স্পোর্টস ডেস্ক: আসন্ন নারী টি-২০ বিশ্বকাপের বাছাইপর্বের জন্য এরই মধ্যে দল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। দলে প্রথমবারের মতো ডাক পেয়েছেন ডানহাতি মিডিয়াম পেসার মারুফা আক্তার।
ক্রিকেটার হতে চাওয়া মারুফার স্বপ্ন যেন বাস্তবে রুপ নিল। ছোট্ট জীবনের প্রতিটি স্তরে এতটা ধাক্কা খেয়েছেন যে, নিজের স্বপ্ন ধুলিস্যাৎ করে বাবার সঙ্গে হালচাষ করতে তাকে জমিতেও নামতে হয়েছিল। পরিবারের আর্থিক দুর্দশার কারণে ক্ষেতে কাজও করতে হয়েছে মারুফাকে।
নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার প্রত্যন্ত ঢেলাপীর এলাকার দরিদ্র কৃষক আইমুল্লাহর ছোট মেয়ে মারুফা আক্তার। ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেটের প্রতি ভালো লাগা তাঁর। প্রথম দিকে ছেলেদের সঙ্গেই খেলতেন। পরে বিকেএসপিতে প্রশিক্ষণের সুযোগ পান। খেলেছেন বিভিন্ন ক্লাব ও দলে। ২০২১ সালে করোনাকালে ক্রিকেট খেলা বন্ধ থাকায় বাবা আলিমুল্লার সঙ্গে বর্গা জমিতে মই টানার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে আলোচনায় আসেন মারুফা।
অভাব-অনটনের সংসারে দুবেলা ডাল-ভাত খেয়ে বেঁচে থাকার জন্য যেখানে সংগ্রাম করতে হয়, সেখানে ক্রিকেট খেলা বিলাসিতা মনে হয়েছিল সেই সময়ে মারুফার। তাই করোনার সময়ে পারিবারিক দুরবস্থায় ক্রিকেট থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার কথাও ভেবেছিলেন। তবে এগিয়ে আসে বিসিবি। মারুফা ফিরে যান আগের ঠিকানা বিকেএসপিতে। বছর না পেরোতেই ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিক নৈপুণ্য দেখিয়ে ১৯ বছর বয়সেই ডাক পেলেন জাতীয় দলে।
সবার প্রচেষ্টায় ধারাবাহিক পারফরম্যান্সে সেই মারুফাই আজ বিশ্বমঞ্চে খেলার দোরগোড়ায়। কিছুদিন পরই বাংলাদেশ টি-২০ বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে দলের হয়ে খেলবেন তিনি।
ডানহাতি পেসার মারুফা মেয়েদের সবশেষ ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ ও জাতীয় ক্রিকেট লিগে দারুণ বোলিংয়ের পুরস্কার পেয়েছেন। প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ জাতীয় দলে ডাক পেয়েছেন তিনি।
নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার কৃষক বাবার সন্তান মারুফা দলে ডাক পাওয়ার পর আনন্দে আত্মহারা। চিরকালীন অভাব-অনটনের ঘরে আলো ফুটিয়েছেন মারুফা। ক্রিকেট তার জীবনে এনেছে অনাবিল আনন্দ।
জাতীয় দলে ডাক পেয়ে মারুফা জানান, ‘আসলে ক্রিকেট না খেললে কিছুই পেতাম না জীবনে। এ ক্রিকেটটাই এখন আমাদের পরিবারে সুখ এনে দিয়েছে। আমাকে আরও অনেক কষ্ট করতে হবে। জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছি। চেষ্টা করতে হবে যেন দেশের হয়ে ভালো কিছু করতে পারি।
ভালো খেলার জন্য মারুফা সবার কাছে দোয়া চেয়ে বলেন, ‘সবার দোয়ায় দেখবেন আমি অনেক উপরে উঠবো। তাই সবার কাছে দোয়া চাই’
ঢাকা লিগে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি ছিলেন মারুফা। বিকেএসপির হয়ে ১১ ম্যাচে ওভারপ্রতি ৩.২১ রান দিয়ে ২৩ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। পেয়েছিলেন টুর্নামেন্টের ‘বেস্ট প্রমিজিং প্লেয়ার’- এর পুরস্কার।
এরপর জাতীয় দলের ক্যাম্পে ডাক পড়ে তার। সেখান থেকে জাতীয় ক্রিকেট লিগেও আলো ছড়ান। সিলেটের হয়ে ৭ ম্যাচে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৩ উইকেট পান। বোলিংয়ে ধার থাকায় তাকে জাতীয় দলের ভবিষ্যৎ বলে বিবেচনা করা হচ্ছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।