জুমবাংলা ডেস্ক : লন্ডনের কুইন্সম্যারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়েছেন তিনি। জীবনের প্রয়োজনে তিনি চাকরি খুঁজেননি। সুযোগ থাকলেও বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানের হাল ধরেননি। সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নিজেই কিছু করার। হতে চেয়েছেন ব্যতিক্রমী উদাহরণ। তারুণ্যের এগিয়ে যাওয়ার শক্তি। কর্মজীবন অনেকটা শুরু করেছেন ফুটপাতে ভ্রাম্যমাণ ভ্যানগাড়িতে বার্গার বিক্রির মাধ্যমে।
এখন তিনি চট্টগ্রামে প্রথম বিলাসবহুল পাঁচ তারকা রেস্টুরেন্ট রিগালো’র মালিক। তিনি চট্টগ্রামের তারুণ্যের আইকন আবরার হোসাইন। আবরার নিভৃতে থেকেই নিজের কাজটি করছেন। অত্যন্ত প্রচার বিমুখ এই তরুণ আড়ালে থাকতে পছন্দ করলেও তার ব্যতিক্রমধর্মী অত্যাধুনিক রেস্টুরেন্টটিই এখন তাকে আলোয় নিয়ে এসেছে।
আবরার হোসাইন এবং ব্যতিক্রম স্বপ্ন: সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছেন আবরার হোসেন। বাবা মোহাম্মদ নুরুল আলম চট্টগ্রামের প্রতিষ্ঠিত এমইবি টেক্সটাইলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। মা নেজাদ সুলতানা গৃহিণী। তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার বড় আবরার হোসেন ব্যক্তিগত জীবনে এখনো অবিবাহিত। স্বপ্ন দেখেন আবরার। স্বপ্ন বাস্তবায়নে যুদ্ধ করতে ভালোবাসেন। যে কোন বাধা থেকে শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সিঁড়ি খুঁজে নেন।
পারিবারিক উত্তরাধিকার সূত্রে বড় শিল্পগ্রুপের মালিক আবারের পরিবার। তাদের একাধিক বড় বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানে কয়েক হাজার কর্মচারী-কর্মকর্তা কাজ করেন। আলাপকালে আবরার হোসাইন জানান, সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্ম নিলেও উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সোনার থালায় বিলাসী খাবার খাবো এই চিন্তা কখনো করিনি।
খুব ছোটবেলা থেকেই নিজেই কিছু করার স্বপ্ন ও চেষ্টা দুটোই এক সঙ্গে কাজ করেছে। আমি লন্ডনে পড়ালেখা করি। লন্ডনের কুইন্সম্যারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজনেস অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করে দেশে ফিরে আসি ২০১৩ সালে।
দেশে ফিরে পারিবারিক শিল্প প্রতিষ্ঠানের হাল ধরার কথা থাকলেও আমি নিজে কিছু করার চেষ্টা ও স্বপ্ন থেকে পিছু হটিনি। দেশে ফিরে শুধুমাত্র কাজ শেখার প্রয়োজনে ঢাকায় গ্রামীণফোনে ৭ মাস ইন্টার্নিশীপ করি। এরপর ফিরে আসি চট্টগ্রামে।
নিজ জন্মস্থানে ফিরে নিজেই এককভাবে ব্যবসা শুরু করার পরিকল্পনা মাথার মধ্যে ঘুরতে থাকে। লন্ডনে পড়লেখা করার সময় রেস্টুরেন্ট বা ভালো ফিউশন খাবারের বিজনেসটি আমার মাথার মধ্যে ঢুকে গিয়েছিল। মস্তিষ্ক প্রসূত সেই চিন্তা থেকেই নিজের সঞ্চিত টাকা দিয়েই ভ্রাম্যমাণ ভ্যানগাড়িতে বার্গার বিক্রি শুরু করি। এই শুরুটা ২০১৪ সালের শেষের দিকে। আবরারের ভ্যানগাড়িতে বার্গার বিক্রির এই ভ্রাম্যমাণ দোকানের নাম দেন ‘বুম টাউন’।
আবরার জানান, আমি প্রতিদিন বাসা থেকে ভ্যান টেনে চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমির সামনে আসতাম। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত শিল্পকলার সামনে নিজেই বার্গার তৈরি করে বিক্রি করতাম। অল্পদিনের মধ্যেই ‘বুম টাউন’ ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। মাত্র ৮ মাস ব্যাবসা করেই রীতিমত নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে যায়।
