মহাকাশজুড়ে মহাজাগতিক বিকিরণ ছড়িয়ে আছে। মঙ্গলে যেতে চাইলে পথে এই তেজস্ক্রিয় বিকিরণের মুখে তো পড়তেই হবে। পৃথিবীর চুম্বকক্ষেত্র না হয় পৃথিবীর ভেতরে আমাদের রক্ষা করে এসব বিকিরণ থেকে, আসা-যাওয়ার পথে তো আর ওরকম কোনো ঢাল নেই। তবে এটা আসলে অত বড় সমস্যা নয়।
নাসার কিউরিওসিটি রোভার মঙ্গলে যাওয়ার পথে হিসেব কষে দেখেছে, একবার যেতে বাড়তি কেবল ০.৩ সিভার্ট বিকিরণের মুখে পড়তে হবে। এটা ক্ষতিকর অবশ্যই—যেকোনো নিউক্লিয়ার বিদ্যুৎকেন্দ্রের কর্মীদের বার্ষিক তেজস্ক্রিয়তা সীমার ১৫ গুণ। তবে প্রাণঘাতী নয়। ১ সিভার্ট তেজস্ক্রিয়তা ক্যানসারের ঝুঁকি ৫.৫ গুণ বাড়িয়ে দেয়। ৮ সিভার্ট তেজস্ক্রিয়তায় মৃত্যু হয় মানুষের। আর নিরাপত্তা স্যুটসহ অন্যান্য ব্যবস্থা তো থাকবেই এই বিকিরণের ক্ষতি কমাতে।
তবে এ ক্ষেত্রে বড় সমস্যা করতে পারে সৌরঝড়। যাত্রাপথে হঠাৎ যদি ফুঁসে ওঠে সূর্য, সৌরঝড় আঘাত করে নভোযানে, তাহলে নভোচারীরা বড় ক্ষতির মুখে পড়তে পারেন। মারাও যেতে পারেন। সবচেয়ে বড় সমস্যা, এসব সৌরঝড় কখন হবে, তা আগে থেকে অনুমান করা যায় না। তবু বিজ্ঞানীরা যথাযথভাবে পর্যবেক্ষণ করে নভোচারীদের কিছুক্ষণ আগে হলেও যেন সতর্ক করতে পারেন, সে ব্যবস্থা হয়তো নিতে পারবেন। এটা জরুরিও।
কারণ, অনেক সময় নভোচারীরা নভোযানের ত্রুটি সারাতে বেরিয়ে আসেন যান ছেড়ে। এর নাম স্পেসওয়াক। এরকম সময়ে কোনো নভোচারী যেন তেজস্ক্রিয় সৌরঝড়ের মুখে না পড়েন, সে জন্য তাঁদের সতর্ক তো করতেই হবে।
এই সমস্যা থেকে নিরাপদে মঙ্গলে পৌঁছালেও মুক্তি নেই সহসা। কারণ, মঙ্গলে কোনো ওজন স্তর নেই, চৌম্বকক্ষেত্রও দুর্বল। ফলে মঙ্গলপৃষ্ঠে থাকলে মহাজাগতিক বিকিরণ ও অতিবেগুনি রশ্মির ফলে প্রতি ৫০০ দিনে ০.৩ সিভার্ট তেজস্ক্রিয় বিকিরণের মুখে পড়তে হবে। এটাও জানা গেছে কিউরিওসিটির সূত্রে। তাই মনে হয়, মঙ্গলে গেলেও বেশির ভাগ সময় থাকতে হবে ইনডোরে, মানে ঘরের ভেতরে। কিংবা হয়তো থাকতে হবে মাটির নিচে।
ধরুন, উৎক্ষেপণের পর ৬ মাস ভ্রমণ শেষে লাল গ্রহের দ্বারপ্রান্তে আপনি। ইলন মাস্কের পরিকল্পনা অনুসারে, এ সময় নভোযান ছুটবে ঘণ্টায় ৬২ হাজার মাইল বেগে। ঠিকভাবে নামতে তাই ব্যবহার করতে হবে সুপারসনিক রেট্রো প্রোপালশন—মানে অনেকগুলো ছোট ছোট রকেট একসঙ্গে চালু হয়ে যাবে, ঊর্ধ্বমুখী ধাক্কা দিয়ে ধীরে ধীরে কমিয়ে আনবে বেগ, নিম্নমুখী বেগে নামিয়ে নিতে থাকবে লাল গ্রহের দিকে।
সমস্যা হলো, মঙ্গলের বায়ুমণ্ডল অনেক পাতলা। নভোযানের গতি কমানোর জন্য নিতান্ত কম। অথচ ওই ঘর্ষণে তাপমাত্রা বেড়ে দাঁড়াবে ১ হাজার ৭০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো। এরকম অবস্থায় কিউরিওসিটির মতো ১ টনের রোভার নামাতেই খবর হয়ে গেছে প্রকৌশলীদের। ওদিকে ইলন মাস্ক বলছেন ৪৫০ টনের ভার নামাবেন। কাজেই সিটবেল্ট ভালো করে বেঁধে বসতে হবে। কখন কী ঘটে, কিচ্ছু বলা যায় না!
![](https://inews.zoombangla.com/wp-content/uploads/2024/12/2-39.jpg)
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।