গত ২১ নভেম্বর বাংলাদেশের ইতিহাসে ৫ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প পুরো দেশ কাঁপিয়ে দিয়েছে। মাত্র ৩২ ঘণ্টার মধ্যে আরও তিনটি হালকা কম্পন অনুভূত হয়, যার মাত্রা ছিল যথাক্রমে ৩ দশমিক ৩, ৩ দশমিক ৭ ও ৪ দশমিক ৩। সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয়, এই সব ভূমিকম্পই ঢাকা ও আশপাশে ঘটেছে। শুক্রবারের ভূমিকম্প নরসিংদীর মাধবদী থেকে এবং পরবর্তী কম্পনগুলো বাইপাইল, নরসিংদী ও ঢাকার বাড্ডা এলাকা থেকে এসেছে।

দেশের মধ্যে ভূমিকম্পের ক্রমবর্ধমান প্রকৃতি
শক্তিশালী ভূমিকম্প এখন শুধুমাত্র ভারত বা মিয়ানমার থেকে আসছে না, বরং বাংলাদেশেই এর উৎপত্তি হচ্ছে। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালে বাংলাদেশ ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় ৭৬টি ভূমিকম্প ঘটেছে। বিশেষজ্ঞরা ২১ নভেম্বরের নরসিংদীতে ভূমিকম্পকে ইন্ট্রাপ্লেট ইভেন্ট হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
ভূতাত্ত্বিক কারণ ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা
বাংলাদেশ ভারতীয় প্লেট, ইউরেশিয়ান প্লেট এবং বার্মা (মিয়ানমার) মাইক্রোপ্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থিত। জিপিএস পরিমাপ দেখাচ্ছে, দেশের ফল্টগুলো প্রতি বছর কয়েক মিলিমিটার সরতে থাকে, যা ভবিষ্যতে ভূমিকম্পের সম্ভাবনা বৃদ্ধি করছে।
বিশেষত সিলেট, ময়মনসিংহ, সুনামগঞ্জ (দৌকি ফল্ট), ঢাকা ও টাঙ্গাইল (মধুপুর ফল্ট), চট্টগ্রাম ও পার্শ্ববর্তী উপকূলীয় এলাকা (চট্টগ্রাম–মিয়ানমার ফল্ট) ঝুঁকিপূর্ণ।
মাটি ও শহরের অবকাঠামোর প্রভাব
ঢাকা মাটির ওপরে অবস্থিত, যা নরম এবং জলমগ্ন। এই ধরনের মাটি ভূমিকম্পের শক্তিকে বাড়িয়ে তোলে। অতিরিক্ত ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন কিছু এলাকায় লিকুইফ্যাকশন ঝুঁকি বাড়িয়েছে। ঢাকা শহরের ঘনত্ব, খারাপভাবে নির্মিত উচ্চতাবিশিষ্ট ভবন, সরু রাস্তাঘাট এবং কম খোলা স্থানও ঝুঁকি বৃদ্ধি করছে।
পর্যবেক্ষণ ও প্রস্তুতির অভাব
বাংলাদেশে ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণের যন্ত্রপাতি সীমিত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঠিকমতো পর্যবেক্ষণ এবং জনসচেতনতা তৈরি না হলে, বড় ভূমিকম্পে ব্যাপক ক্ষতি হবে। সম্প্রতি ভূমিকম্পে অনেক মানুষ নিরাপদ ব্যবস্থা সম্পর্কে অবহিত ছিল না।
অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত ক্ষতি
বিশেষজ্ঞদের মতে, বড় ভূমিকম্পের ক্ষেত্রে পরিবহন খাত, পানি ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং বিদ্যুৎ খাতে ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