‘বুম টাউন থেকে বুটিক রেস্টুরেন্ট রিগালো’: আবরার হোসেনের গল্পটা ঠিক যেনো স্বপ্নের মতো। আবরার হোসাইন বলেন, চট্টগ্রামে বড় কিছু, স্বপ্নের মতো আধুনিক ভিন্নধর্মী কিছু করার ইচ্ছেটা আমার রক্তের মধ্যেই ঢুকে গিয়েছিল। আমি আমার স্বপ্ন থেকে পিছু হটিনি কখনো। বার্গার বিক্রি করতে করতেই শিল্পকলার কাছেই নগরীর দামপাড়া ওয়াসা মোড় এলাকায় রেস্টুরেন্ট করার মতো একটি জায়গা পেয়ে যায়।
কিন্তু সবার মতো গতানুগতিক খাবারের রেস্টুরেন্ট করার কথা আমার মাথায় আসেনি। আমি চিন্তা করেছি চট্টগ্রামবাসীকে নতুন কিছু দেখাতে। চট্টগ্রামে বসে আন্তর্জাতিক মানের খাবারের স্বাদ দিতে। সেই স্বপ্ন স্বাদ থেকেই ২০১৫ সালের শেষের দিকে ওয়াসার মোড়ে প্রথম অত্যাধুনিক ও আন্তর্জাতিকমানের রেস্টুরেন্ট প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু করি। কয়েকজন বন্ধুর সহায়তা নিয়ে ‘রিগালো’ প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু হয় ২০১৫ সালের অক্টোবর মাসে।
‘রিগালো’ একটি স্প্রেনিশ শব্দ। যার অর্থ উপহার। আমি চট্টগ্রামবাসীকে নতুন কিছু উপহার দিতেই ‘রিগালো’ প্রতিষ্ঠা করি। ২০১৬ সালের এপ্রিলে চট্টগ্রামের প্রথম পাঁচ তারকা মানে ম্যাক্সিকান, আমেরিকান, চাইনিজ ফিউশন ফুডের ব্যতিক্রমী আয়োজন নিয়ে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে রিগালো। এর আগে ২০১৫ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৬ সালের এপ্রিল পর্যন্ত রিগালো’র নিয়োগকৃত কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।
কেন ব্যতিক্রম ‘রিগালো’?: ‘রিগালো’র স্বপ্নদ্রষ্ঠা আবরার হোসাইন জানান, চট্টগ্রামে ‘রিগালো’ একমাত্র রেস্টুরেন্ট যে রেস্টুরেন্টের খাবারে প্রকৃত অর্থেই আন্তর্জাতিক স্বাদ মিলবে। এখানে ম্যাক্সিকান খাবার তৈরির জন্য ম্যাক্সিকো থেকেই খাবারের উপকরণ সংগ্রহ করা হয়। একইভাবে আমেরিকান এবং চাইনিজ খাবারের জন্য সেসব দেশ থেকেই খাবারের উপকরণ আমদানি করা হয়। রেস্টুরেন্টেই রয়েছে ফিউশন খাবারের আয়োজনও।
আবরার বলেন, আমরা এমনভাবে খাবার তৈরি করি একজন ভোজন রসিক মানুষ যখন আমেরিকায় বসে যে খাবার খেয়েছেন সেই একই খাবার ‘রিগালো’তে বসে খেলে কোনো ভিন্নতা বুঝবেন না। ‘রিগালো’ এবং আবরারের স্বপ্নযাত্রা: আলাপকালে আবরার হোসেন জানান, বার্গার বিক্রি থেকে শুরু করে আমি ‘রিগালো’ প্রতিষ্ঠা করলেও আমি কখনো মালিক বা কর্তা সেজে বসে থাকি না। এই রেস্টুরেন্টের টেবিল পরিষ্কার থেকে শুরু করে কিচেনে শেফকে সহায়তার কাজে অংশ নেই। প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত আমি নিজেই অন্যান্য কর্মীদের সঙ্গে রেস্টুরেন্টে কাজ করি।
রেস্টুরেন্টে পেশাদার রেস্টুরেন্টকর্মীর পাশাপাশি কাজ করেন ভারত, নেপাল, ভিয়েতনামের কর্মীরা। সব কর্মীই তাদের নির্ধারিত কাজের পাশাপাশি ক্লিনিং-এর কাজও করেন। আমি নিজেও রেস্টুরেন্ট মব করে পরিস্কার করি। এই রেস্টুরেন্টে সব কর্মীকেই সব কাজ করতে হয়।
স্বপ্নের সেই ‘বুম টাউন’: আবরার হোসেন ‘বুম টাউন’ থেকে শুরু করলেও সেই ‘বুম টাউন’ ভ্যানটিকে ভুলে যাননি। আবরারের ‘বুম টাউন‘ এখন শিল্পকলার সামনেই স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ‘বুম টাউন ক্যাফে’ নামে। শিল্পকলার আড্ডায় আবরারের ‘বুম টাউন’ এখনো জমজমাট থাকে প্রতিদিন, প্রতিরাত। ভিন্নধর্মী নানা খাবার পরিবেশ করে দিন দিন আরও জনপ্রিয়তা পাচ্ছে বুম টাউন ক্যাফে। তথ্যসূত্র: জাগো নিউজ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।