ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া কোটি কোটি বছর ধরে পৃথিবীতে টিকে আছে। কিন্তু এর মধ্যে কোনটি আগে এসেছে, তা এক বাক্যে বলার সময় এখনো আসেনি। কেন তা বলছি। তবে তার আগে একটু সংক্ষেপে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া সম্পর্কে জানা দরকার।
ভাইরাস হলো অতি ক্ষুদ্র এক ধরণের সত্ত্বা। একে ঠিক অণুজীবের কাতারে ফেলা যায় না। আবার জড় বস্তুও বলা যায় না। জীব ও জড়ের মাঝামাঝি এক সত্ত্বা এটি। অতিক্ষুদ্র এ সত্ত্বাকে বংশবৃদ্ধির জন্য অন্য প্রাণিকোষের ওপর নির্ভর করতে হয়। নিজে নিজে বংশবিস্তার করতে পারে না। অন্য জীবের জীবন্ত কোষের ভেতরে এসে বংশবৃদ্ধি করে। উদ্ভিদ ও প্রাণীসহ ব্যাকটেরিয়াকেও আক্রমণ করতে পারে ভাইরাস। পৃথিবীর যেখানেই প্রাণের অস্তিত্ব আছে, সেখানেই পাওয়া যাবে ভাইরাসের দেখা।
১৮৯৮ সালে নেদারল্যান্ডসের বিজ্ঞানী মার্টিনাস বেইজেরিংক প্রথম তামাকের মোজাইক ভাইরাস আবিষ্কার করেন। এরপর থেকে প্রায় ১১ হাজার প্রজাতির ভাইরাস আবিষ্কার করেছেন বিজ্ঞানীরা। গবেষণা করে বের করেছেন এদের গঠন-প্রকৃতিসহ নানা দিক। কিন্তু এরপরও ভাইরাসের উৎপত্তি সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা স্পষ্ট নন এখনো ।
ব্যাকটেরিয়াও এক প্রকারের এককোষী অণুজীব। ১৬৭৫ সালে ডাচ বিজ্ঞানী অ্যান্টনি ফন লিউয়েন হুক প্রথম বৃষ্টির পানিতে ব্যাকটেরিয়া দেখতে পান। ক্ষুদ্র এই অণুজীবগুলো গোলাকার, দণ্ডাকার কিংবা সর্পিলাকার—বিভিন্ন আকৃতির হতে পারে। পৃথিবীর শুরুর দিকে যেসব প্রাণের আবির্ভাব হয়েছিল, সেগুলোর মধ্যে ব্যাকটেরিয়া অন্যতম।
প্রশ্ন হলো, এ দুটির মধ্যে কোনটি পৃথিবীতে প্রথম আবির্ভাব হয়েছিল? এ প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন উইসকনসিন-ম্যাডিসন বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটেশনাল বায়োলজিস্ট কার্তিক অনন্তরমণ। তিনি বলেন, ‘এক ধরণের আদিম স্যুপের মতো জিনিস থেকে জৈব অণু তৈরি হয়েছিল। ওগুলো মূলত আরএনএ ও ডিএনএ-এর পূর্বসুরী ছিল। এরপর কার্বনযুক্ত অণু ক্রমে নিজেদের একত্রিত করে সংগঠিত হয়েছে। তবে সেগুলো ভাইরাস নাকি ব্যাকটেরিয়া ছিল, তা নিশ্চিতভাবে বলার সুযোগ নেই।’
বিজ্ঞানীরা স্পষ্টভাবে এ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারছেন না কারণ, প্রায় ৪০০ কোটি বছর আগে জন্ম নিয়েছিল এসব ক্ষুদ্র পরজীবি। ব্যাকটেরিয়া এককোষী প্রাণ। এরা সরাসরি প্রজনন করতে পারে। থাকতে পারে স্বাধীনভাবে। বিজ্ঞানীরা প্রায় ৩৫০ কোটি বছরের পুরনো ব্যাকটেরিয়ার জীবাশ্ম খুঁজে পেয়েছেন পৃথিবীতে। তবে গবেষণা বলছে, প্রথম জীব কোষ উদ্ভব হয়েছিল তারও আগে প্রায় ৪২০ কোটি বছর আগে। তাই প্রথম জীব কোষ ব্যাকটেরিয়া ছিল কি না, তা জোর দিয়ে বলা যায় না।
অন্যদিকে ভাইরাস ব্যাকটেরিয়ার চেয়েও দ্রুত ধ্বংস হয়। তাই এদের কোনো শারীরিক জীবাশ্ম নেই। কারণটা আগেই বলেছি। এরা পোষক দেহ ছাড়া জড় পদার্থের মতো আচরণ করে। কোনো কোষে সংক্রমিত না হলে এদের প্রতিলিপিও পাওয়া যায় না। তাই মুক্ত পরিবেশে এদের জীবাশ্ম পাওয়া যায় না। জেনেটিক সিকোয়েন্স করা সম্ভব। তবে, তা খুব বেশি কাজে আসে না। কারণ এরা অত্যন্ত দ্রুত পরিবর্তিত হয়। সব মিলিয়ে ভাইরাস কখন উদ্ভব হয়েছিল, তা বের করা এখন প্রায় অসম্ভব। ভবিষ্যতে প্রযুক্তি উন্নত হলে বা নতুন কোনো পদ্ধতি আবিষ্কার হলে হয়তো এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাওয়া যাবে।
তাহলে, ভাইরাস আগে না ব্যাকটেরিয়া আগে—এ প্রশ্নের উত্তর কি মিলল? পাঠকরা হয়তো এমন উত্তরে খুশি হবেন না। কিন্তু ৪০০ কোটি বছর আগে ঘটে যাওয়া একটা ঘটনা অনুমান করাও তো সহজ কথা নয়। তাই সরাসরি এখনো বলার সময় আসেনি, ভাইরাস আগে বা ব্যাকটেরিয়া আগে। অনেকটা সেই ডিম আগে না মুরগি আগের মতো প্যারাডক্সই রয়ে গেল এ প্রশ্নটা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।