জুমবাংলা ডেস্ক : প্রতি সপ্তাহেই পেঁয়াজের দাম ১০ থেকে ২০ টাকা করে বেড়েই চলছে। আগের দুই সপ্তাহে ১০ টাকা করে বাড়লেও চলতি সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজের দাম এক লাফে বেড়েছে ২০ টাকা। খোদ বিক্রেতারাই বলছেন, এই দাম বৃদ্ধির পেছনে সিন্ডিকেট কাজ করছে। পেঁয়াজের দাম এই মুহূর্তে কমার কোনও সম্ভাবনাও নেই, বরং আরও বাড়তে পারে বলেও জানিয়েছেন তারা।
এদিকে বাজারে সব ধরনের সবজির দামেও ঊর্ধ্বগতি। সবজির দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে রয়েছে বিক্রেতারা দেখাচ্ছে সেই বৃষ্টির অজুহাত। নিত্যপ্রয়োজনীয় এসব পণ্যের দাম বৃদ্ধিতে প্রতিনিয়তই চাপ বাড়ছে সাধারণ মানুষের উপর। বাজার করতে আসা ক্রেতারা নিত্যকার মতো অসন্তোষ প্রকাশ করছেন। শুক্রবার (১২ জুলাই) রাজধানীর মিরপুর-১ নম্বরে কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেলো বাজারের এমন চিত্র।
সপ্তাহান্তে বেড়েই চলছে পেঁয়াজের দাম
গত তিন সপ্তাহ ধরে প্রতি সপ্তাহেই পেঁয়াজের দাম বাড়ছে ১০ থেকে ২০ টাকা করে। এরমধ্যে গত ২৮ জুন (শুক্রবার) আকার ও মানভেদে ক্রস জাতের পেঁয়াজ ৯০-১০০ টাকায়; এরমধ্যে ছোট সাইজের পেঁয়াজ ৯০ টাকা এবং বড় সাইজের পেঁয়াজ ১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। আর দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকা করে।
ক্রমান্বয়ে গত ৫ জুলাই (শুক্রবার) আকার ও মানভেদে ক্রস জাতের পেঁয়াজ ১০০-১১০ টাকায়; এরমধ্যে ছোট সাইজের পেঁয়াজ ১০০ টাকা এবং বড় সাইজের পেঁয়াজ ১১০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। আর দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা করে।
আর গত দুই সপ্তাহের ক্রমান্বয়ে আজকে ১২ জুলাই (শুক্রবার) আকার ও মানভেদে ক্রস জাতের পেঁয়াজ ১২০ টাকায়। এর মধ্যে ছোট ও বড় দুই সাইজের পেঁয়াজই বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা কেজিতেই। আর দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকা করে। এক্ষেত্রে দেখা যায় ক্রস জাতের পেঁয়াজের দাম প্রতি কেজিতে ১০ টাকা করে বাড়লেও দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে একলাফে ২০ টাকা।
পেঁয়াজের বৃদ্ধি প্রসঙ্গে বিক্রেতা মো. ইউসুফ বলেন, পেঁয়াজের দাম বাড়ায় সিন্ডিকেট। তারা পেঁয়াজ কিনে স্টক করে রেখে দেয়। তারপর বাজারে টান (সংকট) ফেলে বেশি দামে বিক্রি করে।
এসময় আরেক বিক্রেতা হানিফ বলেন, ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ দেশে আসছে বলে এখন ১০০ বা ১২০ টাকায় পেঁয়াজ কিনতে পারছে মানুষ। না হলে এতোদিনে ২০০ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ খাওয়া লাগত। আর এই মুহূর্তে পেঁয়াজের কমবে না বলেই মনে হচ্ছে।বরং আরও বাড়তে পারে।
এছাড়া আজকে লাল আলু ৬০ টাকা, সাদা আলু ৬০ টাকা, বগুড়ার আলু ৭০ টাকা, দেশি রসুন ২০০ টাকা, চায়না রসুন ১৮০ টাকা, চায়না আদা ৩২০ টাকা, ভারতীয় আদা মান ভেদে ২৫০-৩০০ দরে বিক্রি হচ্ছে। এক্ষেত্রে দেখা যায় সব ধরনের লাল ও সাদা আলুর দাম উচ্চমূল্যে অপরিবর্তিত রয়েছে। আর বগুড়ার আলুর দাম কমেছে ১০ টাকা। আর চায়না আদার দাম বেড়েছে ২০ টাকা।
কেবল পেঁয়াজের দামই না আজকের বাজারে প্রায় সব ধরনের সবজিই বিক্রি হচ্ছে আকাশচুম্বী দামে। আজকের বাজারে ভারতীয় টমেটো ১৯০ দেশি টমেটো ২০০ টাকা, দেশি গাজর ১০০ টাকা, চায়না গাজর ১৮০ টাকা, লম্বা বেগুন ১০০ টাকা, সাদা গোল বেগুন ১০০ টাকা, কালো গোল বেগুন ১২০ টাকা, শসা ১২০ টাকা, উচ্ছে ১২০ টাকা, করলা ১৪০ টাকা, কাঁকরোল ১০০ টাকা, পেঁপে ৬০ টাকা, ঢেঁড়স ৮০ টাকা, পটল ৬০- ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৮০ টাকা, ধুন্দল ৮০ টাকা, ঝিঙা ৮০ টাকা, বরবটি ১২০ টাকা, কচুর লতি ১০০ টাকা, কচুরমুখী ১০০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৪০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৩০০ টাকা, ধনেপাতা ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর মানভেদে প্রতিটি লাউ ১০০ টাকা, চাল কুমড়া ৭০ টাকা, ফুলকপি ৭০ টাকা, বাঁধাকপি ১৪০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি হালি কাঁচা কলা ৪০ টাকা, হালি লেবু বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা করে।
