পৃথিবীর পাশাপাশি মঙ্গলের ছবি রাখলে সহজেই বুঝতে পারবেন, কোনটা কোন গ্রহ। রং দেখেই আলাদা করা যায়। পৃথিবীর রং মনোরম নীল, আর মঙ্গল দেখতে মরিচা পড়া লালচে বাদামি। শুধু বাইরে থেকে নয়, মঙ্গলের বুকে দাঁড়িয়েও রঙের ফারাক ভালোভাবেই বোঝা যায়। না, মঙ্গলে এখনও কোনো মানুষ যায়নি। স্বচক্ষে দেখার ভাগ্য তাই এখনও হয়নি কারো। কিন্তু মানুষ তার জ্ঞান কাজে লাগিয়ে অনেক আগেই মঙ্গলের বুকে পাঠিয়েছে রোবোটিক যান।
পার্সিভিয়ারেন্স, কিউরিওসিটি, স্পিরিট, অপরচুনেটি, ইনসাইট—একাধিক রোবোটিক যানের চোখে মানুষ দেখেছে মঙলের নানা দৃশ্য। দেখেছে মঙ্গলের সূর্যাস্ত। সেখানে সূর্যাস্তের সময় দিগন্ত লালিমায় ভরে ওঠে না। সূর্য সেখানে ধোঁয়াটে নীলচে আলো ছড়িয়ে দিগন্তে হারিয়ে যায় দিনের শেষে। কিন্তু কেন এমন হয়?
কারণটা সহজ, পৃথিবীতে যে কারণে নীল আকাশ বা লালচে গোধূলি দেখা যায়, মঙ্গলের বিষয়টাও তাই। মূলনীতি একই, অর্থাৎ বায়ুমণ্ডলের কণায় আলোর বিক্ষেপণ। সূর্যের সাদা আলো আসলে সব রঙের মিশ্রণ। কথা হলো, রং কী? রং আসলে তরঙ্গদৈর্ঘ্যের ভিন্নতা ছাড়া আর কিছু নয়। অর্থাৎ সাদা হলো বিভিন্ন দৈর্ঘ্যের তরঙ্গের আলোর মিশ্রণ। কোনো বস্তুর ওপরে সাদা আলো এসে পড়লে বস্তুটা সবটা আলো শোষণ বা প্রতিফলন করে না।
বরং কিছুটা শোষণ করে, আর কিছুটা প্রতিফলন। শোষণ করার পর বস্তু যে তরঙ্গদৈর্ঘ্যে আলো প্রতিফলন করে, সেটাকেই আমরা রং হিসাবে দেখি। আরেকটু ভেঙে বলি। প্রতিটি পদার্থের অণু শুধু নির্দিষ্ট তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলোর সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ায় জড়ায়। নির্দিষ্ট তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলোই এতে বিক্ষিপ্ত হয়। ফলে দেখা যায় নির্দিষ্ট তরঙ্গের আলোর বর্ণালি। তাই বিভিন্ন বস্তুকে আমরা বিভিন্ন রঙে দেখি। কারণ, বস্তু তো আসলে কণার সমষ্টি।
এবারে মঙ্গলের বায়ুমণ্ডলের কথা বলি। গঠন উপাদান আর ঘনত্ব—দুদিক থেকেই মঙ্গলের বায়ুমণ্ডল পৃথিবীর চেয়ে ভিন্ন। সত্যি বলতে, মঙ্গলের বায়ুমণ্ডল ভীষণ পাতলা। এর বায়ুচাপ পৃথিবীর ১০০ ভাগের একভাগ। মঙ্গলপৃষ্ঠের বায়ুচাপ অনুভব করতে চাইলে পৃথিবীতে সমুদ্রপৃষ্টের প্রায় ৩০ কিলোমিটার ওপরে উঠতে হবে। গ্রহটির বায়ুমণ্ডল পৃথিবীর মতো অক্সিজেন ও নাইট্রোজেন সমৃদ্ধ নয়। এর বেশিরভাগ উপাদান কার্বন ডাই-অক্সাইড ও সূক্ষ্ম ধূলিকণা।
এসব ধূলিকণার কারণে আকাশ লালচে রং ধারণ করে। অর্থাৎ লাল আলোর বিক্ষেপণ ঘটে। নীল আলো প্রবেশ করে বায়ুমণ্ডল ভেদ করে। পৃথিবীতে ঘটনাটা একটু ভিন্নভাবে ঘটে। নীল আলো বাতাসের কণার সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে বিচ্ছুরিত হয়। এ জন্যই আকাশ নীল দেখায়। পাশাপাশি সূর্যোদয় বা গোধূলীর সময় রাজত্ব করে লম্বা তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো বা লাল আলো।
সূর্য দিগন্তে থাকলে আলোর তরঙ্গকে তুলনামূলক দীর্ঘ পথ ভ্রমণ করতে হয়। ফলে আলোর বিক্ষেপণ হয় বেশি। যে তরঙ্গদৈর্ঘ্য এই লম্বা পথে টিকে থাকে, সেটাকেই আমরা দেখি দিগন্তজুড়ে। তা ছাড়া গ্রহ দুটির বায়ুমণ্ডলের মূল উপাদানও ভিন্ন। ফলে, বদলে যায় আলোর রং। নীল আকাশকে দেখায় লাল। লালচে গোধূলি দেখায় সাদাটে নীলাভ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।