জুমবাংলা ডেস্ক: ভোলা সদর উপজেলার চর আনন্দ পার্ট-৩ গ্রামে ১৬ একর জমিতে গড়ে উঠেছে আকতার ডেইরী ফার্ম। ২০১৪ সালে ২২টি গরু ও ২২টি ছাগল দিয়ে যাত্রা শুরু করে এই খামারটি। তারপর থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয় নি এই খামারের উদ্যোক্তা আকতার হোসেনকে।
দেশের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে শিখেছেন পশু লালনপালনের বিভিন্ন কৌশল। সেই কৌশলকে কাজে লাগিয়ে পশুদের গভীর ভালোবাসা ও পরম যত্নে লালনপালন করে আজ সফল এই উদ্যোক্তা। যত দিন যাচ্ছে এ খামারের পরিধি আরও বাড়ছে।
গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগী, কবুতর, মাছ, বিভিন্ন ধরনের ফল, সবজি চাষ করে লাখ লাখ টাকা আয় হচ্ছে এ খামার থেকে।
এ খামারের উদ্যোক্তা আকতার হোসেন বলেন, আমি ২০১৪ সালে ২২টি গরু ও ২২টি ছাগল নিয়ে এ খামার শুরু করি। এখন এ খামারে ২৫০-৩০০টি উন্নত জাতের গাভী, এক হাজারের বেশি বিভিন্ন জাতের কবুতর, ৬ হাজারের অধিক রয়েছে মুরগী। ৮টি পুকুরে চাষ করা হচ্ছে তেলাপিয়া, পাঙ্গাশসহ দেশিয় প্রজাতির বিভিন্ন ধরনের মাছ। এর পাশাপাশি রয়েছে এক হাজারের বেশি উন্নত জাতের আম গাছ। আম গাছগুলোর প্রতিটিতেই মুকুলে ছেয়ে আছে। রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে কলা ও পেঁপে গাছ। এছাড়া এ খামারে এবছর পেঁয়াজ ও হলুদের আবাদও করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, গবাদিপশুর জন্য এ খামারে প্রাকৃতিক উন্নত জাতের কাঁচা ঘাস চাষ করা হয়েছে। কাঁচা ঘাসের পাশাপাশি খড়, গমের ভূষি, গম, ভুট্টা ও সয়াবিন ভেঙে খাওয়ানো হয় খামারের গরুগুলোকে। কাঁচা ঘাস ও এ ধরনের প্রাকৃতিক খাবার সরবরাহ করার কারণে প্রতিদিন এই খামার থেকে প্রায় ৩ হাজার লিটার দুধ উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে। এ খামারের দুধের বেশ চাহিদা রয়েছে। এ খামারের দুধের স্বাদ নিতে হলে কমপক্ষে ২ দিন আগে অর্ডার দিয়ে রাখতে হয়। বিভিন্ন মিষ্টির দোকানে এ দুধ দিয়ে নিয়মিত তৈরি হচ্ছে মিষ্টি, ছানা, সন্দেশসহ নানা দুগ্ধজাত খাবার। এ খামারে প্রতি লিটার দুধ বাজারে ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি করা হয়। পাশাপাশি প্রতিবছর কবুতরের বাচ্চা, মুরগী ও মাছ, সবজি বিক্রি করে বেশ ভালো আছি।
খামারের মালিক আকতার হোসেন বেকার যুবকদের উদ্দেশ্য করে আরও বলেন, শিক্ষিত বেকার যুবক যারা চাকুরির পিছনে ছুটছেন, চাকুরির পেছনে না ছুটে তারা তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী স্বল্প পুঁজি নিয়ে এ ধরনের খামার ছোট পরিসরে গড়ে তুলতে পারেন। অন্যের মুখাপেক্ষী না হয়ে নিজের শক্তি সামর্থকে কাজে লাগিয়ে নিজেকে একজন দক্ষ উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে পারলে আর পেছন ফিরে তাকাতে হবে না। এতে দেশের অর্থনীতিতে ব্যপক প্রসার হবে।
এ খামারের শ্রমিক নাজিমুদ্দিনের সাথে বলেন, এখানে আমরা খামারের শুরু থেকেই রয়েছি। হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে নিজের খামারের মতো কাজ করে যাচ্ছি প্রতিনিয়ত। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত গবাদিপশু-পাখির প্রতিদিন খাবার খাওয়ানো থেকে শুরু করে গোসল করানো, খামারের ময়লা পরিষ্কার করা, দুধ দোহন ও তা বাজারজাত করাসহ নানা কাজে ব্যস্ত থাকতে হয় আমাদের। খামারের মালিক যেনো আরও লাভবান হয় সেই সকল বিষয় মাথায় রেখে একনিষ্ঠভাবে কাজ করে পরিবার-পরিজন নিয়ে ভালো আছি।
এদিকে কথা হয় এখানকার স্থানীয় আবুল হোসেন নামে এক ব্যক্তির সাথে। তিনি বলেন, এ খামারে ২০-২৫ জন শ্রমিক নিয়মিত কাজ করেন। খামারটি গড়ে ওঠায় এলাকার অনেক বেকার যুবক এখানে কর্মসংস্থান পেয়েছে। ২০-২৫টি পরিবারের রুটি-রুজি যোগান দেওয়ার পাশাপাশি এখানকার মানুষের আমিষের যোগান দিয়ে যাচ্ছে এ খামারটি।
ভোলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা দেবাশীষ কুমার কুন্ডু বলেন, এ খামারটি ভোলার মানুষের আমিষের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতেও ব্যপক ভূমিকা পালন করে আসছে। পাশাপাশি কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে এ খামারটিতে।
জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে যে কোনো প্রয়োজনে সহযোগিতার মধ্যে দিয়ে খামারটির পাশে থাকার কথা বলেন এই কর্মকর্তা।
আকতার হোসেনের মতো এমন সফল উদ্যোক্তা প্রতিটি ঘরে ঘরে গড়ে উঠলে দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখার পাশাপাশি অচিরেই দেশের বেকারত্ব সমস্যা নির্মূল করা সম্ভব বলে মনে করছেন এখানকার স্থানীয়রা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।