এক্ষেত্রে দেখা যায় এক সপ্তাহের ব্যবধানে বিভিন্ন সবজির দাম বেড়েছে ১০ টাকা থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া উচ্চ দামে অপরিবর্তিত বেশ কিছু সবজির দাম। ভারতীয় ও দেশি টমেটোর দাম বেড়েছে যথাক্রমে ১০ টাকা ও ৬০ টাকা। চায়না গাজরের দাম বেড়েছে যথাক্রমে ১০ টাকা। কাঁকরোল, উচ্ছে ও করল্লার দাম বেড়েছে যথাক্রমে ২০, ২০ ও ৪০ টাকা। কাঁচা মরিচের দাম বেড়েছে ৪০ টাকা। লাউ ও চালকুমড়ার দাম বেড়েছে ৩০ টাকা ও ১০ টাকা। এছাড়া গত সপ্তাহের ৬০ টাকা দামের একটি বাঁধাকপি আজকে বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়।
সবজির দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে বিক্রেতা রুবেল বলেন, বৃষ্টিতে গাছের ক্ষতি হচ্ছে যেরকম সবজি আসার কথা সেটা আসছে না। তাই এখন দাম বেড়ে গিয়েছে।
আরেক বিক্রেতা শহিদুল বলেন, বর্ষাকালে বন্যা হয় তখন এমনিই সবজির দাম বেড়ে যায়। শীতকালে সবজির দাম কম থাকে।
এসময় বাজার করতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী মাহফুজুর রহমান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সারা বছরই তো বেশি দামে সবকিছু কিনতে হচ্ছে। আলাদা করে আর বর্ষাকালের কথা বলে লাভ কী! আর ব্যবসায়ীদের কথা শুনলে মনে হয় সারা বছরই তারা কোনও না কোনও ক্ষতির মুখে আছেন। তো এতো যখন তাদের সমস্যা তাহলে ব্যবসা ছেড়ে অন্য কাজ করে না কেন! তাদের খালি লসই হয়, আর আমরা আছি মহাসুখে!
আরেক ক্রেতা হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমাদের খরচ খালি বাড়েই। বেতন তো বাড়ে না। সবকিছুর দাম বেশি। সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়।’
এদিকে আজকের বাজারে ইলিশ মাছ ওজন অনুযায়ী ১৭০০ থেকে ২৪০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। আর রুই মাছ ৩৬০ থেকে ৬০০ টাকা, কাতল মাছ ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, কালিবাউশ ৪০০ থেকে ৮০০ টাকা, চিংড়ি ৮০০ থেকে ১৪০০ টাকা, কাঁচকি মাছ ৫০০ টাকা, কৈ মাছ ২২০ থেকে ৩০০ টাকা, পাবদা মাছ ৪০০ থেকে ১ হাজার টাকা, শিং মাছ ৪০০ থেকে ১২০০ টাকা, টেংরা মাছ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, বেলে মাছ ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা, বোয়াল মাছ ৭০০ থেকে ১২০০ টাকা এবং রূপচাঁদা মাছ ৮০০ থেকে ১৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এ ছাড়া আজকে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকা কেজি দরে। এছাড়া খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ১৫০ টাকা কেজি দরে। আর বিভিন্ন দোকানে মুরগির লাল ডিম ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা এবং সাদা ডিম ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা প্রতি ডজন বিক্রি হচ্ছে।
আজ বাজারে ওজন অনুযায়ী ব্রয়লার মুরগি ১৮০ থেকে ১৯৫ টাকা, কক মুরগি ২৬০ থেকে ২৬০ টাকা, লেয়ার মুরগি ৩৩০ টাকা, দেশি মুরগি ৫৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আগের সপ্তাহের তুলনায় ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে কেজিতে ২০ টাকা। তবে কক মুরগির দাম কেজিতে ২০ টাকা, দেশি মুরগির ৩০ টাকা ও লেয়ার মুরগির দাম ৩০ টাকা কমেছে।
এদিকে আজ মুদি দোকানের পণ্যের দাম অপরিবর্তিত আছে। আজকে প্যাকেট পোলাওয়ের চাল ১৫৫ টাকা, খোলা পোলাওয়ের চাল মানভেদে ১১০ থেকে ১৪০ টাকা, ছোট মসুরের ডাল ১৩৫ টাকা, মোটা মসুরের ডাল ১১০ টাকা, বড় মুগ ডাল ১৬০ টাকা, ছোট মুগ ডাল ১৮০ টাকা, খেসারি ডাল ১০০ টাকা, বুটের ডাল ১৩০ টাকা, ডাবলি ৮০ টাকা, ছোলা ১১৫ টাকা মাশকলাইয়ের ডাল ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬৭ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল১৪৭ টাকা, কৌটাজাত ঘি ১ হাজার ৩৫০ টাকা, খোলা ঘি ১ হাজার ২৫০ টাকা, প্যাকেটজাত চিনি ১৩৫ টাকা, খোলা চিনি ১৩০, টাকা, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৫০ টাকা, আটা দুই কেজির প্যাকেট ১১৫ টাকা, খোলা সরিষার তেল প্রতি লিটার ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া এলাচি প্রতি কেজি ৪ হাজার ৫০০ টাকা, দারুচিনি ১৫০ টাকা, লবঙ্গ ১ হাজার ৬০০ টাকা, সাদা গোল মরিচ ১ হাজার ৬০০ টাকা এবং কালো গোলমরিচ ৯০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।