গালওয়ান সংঘাত পরবর্তী চরম উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যে আকসাই চীন দখলমুক্ত করতে প্রস্তুতি নিচ্ছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। ১৯৬২-র যুদ্ধের পর, প্রায় ৩৮ হাজার বর্গকিলোমিটার অংশ জুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলটি দখল করেছে চীন।
লাদাখের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় চীন সেনা সমারোহ বাড়ার সঙ্গেই ভারতও সমরসজ্জা শুরু করে দিয়েছে। সেনা বাহিনীর তিনটি ডিভিশনকে মোতায়েন করে, ভারতও শক্তি বাড়িয়েছে। সবচেয়ে শক্তিশালী টি-৯০ ভীষ্ম ট্যাংকও ক’দিন হল নিয়ে আসা হয়েছে পূর্ব লাদাখে।
১৯৬২-র সংঘর্ষের সময় লাদাখ সীমান্তে ভারতের একটিই মাত্র ব্রিগেড সেখানে ছিল। দুই হাজার জওয়ান ছিল ওই ব্রিগেডে। বর্তমানে লাদাখের সুরক্ষায় তিনটি বিভাগের ৪৫ হাজার ভারতীয় সেনা মোতায়েন রয়েছে। পার্বত্য অঞ্চলের অনুপাত হল ১:১২। অর্থাৎ, ভারতীয় সেনাবাহিনীর ৪৫ হাজার সৈন্যের মুখোমুখি হতে চীনের ৫ লক্ষ সৈন্যের শক্তি প্রয়োজন।
২০১৯ সালের ৫ আগস্ট লাদাখকে জম্মু-কাশ্মীর থেকে বিচ্ছিন্ন করে, পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের (Union Territory) মর্যাদা দেয় কেন্দ্র। নয়াদিল্লির এই পদক্ষেপে তীব্র আপত্তি তুলেছিল বেইজিং। চীনের উদ্বেগের কারণ, তিব্বত থেকে জিনজিয়াং প্রদেশে যাওয়ার মসৃণ পথ আকসাই। যদি, এই রুটটি কোনোভাবে অবরুদ্ধ করা হয়, তবে চীনকে কারাকোরাম হয়ে বিকল্প পথে পৌঁছাতে হবে।
এখন ভারত যদি আকসাই চীনের দিকে এগোয়, জিনজিয়াং প্রদেশের ওপর থেকে চীনের দখল হারিয়ে ফেলার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ, এই জিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুর মুসলিমদের উপর চীনা সরকারের অত্যাচার গোটা দুনিয়ার অজানা নয়।
আকসাই চীন নিয়ে ভারত ও চীনের বিরোধ বহুদিনের। এটি জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যের লাদাখের অংশ ছিল। কিন্তু, চীনের দাবি, আকসাই চীন তাদের জিংজিয়াং প্রদেশের অংশ। বিরোধ সেখানেই।
আকসাই চীন কিন্তু ছোটখাটো অঞ্চল নয়। আয়তন ৩৭,২৪৪ কিলোমিটার। ভারতের অনেকগুলো রাজ্য এই অঞ্চলটির থেকে ছোট। গোয়ার চেয়ে ১০ গুণ বড়। সিকিমের চেয়ে ৫ গুণ বড়। আবার মণিপুরের আয়তনের তুলনায় প্রায় দেড়গুণ বড়। শুধু তাই নয়। বিশ্বের কয়েক’টি দেশও আকসাই চীনের আয়তনের তুলনায় ছোট। তাইওয়ান, বেলজিয়ামের থেকে এর আয়তন বেশি। অত দূর যেতে হবে না। ভারতের প্রতিবেশী ভুটানের থেকে আয়তনে সামান্য কম আকসাই চীন।
এটা মনে করা হয়, ১৯৫০-এর দশকে নেহরু সরকার যদি চীনের নকশাগুলির সম্পর্কে সজাগ থাকত, তবে আকসিন চীন নিজেদের দখলে নিতে পারত না চীন। চীনের গতিবিধিও বুঝে উঠতে পারেনি নেহরু সরকার। চীন রাস্তাঘাট নির্মাণ শুরু করলেও, কোনও পদক্ষেপ করে উঠে পারেননি নেহরু। সামরিক শক্তির গুরুত্ব বুঝতেও ব্যর্থ হয়েছিলেন।
