আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতে ‘এক দেশ, এক ভোট’ (ওয়ান নেশন ওয়ান ভোট) ব্যবস্থাকে বাস্তবায়িত করার পথে একধাপ অগ্রসর হয়েছে নরেন্দ্র মোদীর সরকার। দেশটির সাবেক রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের নেতৃত্বাধীন উচ্চ পর্যায়ের কমিটির সুপারিশ মেনে বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) ‘এক দেশ, এক ভোট’ প্রস্তাব পাশ করেছে দেশটির কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। একইসঙ্গে লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচন করার উদ্দেশ্যে মূলত এই ব্যবস্থা।
প্রস্তাবিত এই নির্বাচনি ব্যবস্থার বিপক্ষে সরব হয়েছে বিরোধীরা। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেছেন, “মনোযোগ সরানোর জন্য এটা বিজেপির একটা কৌশল।” আর তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেছেন, “এক দেশ, এক ভোট আসলে বিজেপির আরও একটা গণতন্ত্রবিরোধী গিমিক।”
সব ঠিক থাকলে সংসদের আসন্ন শীতকালীন অধিবেশনেই পেশ হতে পারে ‘এক দেশ এক ভোট’ বিল। যদিও তার জন্য সংবিধানে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনী করতে হবে। পাশাপাশি সংসদের দুই কক্ষে এই বিল পাশ করানোর পথ কতটা সহজ হবে সে নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন।
‘এক দেশ, এক ভোট’ বিষয়টা কী?
ভারতের মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত প্রস্তাব অনুযায়ী, দুই দফায় ভোট প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার কথা বলা হয়েছে। প্রথম দফায় লোকসভা এবং বিধানসভা নির্বাচন হবে। তার ১০০ দিনের মধ্যেই সম্পন্ন হবে পৌরসভা ও পঞ্চায়েত ভোট। আর ভোটার তালিকা হবে একটাই।
দেশটির কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, “এক দেশ, এক ভোটের জন্য গঠিত উচ্চ পর্যায়ের কমিটির সুপারিশ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা গ্রহণ করেছে। ১৯৫১ থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত একযোগে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১৯৯৯ সালে ল কমিশনও তাদের রিপোর্টে সুপারিশ করেছিল দেশে একযোগে নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার, যাতে দেশের উন্নয়নের কাজ অব্যাহত থাকে।”
এই প্রস্তাবনার পেছনে যুক্তি হিসেবে তিনি বলেছেন, “নির্বাচনের কারণে খুব বেশি খরচ হয়, আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত হয়- যা হওয়ার কথা নয়। আজকের যুব, সমাজ আজকের ভারত, যারা চান যে উন্নয়ন দ্রুত হোক, তারা যাতে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার দ্বারা বাধাগ্রস্ত না হন সেই কারণে এই এক দেশ, এক ভোট।”
প্রসঙ্গত, মার্চ মাসে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কাছে গিয়ে একসঙ্গে লোকসভা এবং সমস্ত বিধানসভার নির্বাচন করানোর সুপারিশ করে আট খণ্ডে বিভক্ত ১৮ হাজার পাতার একটা রিপোর্ট জমা দিয়েছিল রমানাথ কোবিন্দের নেতৃত্বাধীন কমিটি। ৪৭টি রাজনৈতিক দল এই বিষয়ে কমিটির কাছে তাদের মতামত জানিয়েছে। ‘এক দেশ, এক ভোট’ প্রস্তাবের সমর্থন করেছে ৩২টি দল আর তার বিপক্ষে মত দিয়েছে কংগ্রেস, তৃণমূলসহ ১৫টি দল।
সুপারিশ কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী, লোকসভার অধিবেশনের প্রথম দিনকে ‘অ্যাপয়েন্টেড ডেট’ বলে ঘোষণা করতে হবে। ঠিক পাঁচ বছর পর ওই লোকসভার মেয়াদ পূর্ণ হলে লোকসভা এবং রাজ্যের সব বিধানসভায় নির্বাচন করাতে হবে। সেদিক থেকে দেখতে গেলে ২০২৪ সালে নতুন সরকারের ক্ষমতায় আসার পর লোকসভা অধিবেশনের প্রথম দিনকে যদি অ্যাপয়েন্টেড ডেট বলে ধরা হয় তাহলে ২০২৯ সালে ভারতে একযোগে ভোট হওয়ার কথা।
যদিও সে বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি মি. বৈষ্ণব। তিনি জানিয়েছেন, এই সরকারের আমলেই এই নীতির বাস্তবায়ন করতে সচেষ্ট তারা। বিল পাশ করার পর আইনি প্রক্রিয়া শেষ হলে ‘অ্যাপয়েন্টেড ডেট’ ঘোষণা হবে।
এদিকে ২০২৬ সালে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা ভোট হওয়ার কথা। ‘এক দেশ, এক ভোট’ নীতি কার্যকর হলে তিন বছরের মাথায় রাজ্যে নির্বাচিত সরকারকে ভেঙে দিতে হবে অথবা বর্তমান বিধানসভার মেয়াদ ২০২৯ সাল পর্যন্ত বাড়াতে হবে। শুধু পশ্চিমবঙ্গই নয় একাধিক রাজ্যে একই ছবি দেখা যাবে। কোথাও বিধানসভার মেয়াদ বাড়াতে হবে বা কোথাও কমাতে হবে।
‘এক দেশ, এক ভোট’ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধকতা হলো সংবিধান সংশোধন। এর পাশাপাশি বিধানসভা ও লোকসভার মেয়াদকে একই সময়ের মধ্যে বাঁধার কাজ সহজ নয়। ‘এক দেশ, এক ভোট’ কার্যকর হওয়ার পর কেন্দ্রে বা কোনও রাজ্যে পাঁচ বছরের আগেই নির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোট আনলে, সেই সরকার পড়ে গেলে কী হবে, সেটাও ভাবনার বিষয়।
সংসদে ত্রিশঙ্কু পরিস্থিতি হলে এবং অনাস্থা প্রস্তাবের ক্ষেত্রে, আলাদাভাবে নির্বাচনের আয়োজন করা যেতে পারে বলে সুপারিশ করেছে ‘এক দেশ, এক ভোট’-এর জন্য গঠিত কমিটি। কিন্তু সেক্ষেত্রে ওই প্রস্তাবের মূল উদ্দেশ্যই সফল হচ্ছে না।
অন্যদিকে, লোকসভা ভোটের আবহে নিজেদের দলের পক্ষে নির্বাচনি ফলাফলকে রাখতে বিজেপি এই প্রস্তাব দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে বিরোধী দলগুলো। দুটো ভোট একসঙ্গে হলে একই দলের প্রার্থীকেই বেছে নেওয়ার প্রবণতা দেখা যায় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞদের অনেকেই। সেক্ষেত্রে কেন্দ্রে আর রাজ্যে একই দলের জয়ী হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
এ ছাড়া এজন্য বিপুল সংখ্যক ভোটকর্মী প্রয়োজন। লোকসভা ও বিধানসভা ভোট একসময় হলে এত সংখ্যক কর্মীকে নিযুক্ত করা এবং সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন হতে দেওয়ার ক্ষেত্রে বাস্তব সমস্যা হতে পারে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।