আন্তর্জাতিক ডেস্ক : একটি অর্থপাচার মামলার তদন্তের সূত্র ধরে গত জানুয়ারিতে স্পেনের মালাগা প্রদেশের মারবেল্লা শহরে গ্রেফতার হয়েছিলেন মক্রো মাফিয়ার নেতা করিম বোয়াখরিচান। পরে বিলিয়নিয়ার এই মাদক সম্রাটকে প্রত্যর্পণের মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার আবেদন করেছিল ডাচ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু স্পেনে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং প্রত্যর্পণ আবেদনের বিভ্রান্তির কারণে ভুল করে বোয়াখরিচানকে কিছু শর্তের অধীনে জেল থেকে ছেড়ে দিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। আর ছাড়া পাওয়ার পরই একেবারে হাওয়ায় মিলিয়ে গেছেন ইউরোপের কুখ্যাত এই মাফিয়া নেতা।
তবে স্প্যানিশ কর্তৃপক্ষ আশা করছে, তারা শিগগিরই বোয়াখরিচানকে খুঁজে বের করতে সক্ষম হবে। মঙ্গলবার বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকদের কাছে স্প্যানিশ বিচার মন্ত্রী ফ্যালিক্স বোলাওস স্বীকার করেছেন—বোয়াখরিচানের পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাটি খুবই দুশ্চিন্তার। তবে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, নিরাপত্তা বাহিনী যত দ্রুত সম্ভব তাকে ধরে আইনের কাছে সোপর্দ করবে।
মক্রো মাফিয়া ইউরোপের বেশ কয়েকটি শীর্ষস্থানীয় কোকেন পাচার চক্রের সঙ্গে সম্পর্কিত। বিশ্বাস করা হয়, গত ১৫ বছর ধরে এই মাফিয়া গোষ্ঠী দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশ থেকে ইউরোপের দেশগুলোতে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের কোকেন পাচার করেছে। মূলত নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডাম ও রটারডামের বিভিন্ন বন্দর ব্যবহার করে পুরো অঞ্চলজুড়ে কোকেন পাচার করে এই গোষ্ঠী। আর ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য এবং মরক্কোতে এই মাফিয়ার অর্থ পাচারের জাল বিছানো।
ডাচ গণমাধ্যমের দাবি অনুযায়ী, সম্প্রতি নেদারল্যান্ডসের রাজকন্যা অ্যামেলিয়াকে অপহরণ হুমকির সঙ্গে এই মাফিয়ার যোগসূত্র আছে। খবরে প্রকাশিত হয়—অপহরণের হুমকি পেয়ে নিজের দেশ ছেড়ে গত বছর স্পেনে পালিয়ে গিয়েছিলেন ডাচ রাজকুমারী। প্রায় এক বছরের বেশি সময় ধরে তিনি সেখানেই বসবাস করছেন।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পালিয়ে যাওয়া করিম বোয়াখরিচান ‘ট্যাক্সি’ নামেও পরিচিত। স্পেনে ৫০ মিলিয়ন ইউরো মূল্যের ১৭২টি সম্পত্তি ক্রয়ের মাধ্যমে অর্থ পাচারের অভিযোগে গত জানুয়ারিতে আরও পাঁচ ব্যক্তির সঙ্গে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।
৪৬ বছর বয়সি বোয়াখরিচান ইউরোপের দেশগুলোতে একজন মোস্ট ওয়ান্টেড অপরাধী এবং গত পাঁচ বছর ধরে তাকে হন্যে হয়ে খুঁজছিল ইন্টারপোল। ধারণা করা হয়, ২০১৪ সালে গুলিতে নিহত হওয়ার আগে তার ভাই সামির বোয়াখরিচান নেদারল্যান্ডস ও মরক্কো ভিত্তিক মক্রো মাফিয়ার বিশাল একটি শাখা তৈরি করেছিলেন। এই শাখা নেদারল্যান্ডস এবং বেলজিয়ামকে কেন্দ্র করে পুরো অঞ্চলজুড়ে বিস্তৃত ছিল। ভাইয়ের মৃত্যুর পর তার অপরাধ সাম্রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে তুলে নিয়েছিলেন করিম বোয়াখরিচান। তার গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে ইউরোপের মাফিয়া সাম্রাজ্যে ক্ষমতার লড়াই কিছুটা শান্ত হয়ে এসেছিল। এই লড়াইয়ে ইতিপূর্বে বেশ কিছু মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
গত জানুয়ারিতে করিমের গ্রেফতারের খবর পেয়ে ডাচ কর্তৃপক্ষ তাকে নেদারল্যান্ডসে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য স্প্যানিশ কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছিল। তবে মাফিয়া প্রধান স্পেনের যে প্রদেশে আটক হয়েছিলেন সেই মালাগার কর্তৃপক্ষ জোর দিয়ে জানিয়েছিল—তাকে স্পেনেই বিচারের মুখোমুখি করা হবে। যদিও পরে মাদ্রিদে অবস্থিত স্পেনের জাতীয় আদালত ওই সিদ্ধান্ত বাতিল করেছিল।
এদিকে গত ২২ ফেব্রুয়ারি মালাগার আদালত করিম বোয়াখরিচানের আইনজীবীদের একটি আপিল আমলে নেন এবং ৫০ হাজার ইউরো প্রদানের শর্তে প্রত্যর্পণের আগ পর্যন্ত তার জামিন মঞ্জুর করা হয়।
স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম এল-পাইসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, স্প্যানিশ বিচারকেরা স্বীকার করেছেন—জামিন পেলে মাফিয়া নেতা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে পারেন এমন সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু তাকে পাসপোর্ট সমর্পণে বাধ্য করা এবং ১৫ দিন পর পর আদালতে হাজিরা দেওয়ার শর্তে তার জামিন দেওয়াকে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা হিসেবে ধরে নিয়েছিলেন বিচারকেরা।
গত ১ এপ্রিল পর্যন্ত আদালতে নিয়মিতভাবেই হাজিরা দিয়েছিলেন বোয়াখরিচান। তারপর থেকেই তিনি নিখোঁজ।
মঙ্গলবার সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসাবাদের মুখে স্প্যানিশ বিচারমন্ত্রী বোলাওস দেশটির আমলাতান্ত্রিক ত্রুটির বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন।
নেদারল্যান্ডসের হেগে অবস্থিত ডাচ পাবলিক প্রসিকিউটর অফিসের মুখপাত্র ভিনসেন্ট ভিনম্যান দাবি করেছেন, বোয়াখরিচানকে স্প্যানিশ কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়ার বিষয়টি ছিল তাদের অজানা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।