ভারত-চীন এই সংঘাতের আবহেই বৃহস্পতিবার ফের একবার আকসাই চীনের দাবি তোলেন লাদাখের বিজেপি সাংসদ জামিয়াং সেরিং নামগিয়াল। এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘এটি একটি ভারতীয় অঞ্চল এবং এখন চীনা দখল থেকে এই জায়গা ফিরিয়ে আনার সময় এসেছে।’
নামগিয়াল অবশ্য শুধু আকসাই চীন নয়, গিলগিট ও বালতিস্তানের মতো অঞ্চলগুলিও ‘লাদাখের অংশ’ বলেই দাবি করেন। আকসাই চীন এলাকা যেমন রয়েছে চীনের দখলে, তেমনই গিলগিট ও বালতিস্তান রয়েছে পাকিস্তানের বেআইনি দখলে। ১৯৬২ সালের যুদ্ধে চীনের বিরুদ্ধে ভারত পরাজিত হয়েছিল। এদিন লাদাখের সংসদ জানিয়েছেন, ২০২০ সালে ভারত আর সেই জায়গায় নেই। এখন ভারত চাইলেই এই জায়গাগুলোর দখল ফিরিয়ে নিতে পারে।
লাদাখে ভারতের সীমান্ত রক্ষায় লাদাখের স্থানীয়দের বৃহত্তর ভূমিকা নিতে হবে বলেও তিনি জানান। তাঁর মতে সীমান্তবর্তী এলাকার রাখালদের তাদের ঐতিহ্যবাহী চারণভূমিতে যেতে হবে। সেখানে চীন তাদের প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ করেছে, কিন্তু তাদের ভারতীয় অঞ্চল দাবি করতে হবে।
এর আগে গলওয়ান উপত্যকায় চীন সেনার অনুপ্রবেশের বিষয় সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছিলেন বিজেপি সাংসদ। রাহুল গান্ধীর প্রশ্নের উত্তরে তিনি সাফ জানিয়েছিলেন, ১৯৬২ সালে কংগ্রেস ক্ষমতায় থাকার সময় চীন লাদাখে ঢুকে পড়েছিল। তার পর কংগ্রেস ও ইউপিএ সরকারের আমলে বারবারই তারা ভারতীয় ভূখণ্ডে ঢুকে পড়েছে।
এক নজরে আকসাই চীন :
- আকসাই চীন লাদাখের অংশ
- ৩৭,২৪৪ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত
- আকসাই চীন বর্তমানে চীনের দখলে
- ১৯৪৭ সালের পর থেকেই চীন আকসাই চীনে প্রবেশ শুরু করে
- ১৯৫৭ সালে চীন রাস্তা তৈরি করেছিল
- ১৯৫৮ সালে চীন তার মানচিত্রে আকসাই চীনকে দেখিয়েছিল
- ১৯৬২ সালের যুদ্ধের পরে চীন আকসাই চীনের দখল নেয়
- ১৯৬৩ সালে পাকিস্তান আকসাই চীনকে চীনের হাতে তুলে দেয়
–আকসাই চীন কারাকোরাম পর্বতমালায় অবস্থিত - সমুদ্রতল থেকে ১৭ হাজার ফুট ওপরে অবস্থিত
- কাশ্মীরের মোট ক্ষেত্রের প্রায় ২০% অংশ জুড়ে আকসাই চীন
- ১৯৪৭ সালের আগে কাশ্মীরের রাজপরিবারের অংশ ছিল
- ১৯৪৭ সালে রাজা হরি সিং একীকরণ চুক্তিতে ( merger agreement) সই করেছিলেন
- ভারত এই অংশ দাবি করেছে।
চীনের কাছে এই অঞ্চলের গুরুত্ব :
- চীনকে জিনজিয়াং এবং তিব্বতের সঙ্গে সংযুক্ত করে এই অঞ্চল
- মধ্য এশিয়ার সর্বোচ্চ স্থান
- এর উচ্চতার কারণে কৌশলগতভাবে তাৎপর্যপূর্ণ
- এখান থেকে চীনের সামরিক বাহিনী ভারতের দিকে নজর রাখতে পারে।
সূত্র : এই সময় ও অন্যান্য ভারতীয় মিডিয়া।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।