রঞ্জু খন্দকার, গাইবান্ধা থেকে : কারখানার স্বয়ংক্রিয় কলে দেওয়া হচ্ছে সরিষা। সেখান থেকে বের হচ্ছে তেল। এই তেল ৭ দিন রেখে গাদ আলাদা করে দেওয়া হচ্ছে পরিশোধন কলে। সেখান থেকে পাওয়া যাচ্ছে ঝাঁঝালো তেল।
একই কারখানায় ভাঙা হচ্ছে হলুদ, মরিচের গুড়া ও লাল আটা। পাশেই লাগোয়া দোকান থেকে খুচরা ও পাইকারিভাবে বিক্রি হচ্ছে এসব নিত্যপণ্য। এখান থেকে যাচ্ছে জেলার বিভিন্ন দোকানেও।
গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলা সদরে নিজেদের তৈরি এসব পণ্য বিক্রি করে গ্রাহকের আস্থা কুড়োচ্ছেন দুই তরুণ। তাঁদের একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর তৌফিক ইমাম শাওন। আরেকজন বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজের স্নাতকোত্তর আসাদুজ্জামান সিসাম। ব্যবসার পাশাপাশি তাঁরা চাকুরিও সামলান।
ওই দুই তরুণের এই উদ্যোগের নাম–‘আস্থা’।
দুই উদ্যোক্তা জানালেন, বাজারে অনেক পণ্য। কিন্তু গ্রাহকের আস্থা কম পণ্যেই। তাই কারখানার পাশেই দোকান দিয়েছেন তাঁরা। যাতে গ্রাহক নিজে এসে দেখে-শুনে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। গ্রাহকের আস্থা অর্জন করেই ব্যবসা করতে চান তাঁরা।
তৌফিক ইমাম শাওন পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ শাখায় কৃষি ব্যাংকের অফিসার হিসেবে কর্মরত আছেন। মুঠোফোনে তিনি বলেন, আগে থেকেই ব্যবসার প্রতি ঝোঁক ছিল তাঁর। কিন্তু যেন-তেনভাবে কিছু করতে চাচ্ছিলেন না। তাই সিসাম ভাইকে সঙ্গে নিয়ে এই উদ্যোগ নেওয়া। তিনি ব্যবসার পরিচালনার দিকটা দেখেন। আর বিপণনের দিকটা খেয়াল রাখেন সিসাম।
সম্প্রতি গিয়ে দেখা যায়, দোকানে বিভিন্ন পণ্য থরে-থরে রাখা। কোনো সারিতে বোতলজাত সরিষার তেল, কোথাও হলুদ ও মরিচের গুড়া। কোনো তাকে রাখা লাল আটা।
দোকানে বসে ছিলেন অন্যতম সত্ত্বাধিকারী সিসাম। তিনি ঘুরে ঘুরে কারখানা দেখালেন। ভেতরে সরিষা ভাঙা ও তেল শোধনের কল। আরেকপাশে হলুদ ও মরিচ গুড়া করার কল। রয়েছে লাল আটা তৈরির কলও।
সিসাম পলাশবাড়ীর হিজলগাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। স্কুল করার পর বিকেলে দোকানে বসেন তিনি।
সিসাম বলেন, মানুষ প্যাকেটজাত পণ্যে সহজে আস্থা পায় না। তাই তাঁরা কারখানার পাশেই দোকান দিয়েছেন। যাতে ক্রেতারা দেখে-শুনে যাচাই করে কিনতে পারেন।
চাকরির পাশাপাশি এই উদ্যোগে কর্মসংস্থান হয়েছে কয়েকজন কর্মীরও। তাঁদের একজন খায়রুল ইসলাম। তিনি রয়েছেন কারখানার ব্যবস্থাপক হিসেবে।
খায়রুল বলেন, কারখানায় তিনিসহ তিনজন লোক কাজ করেন। তিনি কারিগরি দিকগুলো দেখাশোনা করেন। আগে তিনি অন্য কারখানায় কাজ করতেন। এই কারখানার শুরু থেকে এখানে আছেন। এখানকার পণ্যের মান ভালো।
আস্থার পণ্যে যে আস্থা রাখা যায়– তা জানালেন পলাশবাড়ীর সুলতানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শাহওয়াজ কবির।
তিনি বললেন, অনেক দিন ধরে স্থানীয়ভাবে তৈরি পণ্য খুঁজছিলেন তিনি। কিন্তু কোথাও সে অর্থে আস্থা পাচ্ছিলেন না। অবশেষে পলাশবাড়ীতেই এই কারখানার খোঁজ পান। এই দোকানের নিয়মিত খদ্দের তিনি। অন্যদেরও তিনি এ দোকানের পণ্য খরিদ করতে বলেন। কারণ, ভালো জিনিস সবার দরকার।
গত ফেব্রুয়ারি থেকে কারখানা চালু করেছেন শাওন সিসাম। আস্তেধীরে এর পরিচিতি বাড়ছে। তাঁরা বলেন, তাঁদের কারখানার পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণে ছাড় দেন না তাঁরা। তাঁরা দুজনেই চাকরিজীবী। নিজেদের একটা পরিচিতি আছে। অনেক ক্রেতাই তাঁদের পরিচিত। ফলে মানহীন পণ্য বিক্রি করে তাঁদের কাছে মুখ দেখাবেন কী করে?
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।