জুমবাংলা ডেস্ক : দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের ভূমি ব্যবস্থাপনায় অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ ছিল সঠিক জরিপের অভাব। পুরনো জরিপ পদ্ধতির সীমাবদ্ধতা এবং দীর্ঘসূত্রিতা সাধারণ মানুষের জন্য জটিলতা সৃষ্টি করেছে। তবে অবশেষে এই সমস্যার সমাধান হতে যাচ্ছে।
Table of Contents
ভূমি জরিপ: অতীতের সীমাবদ্ধতা ও বর্তমানের চ্যালেঞ্জ
‘ভূমি জরিপ’—এই শব্দটি শুনলেই অনেকের মাথায় আসে জটিল, সময়সাপেক্ষ এবং অপ্রতিস্পর্ধনীয় একটি প্রক্রিয়া। এখনো দেশে ১৮৮৮ সালের ব্রিটিশ আমলে সম্পন্ন হওয়া সিএস জরিপকে ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করা হয়, যা সম্পূর্ণ হতে লেগেছিল ৫২ বছর। সেই সময় ঢাকা জেলার মালিক ছিলেন মূলত নবাব ও ভাওয়াল পরিবার, অথচ জরিপ শেষ করতেই লেগে গিয়েছিল অর্ধশতাব্দী।
পরবর্তীতে এসএ, আরএস, বিএস জরিপ এলেও তারা পুরনো ভিত্তির উপর দাঁড়ানো ছিল, যা যুগোপযোগী ছিল না। জরিপ সংক্রান্ত এই জটিলতা ভূমি ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম, জালিয়াতি এবং মামলার সৃষ্টি করেছে। নাগরিকদের হয়রানির অন্যতম বড় কারণ এই জরিপ অস্পষ্টতা।
আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার: জরিপে অভূতপূর্ব রূপান্তর
ভূমি সচিবের ঘোষণা অনুযায়ী, প্রযুক্তির বিস্ময়কর অগ্রগতির ফলে জরিপে এসেছে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন। ড্রোন প্রযুক্তির মাধ্যমে এখন প্রতি মিনিটে ৫০০ থেকে ৬০০ ছবি তোলা সম্ভব এবং সেগুলো অটোমেটেড সফটওয়্যারে বিশ্লেষণ করে মুহূর্তেই মানচিত্র তৈরি করা যায়।
এই প্রযুক্তিনির্ভর জরিপ ব্যবস্থার অন্যতম অংশীদার হচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়া। দেশটি প্রাথমিক পর্যায়ে ৮০০ থেকে ৯০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তা দেবে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এই সহযোগিতা প্রাথমিকভাবে বিনা খরচে এবং ২৮ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ দেওয়া হচ্ছে, যা দেশের জন্য এক বিশাল সুযোগ।
এই উদ্যোগ শুধু জরিপ নয়, বরং পুরো ভূমি ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা, গতি এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবে। এর মাধ্যমে ভূমি মালিকানা যাচাই সহজ হবে এবং মিথ্যা দাবির সুযোগ কমে যাবে।
দেশের ভূমি ব্যবস্থাপনায় সম্ভাব্য প্রভাব
এই আধুনিক জরিপ কার্যক্রমের মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে সঠিক ভূমি তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ সম্ভব হবে। যার ফলে সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের বাস্তবায়নে সহায়তা মিলবে। উন্নয়ন কার্যক্রম দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাবে এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি স্বচ্ছ পরিবেশ তৈরি হবে।
বাংলাদেশের গ্রামীণ এবং শহরাঞ্চলে ভূমি সংক্রান্ত মামলা ও বিরোধ নিরসনে এই কার্যক্রম বিশেষ ভূমিকা রাখবে। এছাড়াও, নাগরিকরা অনলাইনে ভূমি সংক্রান্ত তথ্য সহজে পাবে যা ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণে এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে।
অভ্যন্তরীণভাবে ‘জাতীয় খবর’ এবং ‘বাংলাদেশ সংবাদ’ বিভাগে আরও এ ধরনের উন্নয়নমূলক সংবাদ পাওয়া যাবে।
বিশ্বব্যাপী ভূমি ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তির ব্যবহার এখন আর নতুন কিছু নয়। FAO-এর ভূমি প্রশাসন নীতিমালা অনুসারে, স্বচ্ছতা এবং অটোমেশন নিশ্চিত করাই আধুনিক ভূমি প্রশাসনের মূল লক্ষ্য।
নাগরিকদের জন্য করণীয় ও প্রস্তুতি
- জমির দলিল ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র হালনাগাদ রাখা।
- অনলাইনে ভূমি সম্পর্কিত তথ্য যাচাই ও অনুসন্ধান করা।
- জরিপ কার্যক্রম শুরু হলে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা।
ভূমি জরিপ সম্পর্কিত এই যুগান্তকারী পরিবর্তন দেশের ভূমি প্রশাসনে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। প্রযুক্তিনির্ভর এ পদক্ষেপে দেশের অর্থনীতি, সামাজিক ভারসাম্য এবং নাগরিক অধিকার সংরক্ষণে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হবে।
FAQs
ভূমি জরিপ কী?
ভূমি জরিপ হলো নির্দিষ্ট এলাকার ভূমির সীমানা, মালিকানা, ও শ্রেণিভেদ চিহ্নিত করার প্রক্রিয়া যা সরকারিভাবে সম্পাদিত হয়।
নতুন প্রযুক্তিতে ভূমি জরিপ কত দ্রুত সম্পন্ন হবে?
ড্রোন ও স্বয়ংক্রিয় সফটওয়্যারের মাধ্যমে এখন ভূমি জরিপ কয়েক সেকেন্ডে সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।
দক্ষিণ কোরিয়ার ভূমিকা কী এই প্রকল্পে?
দক্ষিণ কোরিয়া প্রাথমিকভাবে ৮০০-৯০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনা খরচে দিচ্ছে এবং ২৮ বছরের গ্রেস পিরিয়ড সুবিধা দিচ্ছে।
এই জরিপের ফলে নাগরিকদের কী সুবিধা হবে?
ভূমি মালিকানা যাচাই, অনলাইন তথ্যপ্রাপ্তি, স্বচ্ছতা ও মামলা কমবে।
জরিপ চলাকালীন কী করণীয়?
দলিল হালনাগাদ, তথ্য যাচাই এবং স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা।
এই উদ্যোগ ডিজিটাল বাংলাদেশের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
এই পদক্ষেপ ডিজিটাল বাংলাদেশের অংশ হিসেবে ভূমি প্রশাসনে স্বচ্ছতা ও আধুনিকতার প্রতীক।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।