
কেবিন ক্রু সঙ্কট, প্রযুক্তিগত জটিলতা ও কার্যক্রমগত বিশৃঙ্খলা—এই তিনের চাপে ধরাশায়ী ভারতের শীর্ষ এয়ারলাইন্স ইন্ডিগো। টানা তৃতীয় দিনের সঙ্কটে বৃহস্পতিবার একদিনেই বাতিল হয়েছে ৫৫০টিরও বেশি ফ্লাইট, যা ২০ বছরের ইতিহাসে নতুন রেকর্ড।
টানা তিন দিন ধরে চরম শিডিউল বিপর্যয়ে থাকা ভারতের ইন্ডিগো এয়ারলাইন্স বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) নজিরবিহীনভাবে ৫৫০টির বেশি ফ্লাইট বাতিল করেছে। ইন্ডিয়া টুডে শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।
ইন্ডিগো জানিয়েছে, সঙ্কট কাটতে আরও দুই–তিন দিন সময় লাগবে। তাই সামনে আরও ফ্লাইট বাতিল হতে পারে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিদিন প্রায় ২ হাজার ৩০০ ফ্লাইট পরিচালনা করে ইন্ডিগো। নির্ধারিত সময়ে ফ্লাইট উড্ডয়ন ও অবতরণে প্রতিষ্ঠানটির সুনাম থাকলেও সাম্প্রতিক বিপর্যয়ে সেই পরিচয় বিপর্যস্ত।
বুধবার সময়ানুবর্তিতার হার নামতে নামতে দাঁড়ায় মাত্র ১৯.৭% ,তার আগের দিনও হার ছিল ৩৫%
এত বড় ধাক্কায় যাত্রীদের হয়রানি বাড়তে থাকে, আর বিমানবন্দরে তৈরি হয় বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি।
পরিস্থিতি সামাল দিতে দ্রুত উদ্যোগ নেয় ভারতীয় বেসামরিক বিমান মন্ত্রণালয়। নিয়ন্ত্রক সংস্থা ডিজিসিএ–এর সঙ্গে ইন্ডিগোর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জরুরি বৈঠকে ডাকা হয়, যাতে সঙ্কটের কারণ ও সমাধান নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
এদিকে ইন্ডিগোর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পিটার এলবার্স কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, “অপারেশন স্বাভাবিক করা এবং সময়ানুবর্তিতায় ফিরে যাওয়া কোনও সহজ কাজ নয়। তবে আমরা সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা করছি।”
বৃহস্পতিবার মুম্বাই বিমানবন্দরে অন্তত ১১৮টি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে, ব্যাঙ্গালোরে ১০০টি, হায়দরাবাদে ৭৫, কলকাতায় ৩৫, চেন্নাইতে ২৬ ও গোয়াতে ১১টি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা পিটিআই। অন্যান্য বিমানবন্দরেও ফ্লাইট বাতিলের খবর পাওয়া গেছে।
ভারতীয় কর্তৃপক্ষ পাইলট ও ক্রুদের কাজের সময় নিয়ে বেশ কিছু নতুন নির্দেশনা জারি করেছে। এসব নির্দেশনায় পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রামের সময় দেওয়া, রাত জেগে ফ্লাইট না চালানো, সময়মতো ফ্লাইট চালাতে রোস্টার ঠিকঠাক রাখা, পর্যাপ্ত ক্রু না থাকলে ফ্লাইট বাতিল করার নিয়ম কঠোরভাবে মেনে চলতে বলা হয়েছে।
এসব নির্দেশনার সঙ্গে মানিয়ে ক্রু ব্যবস্থাপনায় হিমশিম খেতে হচ্ছে ইনডিগো কর্তৃপক্ষকে। শীতকালীন আবহাওয়া, প্রযুক্তিগত সমস্যা এবং আরও কিছু বিষয়ের কারণে ফ্লাইট চলাচলে বিঘ্ন আরও বেড়েছে।
ইনডিগোর ফ্লাইট বাতিল, শিডিউল বিপর্যয়ের কারণে বিভিন্ন বিমানবন্দরে যাত্রীদের ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করে। কোনো কোনো যাত্রীদের লাগেজ পেতে ১২ ঘণ্টার বেশি সময় লেগেছে। কোথাও ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষারত যাত্রীদের কোনো খাবার বা পানি না দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ফ্লাইট কতক্ষণ দেরি হবে, কখন ছাড়বে তা নিয়ে বৃহস্পতিবার বেশিরভাগ বিমানবন্দরেই ইনডিগোর কর্মীরা কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে, যাত্রীদের কাছ থেকে বারবার সময় নিয়েও ফ্লাইট ছাড়তে পারেনি তারা।
ক্ষুব্ধ এক যাত্রী বলেন, আমি এখানে ১২ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে আছি। প্রত্যেকবার তারা বলে এক ঘণ্টা দেরি হচ্ছে, দুই ঘণ্টা দেরি হচ্ছে। আমরা একটি বিয়েতে যাচ্ছি, আমরা এমনকী আমাদের লাগেজও পাচ্ছি না। ইনডিগোর কর্মীরা আমাদের কিছুই বলছে না। এই মুহূর্তে সবচেয়ে বাজে এয়ারলাইন্স। আমি বুঝছি না কেন তারা নতুন যাত্রী নিচ্ছে, আর লাগেজ জড়ো করেই যাচ্ছে।
পরিস্থিতির জন্য দুঃখ প্রকাশ করে ইনডিগো বলেছে, বিপর্যয় এড়াতে তারা সোমবার থেকে ফ্লাইট সংখ্যাও কমিয়ে দিচ্ছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



