসা করা হয়। তবে ভাইরাসের কারণে সেকেন্ডারি ইনফেকশন রোধের জন্য হয়তো প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হতে পারে। এতে অবশ্য মূল ভাইরাসের চিকিৎসা হয় না।
ব্যাকটেরিয়ার কারণে অসুস্থতা হলে রক্ত ও মলমূত্র পরীক্ষা, বিশেষভাবে ‘কালচার’ করলে বোঝা যায় ওই ব্যাকটেরিয়া কোন কোন অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করে নির্মূল করা যাবে। তখন চিকিৎসা সহজ হয়ে যায়। কিন্তু ভাইরাসের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি কোনো কাজে আসে না।
কারণ, ভাইরাস তার জেনেটিক উপাদানগুলো আমাদের দেহকোষে ঢুকিয়ে দেয় এবং আমাদেরই দেহকোষের কার্যপদ্ধতি ব্যবহার করে নিজের অনুরূপ জেনেটিক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ভাইরাস তৈরি করতে থাকে। এখানেই মূল পার্থক্য। এবং এ কারণেই ভাইরাসের চিকিৎসা কঠিন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।