নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর: গাজীপুরের শ্রীপুরে এক রাতের বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে উপজেলার কয়েক হাজার একর আমন ধান। ভেসে গেছে শতাধিক মাছের খামার। নষ্ট হয়েছে শীতকালীন বিভিন্ন শাক-সবজি। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে রাস্তাঘাট, ব্রীজ ও কালভার্ট।
শুক্রবার সরেজমিনে দেখা গেছে, বৃহস্পতিবার (০৫ অক্টোবর) রাতের টানা বৃষ্টিতে উপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়নের নয়াপাড়, ধামলই, গলদাপাড়া, নান্দিয়া সাঙ্গুন গ্রামের শত শত একর জমির আমন ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। ধানক্ষেতে থৈথৈ পানি। মাছ শিকারিরা বিভিন্ন ধরনের জাল দিয়ে মাছ শিকার করছেন।
এদিকে, উপজেলার ধামলই গ্রামের বেশ কয়েকটি মাছের খামারের মাছ পানিতে ভেসে গেছে। উপজেলার নান্দিয়া সাঙ্গুন গ্রামের নদীঘেঁষা ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। উপজেলার কাওরাইদ-বরমী সড়কের কালীনারায়ণ উচ্চবিদ্যালয় এলাকায় সড়কের নিচের মাটি সরে গিয়ে বড় গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এছাড়াও স্থানীয় বিভিন্ন আঞ্চলিক সড়ক ও কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। পৌর শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বাসাবাড়ি, দোকানপাট সিএনজি স্টেশনে পানি জমে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। ভারী বৃষ্টিপাতে উপজেলার গাজীপুর নগরহাওলা গ্রামে মাটির ঘর ভেঙে নানি-নাতি গুরুতর আহত হয়েছে।
উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের আবদার গ্রামের কৃষক আব্দুল লতিফ বলেন, আমার তিন বিঘা আমনখেতে গলা সমান পানি। মানুষ মাছ শিকার করছে আনন্দে। আমার কলিজা ফেটে যাচ্ছে। যে পরিমাণ পানি, ১৫ দিনেও যেতে পারবে না। ধান পানির নিচেই পচে নষ্ট হবে বলে ওতনি মন্তব্য করেন। একই উপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামের কৃষক রাশেদ মিয়া বলেন, আমাদের পরিবারের অন্তত ২০ বিঘা জমিতে প্রচুর পানি। ঢলের পানি গিয়ে ধানের চারা উঠে যাচ্ছে। সপ্তাহখানেক পানির নিচে থাকলে সম্পূর্ণ পচে নষ্ট হয়ে যাবে।
একই ইউনিয়নের ধামলই গ্রামের মাছচাষি আরিফ মিয়া বলেন, আমার মাছের খামার তলিয়ে গিয়ে অন্তত ২০ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে। একই কথা জানান ওই ইউনিয়নের যোগীরছিট গ্রামের মাছচাষি লিটন মিয়া। তিনি বলেন, আমার পুকুরের পাড় ভেঙ্গে ৩ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে। উপজেলার বরমী ইউনিয়নের বরকুল গ্রামের মাছচাষি মাজহারুল ইসলাম বলেন, মাছের খামারের বাঁধ ভেঙ্গে সব মাছ নদীতে ভেসে গেছে।
উপজেলার মাওনা ইউনিয়নের চকপাড়া গ্রামের কৃষক আমিনুল ইসলাম বলেন, চকপাড়া গ্রামের শাকসবজির আদর্শ গ্রামে শত শত বিঘা জমিতে রোপণ করা শীতকালীন শাক-সবজি নষ্ট হয়েছে। শাকসবজি খেতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। তাতে কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একই ইউনিয়নের মাওনা চৌরাস্তা এলাকার ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম বলেন, মাওনা চৌরাস্তা এলাকার আশপাশের মহাসড়কসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক সড়ক পানির নিচে তলিয়ে গেছে। বাসাবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে পানি উঠেছে।
উপজেলা প্রকৌশলী রাকিবুল আহসান বলেন, আমি সকাল থেকে বিভিন্ন রাস্তায় খোঁজখবর নিচ্ছি। কয়েকটি সড়কে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া কালভার্ট ভেঙ্গে যাওয়া এবং সড়ক দেবে যাওয়ার ঘটনা রয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুমাইয়া সুলতানা বর্না বলেন, অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের ফলে উপজেলার অনেক জমির ফসল এখন পানির নিচে। দ্রæত সময়ের মধ্যে পানি নেমে গেলে ক্ষয়ক্ষতি কম হবে। দীর্ঘদিন ফসলি জমি পানির নিচে থাকলে ফসল পচে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাতে আমন ফলনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না বলেও তিনি আশঙ্কা করছেন।
উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা ওহিদুল আবরার বলেন, অনেক মাছের খামার তলিয়ে মাছ ভেসে গেছে। তাতে ক্ষতির পরিমাণ বলা যাচ্ছে না।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মুহীতুল ইসলাম বলেন, মাটির ঘরবাড়ি ভেঙে আহত ব্যক্তিদের খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।
এ ব্যাপারে শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরের প্রধানদের সার্বিক খোঁজখবর নিতে বলা হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।