যুবায়ের আহমেদ, ডয়চে ভেলে: মশা মারতে কামান দাগাতে হবে এখনই৷ ডেঙ্গু-চিকনগুনিয়া বা মশাবাহিত অন্য রোগে আর মানুষের মৃত্যু দেখতে চাই না৷ প্রিয়জনেরা হাসপাতালে দিনের পর দিন কাঁতরাবে তাও দেখতে চাই না৷
‘গোল্ডফিশ’ দেখতে খুব সুন্দর একটা মাছ৷ এত রূপের মাঝেও কলঙ্ক খুঁজে পেলেন কেউ কেউ৷ বললেন, গোল্ডফিশের স্মৃতি থাকে মাত্র তিন সেকেন্ড৷ এই অপবাদ বয়ে আজও চলতে হয় তাকে৷ অথচ বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন, কোনো ঘটনা কমপক্ষে পাঁচ মাস মনে রাখে সোনারঙের মাছগুলো৷তাই এই অপবাদ নিতান্তই অমানবিক৷
তবে তারচেয়েও বড় অমানবিক হলো মানুষকে এই গোল্ডফিশের সঙ্গে তুলনা করা৷ কিন্তু পৃথিবীজুড়ে একের পর এক ঘটনা ঘটতে থাকলে কারো আসলে সব মনে রাখা কঠিন৷ আবার সব মনে না রাখলেও সুখি থাকা যায়৷ কিন্তু সব সুখ ভালো নয়৷ তাই এই গেল বছরও যেভাবে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা গেল, তা ভুলে যাওয়া একেবারে চলবে না৷
স্থানীয় পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসেব বলছে, ২০১৯ সালে মে মাসে হঠাৎ করে বেড়ে যায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা৷ পরে ডিসেম্বর পর্যন্ত গোটা বছরে এক লাখের বেশি রোগী ভর্তি হয়৷ তবে আগষ্টে আক্রান্ত হয় সবচেয়ে বেশি৷ গেল বছর মোট ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় ১৫৬৷ এ বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৪৮ জন৷ ২০১৯-এই প্রথম সারাদেশের সবগুলো জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে৷
রোববার ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন একটি মতবিনিময় অনুষ্ঠান আয়োজন করে৷ সেখানে যারা এ বিষয়ের বিশেষজ্ঞ তারা একরকম সতর্কবাণীই দিলেন৷ সেখানে কীটতত্ত্ববিদ মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, অনেকে যেমন ভাবছেন পরপর দুই বছর ডেঙ্গুর বড় ধরনের প্রকোপ হওয়ার আশঙ্কা কম, তা যথেষ্ট বিজ্ঞানভিত্তিক নয়৷ কোরবানির ঈদের সময় এ বছরও ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেয়ার আশঙ্কার কথা বলেন তিনি (প্রথম আলো, ০৬ জানুয়ারি, ২০২০)৷
অনুষ্ঠানে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোমিনুর রহমান বলেছেন, এ বছর এরই মধ্যে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু হয়ে গেছে৷ এটি খুবই আশার কথা৷ এই কাজ যেন আরো জোরদার হয় এবং বলবৎ থাকে৷ শুধু উত্তর নয়, দক্ষিণ সিটিতেও কাজ চালাতে হবে, সঙ্গে পুরো দেশে৷ গত বছর ঢাকার বাইরে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিলেন৷
আর সরকারকে প্রয়োজনে এক্ষেত্রে বাজেট বাড়াতে হবে৷ এভাবে শুধু মশার কামড় খেয়ে মানুষ মারা যাবেন, তা মেনে নেয়া যায় না৷ শুধু সিটি করপোরেশন বা নগর কর্তৃপক্ষ নন, গণপূর্ত বিভাগ, আবহাাওয়া অধিদপ্তর কিংবা আইন প্রয়োগকারী অন্যান্য সংস্থাগুলোকেও সহযোগিতা করতে হবে৷ গ্রামাঞ্চলেও সচেতনতা ও সেবার পরিধি বাড়াতে হবে৷
আর জনগণকেও এগিয়ে আসতে হবে৷ আপনার চারপাশে যদি এডিস মশার বংশবৃদ্ধির পরিবেশ থাকে, তাহলে পরিষ্কার করুন৷ অথবা নিজে না পারলে কর্তৃপক্ষকে জানান এবং তাগিদ দিন৷ সবার সমন্বিত অংশগ্রহণই পারে ডেঙ্গুর মতো রোগ থেকে বাঁচাতে৷
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।