মহাজাগতিক মই ও হাবল টেনশন: দূরত্ব পরিমাপে নতুন পদ্ধতি

হাবল টেনশন

আমাদের পরিচিত পদার্থ ও শক্তি দিয়ে মহাবিশ্বের মাত্র ৫ শতাংশ ব্যাখ্যা করা যায়, বাকি ২৭ শতাংশ ডার্ক ম্যাটার ও ৬৮ শতাংশ ডার্ক এনার্জি। এই ডার্ক এনার্জির প্রভাব, অর্থাৎ মহাবিশ্বের ত্বরণ মাপতে হলে হাবল ধ্রুবকের মান আরও সূক্ষ্মভাবে নির্ণয় করতে হবে। কলোকুয়ামের দ্বিতীয়ার্ধে তিনি শুধু হাবল ধ্রুবক পরিমাপ নিয়ে কথা বলেন।

হাবল টেনশন

হাবল ধ্রুবক মাপতে হলে অনেক গ্যালাক্সির বেগ ও দূরত্ব জানা প্রয়োজন, যেহেতু এই দুইয়ের অনুপাতই হাবল ধ্রুবক। তাই প্রথমে দূরত্ব মাপার বিভিন্ন পদ্ধতি নিয়ে কথা বলেন তিনি। ছোট ছোট দূরত্বের তথ্য ব্যবহার করে বড় থেকে ক্রমাগত আরও বড় দূরত্ব মাপার সিস্টেমকে বলা হয় কসমিক ডিস্টেন্স ল্যাডার বা মহাজাগতিক মই। মইয়ের এক ধাপে পা রাখলে যেমন পরের ধাপে ওঠা যায়, তেমনি এই ল্যাডারের ছোট দূরত্ব আগে মাপতে পারলে ক্রমান্বয়ে বড় দূরত্বের হিসাবে যাওয়া যায়। সূর্যের চারদিকে পৃথিবীর আবর্তনের কারণে তৈরি প্যারালাক্স দিয়ে শুরু করে তিনি।

বাইনারি সিস্টেমের দুটি তারার একটি আগে মারা গিয়ে হোয়াইট ডোয়ার্ফ বা সাদা বামন নক্ষত্রে পরিণত হলে, তার সঙ্গী যখন রেড জায়ান্ট হয় বা লাল দানব তারা হয়, তখন জায়ান্ট থেকে ডোয়ার্ফে গ্যাস প্রবাহিত হয় এবং ডোয়ার্ফের ভর বাড়তে থাকে। এর ভর চন্দ্রশেখর সীমার (সূর্যের ভরের ১.৪ গুণ) চেয়ে বেশি হয়ে গেলে ডোয়ার্ফটি বিস্ফোরিত হয়।

হাবল টেনশন দূর করার জন্যই সুপারনোভার সারফেস ব্রাইটনেস ফ্লাকচুয়েশন (এসবিএফ) দিয়ে দূরত্ব মাপার প্রয়োজনীয়তা বেড়ে যায়। কার্নেগি সুপারনোভা প্রজেক্টের উদ্দেশ্য ১-এ টাইপের সুপারনোভার একটি স্যাম্পল ব্যবহার করে ভিন্ন ভিন্ন কম্পাঙ্ক-ব্যান্ডে হাবল ধ্রুবকের মান বের করা। বিখ্যাত অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নালে গত বছর, অর্থাৎ ২০২৪ সালের জুলাই মাসে প্রকাশিত এই প্রজেক্টের প্রথম পেপারে লিড-অথর বা নেতৃত্বে ছিলেন আশরাফ উদ্দিন। এতে চিলির লাস কাম্পানাস অবজারভেটরির তিনটি দুরবিনের (১-মিটার সুওপ, ২.৫-মি ডু-পন্ট, ৬.৫-মি ম্যাগেলান) ডেটা ব্যবহার করা হয়েছে। নয়টি ভিন্ন ভিন্ন কম্পাঙ্ক-ব্যান্ডে করা হয়েছে পর্যবেক্ষণ।

কার্নেগি প্রজেক্টের সুপারনোভাগুলোর মাধ্যমে মহাবিশ্বের প্রসারণের ইতিহাস অনুসন্ধান করা হয়েছে প্রায় ১৮০ কোটি আলোকবর্ষ পর্যন্ত। দৃশ্যমান আলোর ছয়টি ব্যান্ড ও অবলোহিত আলোর তিনটি ব্যান্ডে হাবল ধ্রুবকের মান হিসাব করার পর দেখা গেছে, দুই তরঙ্গদৈর্ঘ্যে ধ্রুবকটির মান আলাদা। এর কারণ এখনও অজানা। আরও নিখুঁত পরিমাপের জন্য আশরাফ উদ্দিন সেফিড ভ্যারিয়েবল বা শেফালি বিষম তারা, রেড জায়ান্ট বা লাল দানব তারা ও সুপারনোভা—তিন পদ্ধতি আলাদা আলাদাভাবে ব্যবহার না করে একসঙ্গে ব্যবহার করেছেন। এতে অনিশ্চয়তা কমে মাত্র ১.৫ ভাগে নেমে এসেছে।