আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ভারত-শাসিত কাশ্মীরের চল্লিশটিরও বেশি জায়গায় আজ সকাল থেকে জামাত-ই-ইসলামীর নেতা-কর্মীদের বাসভবন ও নানা কার্যালয়ে ব্যাপক তল্লাশি শুরু করেছে ভারতের ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি বা এনআইএ। খবর বিবিসি বাংলার।
ওই সংস্থাটির তরফে জানানো হয়েছে, কাশ্মীরে জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে জামাতের কথিত মদতের তদন্ত করতেই এই অভিযান।
তবে প্রায় আড়াই বছর আগেই কাশ্মীরে জামাতকে নিষিদ্ধ ঘোষিত করা হয়েছে, এই সংগঠনটি কাশ্মীরের কোনও নির্বাচনেও কখনও অংশ নেয়নি।
এই পটভূমিতে আজকের কাশ্মীরে জামাত-ই-ইসলামীর প্রভাব ঠিক কোথায় আর কতটা, তা নিয়ে রীতিমতো দ্বিমত আছে।
রবিবার সকাল থেকেই কাশ্মীর উপত্যকার অনন্তনাগ ও শোপিয়ান এবং জম্মুর ডোডা, কিশতওয়ার, রামবান ও রাজৌরি জেলার বিভিন্ন লোকেশনে একযোগে হানা দেয় এনআইএ-র অনেকগুলো দল।
ভারতে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে তদন্তে সর্বোচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন এই সংস্থাটির তরফে জানানো হয়, কাশ্মীরে জামাতের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন জঙ্গী কার্যকলাপে সরাসরি অর্থ জোগাচ্ছেন ও মদত দিচ্ছেন – নির্দিষ্ট এই অভিযোগের ব্যাপারে তারা মাসকয়েক আগে থেকেই যে তদন্ত শুরু করেছে এই অভিযান তারই অংশ।
কিন্তু ২০১৯-য়ে পুলওয়ামাতে জঙ্গী হামলার পরই কাশ্মীরে যে জামাত-ই-ইসলামীকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল, সেটি এখনও ওই অঞ্চলে কতটা সক্রিয় বা তাদের আদৌ কতটা প্রভাব আছে?
কাশ্মীরে জামাতের কর্মকান্ড নিয়ে বহুদিন ধরে গবেষণা করেছেন ও ‘কে-ফাইলস’ নামে একটি অনুসন্ধানী বই-ও লিখেছেন বশির আসাদ।
তিনি বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, “সংগঠন হিসেবে ততটা নয় – কিন্তু জামাত-ই-ইসলামীকে নিয়ে মূল ভয়ের জায়গাটা হল তারা যে আদর্শটা প্রচার করে।”
“কাশ্মীরে একটা আদর্শিক যুদ্ধ চলছে আমরা সবাই জানি, আর সেখানে বৈশ্বিক জিহাদী কার্যক্রমের ভাবধারার সবচেয়ে বড় প্রচারক জামাতিরাই।”
“ভারতের মূল ভূখন্ডে জামাত-ই-ইসলামি হিন্দ কিন্তু দেশের রাজনীতির মূল ধারায় মিশে গেছে – কিন্তু মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীরে বাস্তবতা আলাদা, সেখানে জামাত অনায়াসে খিলাফতের ভাবধারা প্রচার করে চলেছে।”
“কাশ্মীরের তরুণদের ওপর জামাতের প্রভাব যে বিশাল, এই সত্যিটা আসলে মেনে নেওয়াই ভাল।”
কিন্তু যে সংগঠনটি কাশ্মীরের রাজনীতিতেই নেই, কোনও ভোটেও কখনও অংশ নেয়নি – তাদের প্রচারের মাধ্যমটা কী?
বশির আসাদ বলছিলেন, এমনকী মসজিদ থেকেও ততটা নয় – কাশ্মীরে জামাত তাদের আদর্শ প্রচার করে থাকে সংগঠনের পরিচালিত স্কুলগুলো থেকে।
তিনি জানাচ্ছেন, “শুধু কাশ্মীর ভ্যালিতেই জামাতের পরিচালিত স্কুলের সংখ্যা ১০ হাজার দুশোরও বেশি। যে সব দুর্গম জায়গায় সরকারি স্কুলের অস্তিত্ত্ব পর্যন্ত নেই, সেখানেও জামাতের স্কুল আছে।”
“আর এগুলো মাদ্রাসা ধাঁচের নয় – বরং সব ধরনের আধুনিক সুযোগ সু্বিধা-সম্পন্ন স্কুল, সরকারি কর্মকর্তা বা আমলারাও তাদের ছেলেমেয়েদের এই সব স্কুলে পাঠাতে পছন্দ করেন।”
কাশ্মীর ইউনিভার্সিটির প্রবীণ অধ্যাপক ও অ্যাক্টিভিস্ট হামিদা বানো আবার মনে করেন, কাশ্মীরে জামাত-ই-ইসলামীর প্রভাবকে একটু বেশিই ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখানো হচ্ছে।
প্রফেসর বানো বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, “ভারতীয় রাষ্ট্র জামাতের ক্ষমতাকে অতিরঞ্জিত করে দেখাতে চাইছে – যাতে তাদের নেতাকর্মীদের বদনাম করে মেরে ফেলা সহজ হয়।”
“মনে রাখতে হবে, গরিষ্ঠ সংখ্যক কাশ্মীরি কখনওই জামাতের দৃষ্টিভঙ্গীকে সমর্থন করেনি।”
“একটা সময় তাদের স্কুলগুলো খুব প্রভাবশালী ছিল ঠিকই – কিন্তু রাজনীতি ততটা নয়, তারা মূলত সাংস্কৃতিক ও সামাজিক ভাবধারাই প্রচার করত। আর এখন তো সে সব স্কুলও ধীরে ধীরে বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।”
“জামাতের নেতাকর্মীদেরও ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী একে একে খতম করে দিচ্ছে – আমি তো বলব কাশ্মীরে জামাতের রাজনৈতিক অস্তিত্ত্বই এখন বিপন্ন।”
বিশেষ স্বীকৃতি বাতিলের দুবছর পরেও কাশ্মীর জুড়ে সমাজকর্মী-রাজনীতিবিদ বা অ্যাক্টিভিস্টদের বাড়িতে ও কার্যালয়ে যেভাবে হানা দেওয়া হচ্ছে ও তাদের ভয় দেখানো হচ্ছে – এনআইয়ের আজকের অভিযানকেও সেই পটভূমিতেই দেখতে চান প্রফেসর বানো।
এদিকে জামাতের বিরুদ্ধে দিনভর তল্লাশি চালিয়ে তারা কী পেয়েছেন, সে ব্যাপারে রবিবার সন্ধ্যা ছটাতেও এনআইএ কোনও বিবৃতি দেয়নি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



