ছুটির দিনে তখন ঘুম থেকে উঠে দৈনন্দিন কাজে ব্যস্ত হতে শুরু করেছেন সবাই। অনেকেই সারা সপ্তাহের জমিয়ে রাখা প্রয়োজনীয় কাজ সম্পন্ন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। হঠাৎ করেই তীব্র ঝাকুনি। ভবন কাপা শুরু করল। চারপাশে মানুষের ভয়ার্ত চিৎকার। ঘটনাটি গত ২১ নভেম্বরের (শুক্রবার)। দেশে ৩০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাত হানে এদিন। এর উৎপত্তিস্থল ঢাকার কাছেই হওয়ায় তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে রাজধানীর বাসিন্দাদের মধ্যে।

ওইদিন সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে রিখটার স্কেলে ৫.৭ মাত্রার এ ভূমিকম্পে কাঁপে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল। এর উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদীর মাধবদী, যা ঢাকার মাত্র ২৫–৪০ কিলোমিটার দূরে। এরপর দুই সপ্তাহের ব্যবধানে ঢাকায় অন্তত ৭ দফা কম্পন অনুভূত হয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ৬টির উৎপত্তিস্থলই ছিল নরসিংদীতে। একই স্থান থেকে বারবার ভূমিকম্প উৎপত্তি হওয়াকে আফটারশক বললেন বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রুবাইয়াত কবির।
বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) সকালে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, দেশে একটি বড় ভূমিকম্প হওয়ার পর ছোট ছোট মৃদু অনেকগুলো ভূমিকম্প হয়েছে, এগুলো আমরা এখন পর্যন্ত আফটারশক হিসেবে দেখতে পেয়েছি।
আফটারশক হিসেবে আরও কেমন ভূমিকম্প হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে এমন তথ্য আপাতত নেই। তবে যেগুলো হয়েছে তা থেকে আমাদের গবেষণা বলছে সবগুলোই আফটারশক।
এদিকে গত ২১ নভেম্বর (শুক্রবার) সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে সর্বপ্রথম। এর উৎপত্তিস্থল: নরসিংদীর মাধবদী এটি ঢাকা থেকে প্রায় ২৫-৪০ কিমি দূরে। (এটিই ছিল সবচেয়ে বড় ভূমিকম্প)। পরে ২২ নভেম্বর (শনিবার) সকাল ১০টা ৩৬ মিনিটে ৩.৩ মাত্রার মৃদু ভূমিকম্প। উৎপত্তিস্থল: নরসিংদীর পলাশ। সন্ধ্যা ৬টা ৪ মিনিটে ৪.৩ মাত্রার ভূমিকম্প। উৎপত্তিস্থল: নরসিংদী থেকে ১১ কিমি পশ্চিমে (ইউএসজিএস) ৩.৭ মাত্রার (ইএমএসসি)।
একইদিন সন্ধ্যা ৬টা ৬ মিনিট ৫ সেকেন্ডে আরেকটি ভূমিকম্প হয়েছে এর উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদী। মোট (২১ ও ২২ নভেম্বর প্রায় ৩১ ঘণ্টার মধ্যে): ঢাকা ও এর আশপাশে চারবার ভূমিকম্প হয়। ২৭ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার): বিকেল ৪টা ১৫ মিনিট ২০ সেকেন্ডে ৩.৬ মাত্রার ভূমিকম্প। উৎপত্তিস্থল: নরসিংদীর ঘোড়াশাল। বিশেষজ্ঞের মতে, এই তারিখ পর্যন্ত গত শুক্রবার (২১ নভেম্বর) থেকে মোট ৬ দফায় ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে।
৪ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার): ভোর ৬টা ১৪ মিনিট ৪৫ সেকেন্ডে ৪.১ মাত্রার ভূমিকম্প। উৎপত্তিস্থল: নরসিংদীর শিবপুর। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ছোট ও মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পগুলো একটি বড় ভূমিকম্পের পূর্বাভাস। ভূতাত্ত্বিকরা দীর্ঘদিন ধরেই সতর্ক করে আসছেন যে বাংলাদেশে একটি সক্রিয় প্লেট সীমান্তে অবস্থান করছে, যেখানে যেকোনো সময় বড় ধরনের কম্পন ঘটতে পারে।
বিশেষজ্ঞ মত অনুযায়ী, বাংলাদেশে বড় ধরনের ভূমিকম্পের প্রধান উৎস দুটো। এর একটি হলো ‘ডাউকি ফল্ট’, যা ভারতের শিলং মালভূমির পাদদেশে বাংলাদেশের ময়মনসিংহ-জামালগঞ্জ-সিলেট অঞ্চলে বিস্তৃত যা প্রায় ৩৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ।
আরেকটি হলো- সিলেট থেকে চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, টেকনাফ পর্যন্ত যা সব মিলিয়ে ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা পর্যন্ত বিস্তৃত। এই উৎসটিকে খুব ভয়ংকর বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়াও গবেষণা অনুযায়ী, ঢাকার ভূমিকম্পে ভয়াবহ ক্ষতির ঝুঁকিতে থাকা ১৫টি এলাকা রয়েছে। সেইগুলো হলো: সবুজবাগ, কামরাঙ্গীরচর, হাজারীবাগ, কাফরুল, ইব্রাহিমপুর, কল্যাণপুর, গাবতলী, উত্তরা, সূত্রাপুর, শ্যামপুর, মানিকদী, মোহাম্মদপুর, পল্লবী, খিলগাঁও, বাড্ডা।
৩২টি এলাকার জরিপ:
ঢাকার দক্ষিণাঞ্চলে ঝুঁকি বেশি রাজধানীর ভূমিকম্প ঝুঁকি মূল্যায়নে মোট ৩২টি এলাকার ভৌত কাঠামো পর্যালোচনা করা হয়। এই জরিপে উত্তরা, গুলশান, ধানমন্ডি, তেজগাঁও, রমনা, শাহবাগ, আজিমপুর থেকে শুরু করে কামরাঙ্গীরচর, লালবাগ, সূত্রাপুর, শ্যামপুর, পল্লবী, কল্যাণপুর, মিরপুর, গাবতলী—ইত্যাদির মতো ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলগুলো অন্তর্ভুক্ত ছিল।
বিলম্ব হতে পারে বেগম খালেদা জিয়াকে বহন করতে যাওয়া এয়ার অ্যাম্বুলেন্স
জরিপের ফলাফলে দেখা যায়, কাঠামোগত দুর্বলতা এবং উদ্ধারকাজের সীমাবদ্ধতার কারণে ঢাকার দক্ষিণাঞ্চলের ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে বেশি। জরিপে দেখা গেছে, ঢাকা উত্তরাঞ্চলের কাফরুল, ইব্রাহিমপুর, কল্যাণপুর, মানিকদী ও গাবতলীসহ বেশ কিছু এলাকাও উচ্চ ঝুঁকির আওতায় রয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



