সাইফুল ইসলাম, মানিকগঞ্জ : মানিকগঞ্জের সদর উপজেলার জাগীর ইউনিয়নের জাগীর মেঘশিমুল এলাকায় ও সাটুরিয়া উপজেলার ধানকোড়া ইউনিয়নের বাহির কামতা এলাকায় ধলেশ্বরী নদীতে অবৈধভাবে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করছে কতিপয় বালু ব্যবসায়ীরা। এতে ভেঙ্গে পড়েছে শত শত বিঘা ফসলি জমি। হুমকির মুখে পড়েছে অসংখ্য বসতবাড়ি।
জানা গেছে, সদর উপজেলার মেঘশিমুল এলাকায় ও সাটুরিয়ার বাহির কামতা এলাকায় নদী খননের কাজের মেয়াদ প্রায় তিন মাস আগে শেষ হলেও সরকার দলীয় কিছু প্রভাবশানী নেতাকর্মীরা ধলেশ্বরী নদী থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ করেনি। সদর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মেঘশিমুল এলাকার এসব ড্রেজার ব্যবসায়ীদের বালু উত্তোলনে নিষেধ করলেও তারা অবৈধ ড্রেজার ব্যবসা অব্যাহত রেখেছে। প্রশাসনের কাছে জমিহারা অসহায় মানুষগুলো প্রায়ই ধরনা দিয়েও কোনো প্রতিকার পাচ্ছে না। অসহায় এ মানুষগুলোর দাবি, শিগগিরই ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হোক।
বাহির কামতা এলাকার কৃষক সাহেব আলী (ছদ্বনাম) জানান, অবৈধ ড্রেজার ব্যবসায়ীদের কারণে ধলেশ্বরী নদীর কিনারায় থাকা তার প্রায় ২০ শতাংশ জমি ভেঙ্গে পড়েছে। গত বছরও ওই জমিতে ভুট্টার আবাদ করে প্রায় ৩০ মণ ফলন পেয়েছিলেন তিনি।
ওই কৃষক বলেন, আমার যে জমি ভেঙ্গে গেছে তার দাম প্রায় ৬ লক্ষ টাকা। এসব কথা কাকে বলবো? দেশে কারো কাছে বিচার পাইনা। আল্লাহর কাছে ওইসব ভূমিদস্যুদের বিচার চাই।
মেঘশিমুল ও বাহির কামতা এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ধলেশ্বরী নদীতে ২০ থেকে ৩০ মিটার পর পর ড্রেজার বসিয়ে চলছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলেেনর হিড়িক। এসব বালু মোটা টাকার বিনিময়ে কিনে নিচ্ছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। বালু উত্তোলনের ফলে বহু কৃষকের শত শত বিঘা কৃষি জমি ভেঙ্গে গেছে। অসংখ্য বসত বাড়িও ভেঙ্গে পড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করছে এলাকাবাসী।
জাগীর মেঘশিমুল এলাকার এক গৃহবধু জানান, নদীতে যেভাবে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করছে তাতে যেকোন সময় আমাদের বাড়িঘর, জায়গা জমি নদীতে ভেঙ্গে পড়বে। এসব কথা কাকে বলবো? আমরা প্রতিবাদ করতে গেলেই আমাদের নানাভাবে ভয়-ভীতি দেখায়। তাই বাধ্য হয়ে চুপচাপ সহ্য করা ছাড়া কোন উপায় নাই।
নদীতে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলনের ফলে আশপাশের মানুষের ক্ষতি হচ্ছে কি’না জানতে চাইলে এক ড্রেজার শ্রমিক বলেন, ড্রেজারের কারণে মানুষের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। অনেকের জায়গা জমি ভেঙ্গে যাচ্ছে। আমরা কি করবো বলেন? আমরা তো এখানে শ্রমিকের কাজ করি। ব্যবসা করে নেতারা। তবে এখানে আমার জমি থাকলে আমি মাটি কাটতে দিতাম না। যেভাবেই হোক বাঁধা দিতাম।
ড্রেজার ব্যবসার সাথে জড়িত জেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক মো: হানিফ আলী বলেন, আমরা নদী খননের কাজ করছি। নদী খননের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ও ইউএনও অফিস এটা সরাসরি দেখভাল করেন। উনারা যদি চায় আজকে থেকে আর ড্রেজার চলবে না, তাহলে চলবে না।
আরেক ড্রেজার ব্যবসায়ী আদনান শরীফ বলেন, আমি মন্ত্রী মহোদয়ের কিছু সাইট দেখাশুনা করি। তবে ড্রেজারের বিষয়ে হানিফ চাচার সাথে কথা বলেন।
এ বিষয়ে মানিকগঞ্জ জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকোশলী সাইফুল ইসলাম বলেন, নদী খননের কাজ শেষ হয়ে গেছে। এদের কাছে আমরাও অপারগ হয়ে গেছি। কি করবো আর? খুব খারাপ অবস্থা। যাহোক আমি ইউএনও স্যারের সাথে কথা বলে দেখি মোবাইল কোর্ট চালায় কি’না।
অবৈধ ড্রেজারের বিষয়ে জানতে চাইলে সাটুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আরা বলেন, এই উপজেলায় আমি নতুন এসেছি। নদী খননের বিষয়ে আমি কিছু জানিনা। তবে কেউ অবৈধভাবে ড্রেজার বসালে আপনারা শক্ত করে নিউজ করেন, আমরা ব্যবস্থা নিব। তবে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন বলেন, কয়েকদিন আগে এসিল্যান্ডকে পাঠিয়েছিলাম। শীঘ্রই আমরা অভিযান পরিচালনা করবো।
লঞ্চে অগ্নিকাণ্ড: নদীতে ঝাঁপ দিয়ে প্রাণে বাঁচলেন একই পরিবারের ৩ জন
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।