জুমবাংলা ডেস্ক: ভাসমান বেডে মাঠ পর্যায়ে গবেষণায় গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষাবাদে সাফল্য মিলেছে। এ বছর গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া উপজেলার মিত্রডাঙ্গা গ্রামের ৫টি ভাসমান বেডে গ্রীষ্মকালীন টমেটোর গবেষণা মূলক চাষাবাদ করা হয়।
৩০ ফুট লম্বা ও সাড়ে ৪ ফুট চওড়া ১টি বেডে ৬৫ থেকে ৭০ কেজি গ্রীষ্মকালীন টমেটো উৎপাদিত হয়েছে। সেই হিসেবে ৫টি বেডে প্রায় সাড়ে ৩০০ কেজি গ্রীস্মকালীন টমেটো ফলন পাওয়া গেছে। বিষয়টি এখনো গবেষণা পর্যায়ে রয়েছে। আগামী বছর গোপালগঞ্জে ভাসমান বেডে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ সম্প্রসারণ করে অধিকতর গবেষণা করা হবে।
কৃষকের সাথে গবেষকরা একযোগে এ কাজে অংশ নেবে বলে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের গোপালগঞ্জ সরেজমিন গবেষণা বিভাগের ইনচার্জ ও উর্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মহসীন হওলাদার জানিয়েছেন।
তিনি বলেন বলেন, ফিল্ডে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষে বাড়তি যতœ নিতে হয়। সরাসরি বৃষ্টির পানি থেকে টমোটো ক্ষেতে রক্ষায় টানেল করে দিতে হয়। তারপর ব্যাপক পরিচর্যা করতে হয়। এরপরও ফিল্ডে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষে সাফল্য পাওয়া সহজ কথা নয়। ভাসমান বেডে গ্রীস্মকালীন টমেটো চাষাবাদে সাফল্য পাওয়া ফিল্ড থেকে আরো কঠিন কাজ।
ড. মহসীন হওলাদার, আমাদের তত্ত্বাবধানে গত ২৮ জুলাই টুঙ্গিপাড়া উপজেলার মিত্রডাঙ্গা গ্রামের কৃষক অবনি বিশ্বাস ৫টি বেডে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত গ্রীস্মকালীন টমেটোর জাত রারি হাইব্রিড টমেটো-৮ চাষাবাদ করেন। এখানে আমি, আমার বৈজ্ঞানিক সহকারী ও কৃষক একযোগে নীবিড়ভাবে কাজ করেছি। তারপর মাঠ গবেষণায় ভাসমান বেডে টমেটো চাষে সাফল্য পেয়েছি।
আমরা কৃষককে ভাসমান কৃষির আধৃনিক প্রযুক্তি শেখাচ্ছি। এখানে এ প্রযুক্তি নিয়ে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট গবেষণা করছে। কৃষককে প্রাকটিক্যাল ভাসমান কৃষির আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে পাতা, লতা জাতীয় সবজি, ফল, মসলাসহ বিভন্ন ফসল উৎপাদনের কলাকৌশল আয়ত্ত করতে আমরা সহযোগিতা করছি। এতে ভাসমান বেডে সবজি ও মসলা চাষ গবেষণা সম্প্রসারণ ও জনপ্রিয় করণ প্রকল্প কৃষকদের সব ধরণের সাপোর্ট দিচ্ছে।
ভাসমান কৃষি প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) ড. মোস্তাফিজুর রহমান তালুকদার বলেন, ভাসমান বেডে পেঁয়াজ, মরিচ, আদার পর গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষে গবেষণায় সাফল্য মিলেছে। বর্ষাকালে আমদের দেশে সবজির সংকট থাকে। এ সময়ে ভাসমান বেডে গ্রীস্মকালীন টমেটো চাষাবাদ বাড়াতে আমরা কাজ করছি। এতে ব্যাপক সাফল্য পেলে এখান থেকে গ্রীস্মকালীন টমেটোর চাহিদা অনেকাংশেই পূরণ কারা সম্ভব হবে। এ আশায় আমরা কৃষকদের নিয়ে মাঠ গবেষণার কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি ।
কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের গোপালগঞ্জ সরেজমিন গবেষণা বিভাগের উর্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এইচ.এম খায়রুল বাসার বলেন, মাঠ গবেষণায় ভাসমান বেডে গ্রীষ্মকালীন টমেটো উৎপাদন করতে আমরা সক্ষম হয়েছি। এটি ধরে রাখতে আমরা আগামী বছর অন্তত ১০০ বেডে গ্রীস্মকালীন টমেটো করব। সেখানে সাফল্য পেলে তারপর আমরা ভাসমান বেডে বাণিজ্যিকভাবে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষাবাদ করতে কৃষককে উদ্বুদ্ধ করব।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলার মিত্রডাঙ্গা গ্রামের কৃষক অবণি বিশ্বাস বলেন, ভাসমান বেডে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষাবাদ একটি নতুন প্রযুক্তি। এ চাষাবাদে টানেল ব্যবহৃত হয়। সেই সাথে টমেটো ক্ষেতে ব্যাপক পরিচর্যা করতে হয়। কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের কৃষি বিজ্ঞানী ড. মহসীন হাওলাদার ও বৈজ্ঞানিক সহকারীরা আমাদের সাথে কাজ করেছেন। তারা গবেষণার সাইড দেখেছেন। ৭ দিন পর পর ক্ষেত দেখতে এসেছেন। আমরা চাষাবাদ ও পরিচর্যার সাইডে কাজ করেছি।
তিনি বলেন, সবার অক্লান্ত পরিশ্রমে আমাদের এলাকায় এ প্রথাম ভাসমান বেডে গ্রীষ্মকালীন টমেটো উৎপাদিত হয়েছে। তবে এটি সহজ কাজ নয়। ভাসমান বেডে গ্রীস্মকালীন টমেটো চাষ সম্প্রসারণ একটু কঠিন হবে। কারণ এতে খাঁটুনি খুব বেশি। তবে খাঁটুনি বেশি হলেও প্রতি বেডে ৬৫ থেকে ৭০ কেজি টমেটো ফলন পেয়েছি। প্রতি কেজি টমেটো ৮০ টাকা দরে বিক্রি করেছি। এখান থেকে আমি প্রায় ২৮ হাজার টাকার টমেটো বিক্রি করেছি।
গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণের উপপরিচালক ড. অরবিন্দ কুমার রায় বলেন, গোপালগঞ্জে ভাসমান বেডে সব ফসল চাষাবাদে সাফল্য মিলেছে। সর্বশেষ গ্রীষ্মকালীন টমেটোতেও মাঠ গবেষণায় ভালো ফলন পাওয়া গেছে। এটি ভাসমান বেডের সম্ভাবনাময় ফসল হিসেবে হাতছানি দিচ্ছে। গ্রীষ্মকালীন টমেটো একটি উচ্চ মূল্যের ফসল। ভাসমান বেডে গ্রীষ্মকালীন টমেটোর চাষাবাদ সম্প্রসারণ করতে পারলে কৃষক লাভবান হবেন। কৃষকের আয় বাড়বে। তাদের আর্থসামাজিক অবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন ঘটবে। এটি আমাদের কৃষক ও কৃষির জন্য সুখবর।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।