রাজধানী ঢাকা ও এর আশেপাশের এলাকায় শনিবার (২২ নভেম্বর) সন্ধ্যায় আবারও ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস জানিয়েছে, বাংলাদেশ সময় ৬টা ৬ মিনিটে এ ভূকম্পন অনুভূত হয়। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৪.৩। এর উৎপত্তিস্থল নরসিংদীতে, ভূপৃষ্ঠ থেকে ১০ কিলোমিটার গভীরে। এর আগে শনিবার সকাল ১০টা ৩৬ মিনিটেও একবার ভূমিকম্প অনুভূত হয়। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৩.৩। এর আগের দিন শুক্রবার (২১ নভেম্বর) দেশব্যাপী আরও একটি ভূমিকম্প অনুভূত হয়, যার মাত্রা ছিল ৫.৭।

বাংলাদেশে বড় ধরনের ভূমিকম্পের ঝুঁকি বহুদিন ধরেই বিশেষজ্ঞরা তুলে ধরছেন। ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের মতে, দেশে যেকোনো সময় ৭ বা তার বেশি মাত্রার ভূমিকম্পের সম্ভাবনা রয়েছে। ভূ-ত্বকীয় গঠন, ফল্ট লাইন ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের ভূমিকম্প ইতিহাস বিবেচনায় বাংলাদেশকে উচ্চ ঝুঁকির অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বারবার সতর্ক করে বলেছেন, নগরায়ণ ও অপরিকল্পিত ভবন নির্মাণের কারণে বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ হতে পারে ভয়াবহ।
এর আগে কয়েক মাস আগেই প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারে ৭ দশমিক ৭ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাত হানে। সে দেশে হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়, ধসে পড়ে বহু ভবন, ক্ষতিগ্রস্ত হয় গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো। মিয়ানমারের ওই ভূমিকম্পের প্রভাবে থাইল্যান্ডেও হতাহতের ঘটনা ঘটে; দালান, সেতু, রাস্তাঘাটেও দেখা দেয় ব্যাপক ক্ষতি। এ ধরনের বড় ভূমিকম্প দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ভূগঠন কতটা সক্রিয় হয়ে উঠেছে, তারও ইঙ্গিত দেয়।
ভূমিকম্প কখন হবে, তার আগে নিশ্চিতভাবে জানার কোনো নির্ভরযোগ্য প্রযুক্তি এখনো পৃথিবীতে নেই। অর্থাৎ যেকোনো সময়, যেকোনো মুহূর্তে ভূমিকম্প ঘটতে পারে। তাই ভূমিকম্পের ঝুঁকি মোকাবিলায় আগাম প্রস্তুতি ও সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ব্যক্তিগত প্রস্তুতি, ভবনের নিরাপত্তা, জরুরি উদ্ধার পরিকল্পনা—এসব বিষয় আগে থেকেই নিশ্চিত রাখা প্রয়োজন।
সেজন্য বিশেষজ্ঞরা সবাইকে সর্বদা সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।
পরিবারের সদস্যদের ভূমিকম্পের সময় করণীয় শেখানো, প্রয়োজনীয় জরুরি নম্বর হাতে রাখা, গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ নিরাপদ রাখা—এসব ব্যবস্থা জীবন রক্ষায় সহায়ক হতে পারে।
সব মিলিয়ে, ভূমিকম্প এমন একটি দুর্যোগ যা পূর্বাভাস দিয়ে আসে না। তাই আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হোন, নিরাপত্তা প্রস্তুতি নিন এবং আশপাশের মানুষকে সচেতন করুন—এটাই এখন সবচেয়ে জরুরি।
ভূমিকম্প হলে দ্রুত যা যা করবেন-
১. ভূমিকম্প টের পেলে বা খবর পেলে সঙ্গে সঙ্গে ফাঁকা স্থানে গিয়ে আশ্রয় নিন।
২. উঁচু ভবনে থাকলেও বের হতে না পারলে শক্ত কোনো খাম্বার নিচে অবস্থান নিন।
৩. মানসিকভাব অস্থির না হয়ে ধৈর্য ধরে পরিস্থিতি মোকাবেলা করুন।
৪. বহুতল ভবনে একই জায়গায় অনেক মানুষ একসঙ্গে না থেকে ভাগ হয়ে আশ্রয় নিন।
৫. মুঠোফোনে ফায়ার সার্ভিস ও দরকারি মোবাইল নম্বরগুলো আগের থেকেই রেখে দিন।
৬. দ্রুত নামার জন্য ভবন থেকে লাফিয়ে পড়বেন না।
৭. ভূমিকম্পের সময় সম্ভব হলে মাথার ওপর শক্তকরে বালিশ অথবা অন্য কোনো শক্ত বস্তু কাঠবোর্ড, নরম কাপড় চোপড়ের কুণ্ডলি ধরে রাখুন।
৮. গ্যাস ও বৈদ্যুতিক সংযোগ থেকে দূরে অবস্থান নিন।
৯. ভূমিকম্পের সময় উঁচু ভবন থেকে দ্রুত নামতে লিফট ব্যবহার করবেন না।
১০. এ সময় গাড়িতে থাকলে ফাঁকা স্থান বেছে নিন ও গাড়িতেই থাকুন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



