হার্ভার্ড-স্মিথসোনিয়ান সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোফিজিকসের বিজ্ঞানী ব্রেট এ ম্যাকগুইরের নেতৃত্বাধীন একদল জ্যোতির্বিজ্ঞানী একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছেন অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল লেটার্স-এ। তাতে ওই গবেষক দল জানিয়েছে, আলমা অবজারভেটরির মাধ্যমে সৌরজগতের বাইরে পানির অস্তিত্ব ও জটিল জৈব যৌগের উপস্থিতির প্রমাণ পেয়েছে তারা। বহির্জাগতিক অঞ্চলে সরাসরি কোনো জটিল রাসায়নিক প্রক্রিয়ার পর্যবেক্ষণ এই প্রথম।
আতাকামা লার্জ মিলিমিটার/সাবমিলিমিটার অ্যারে, সংক্ষেপে ডাকা হয় আলমা (ALMA)। অবস্থান চিলিতে, ৬৬টি ডিশ অ্যানটেনা দিয়ে বানানো রেডিও টেলিস্কোপ। এই টেলিস্কোপের মূল কাজ হলো রেডিও ওয়েভের যে অংশ বায়ুমণ্ডল পাড়ি দিয়ে পৃথিবীতে পৌঁছায়, তা পর্যবেক্ষণ করা।
রেডিও ওয়েভের কম কম্পাঙ্কের অংশ সহজেই পৃথিবীতে পৌঁছায়, সে অংশ পর্যবেক্ষণ করে মহাকাশবিজ্ঞানীরা বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করেন। তবে রেডিও ওয়েভের বেশি কম্পাঙ্কের অংশ, যে অংশের তরঙ্গদৈর্ঘ্য মিলিমিটারের ভগ্নাংশ থেকে কয়েক মিটারের মধ্যে, তা খুব কমই পৃথিবীর পৃষ্ঠে পৌঁছাতে পারে। ওই অংশ পৃথিবীতে পৌঁছাতে চাই শুষ্ক আবহাওয়া, ধুলাবালুমুক্ত আকাশ।
এমনই একটি দিন এসেছিল এ বছরের ৫ এপ্রিল। একদম আদর্শ বায়ুমণ্ডল, শুষ্ক, ধুলাবালুমুক্ত আকাশ। বিজ্ঞানীরা আলমার মুখ আকাশের তাঁদের কাছে আকর্ষণীয় একটা দিকে তাক করলেন। অর্থাৎ ক্যাটস প নেবুলার (Cat’s Paw Nebula) দিকে। পৃথিবী থেকে ৪৩০০ আলোকবর্ষ দূরে, এই অঞ্চলে একটা তারার জন্মপ্রক্রিয়া চলছে।
অর্থাৎ ওখানে মহাকাশের ধুলায় একটা তারা তৈরি হচ্ছে, আলমার পর্যবেক্ষণেই জানা সে কথা। উচ্চ কম্পাঙ্কের বেতার তরঙ্গ ধরার জন্য এবার আলমায় কিছু নতুন সংযোজন করা হয়। এবং ফলাফল হিসেবে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হয়েছে অভিনব রাসায়নিক প্রক্রিয়ার।
৫ এপ্রিল আলমার বিজ্ঞানীরা দেখলেন, ওই অংশ থেকে যে বর্ণালি ধরা পড়ছে, তাতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, ওই অংশে প্রোটোস্টার হতে পানির অণুর জেট বাইরের দিকে ছুটে যাচ্ছে। প্রোটোস্টার হলো ধুলাবালুতে গড়তে থাকা তারার শৈশবকাল, ভবিষ্যতে যেখান থেকে তারার জন্ম হবে।
ওই পানির জেট মূলত হেভি ওয়াটার বা ভারী পানির। হেভি ওয়াটার হলো এমন পানি, যেখানে হাইড্রোজেনের বদলে হাইড্রোজেনের আইসোটোপ ডিউটেরিয়াম আছে। নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্টের নিউক্লিয়ার বিক্রিয়াকে কন্ট্রোল করার জন্য হেভি ওয়াটারের প্রয়োজন হয়।
হেভি ওয়াটারের অস্তিত্ব শুধু আলমা দিয়েই নয়, আলমার অর্থদাতা ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশনেরই আরেক রেডিও অবজারভেটরি ভেরি লার্জ অ্যারের মাধ্যমেও পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হয়। তবে আলমা দিয়েছে আরও চমকপ্রদ তথ্য। ওই দিন যে বর্ণালি পর্যবেক্ষণ করা হয়, তাতে উচ্চ কম্পাঙ্কের রেডিও ওয়েভে দেখা যায় ওই নেবুলা থেকে আসা রেডিও ওয়েভে আছে জৈব যৌগের অণুর স্পেকট্রাল লাইনও।
বিজ্ঞানীরা ওই বর্ণালি বিশ্লেষণে দেখতে পান, সেখান থেকে আসছে গ্লাইকল-অ্যালডিহাইডের উপস্থিতির প্রমাণ। গ্লাইকল-অ্যালডিহাইড হলো সুগার বা শর্করা–জাতীয় যৌগের সবচেয়ে ছোট অণু। শর্করা অণু তৈরি জটিল রাসায়নিক প্রক্রিয়া। এই আবিষ্কারের মাধ্যমে সৌরজগতের বাইরেও সরাসরি পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হলো জটিল রাসায়নিক প্রক্রিয়ার উপস্থিতির। আলমার ভবিষ্যৎ পর্যবেক্ষণ আরও নতুন নতুন ধারণা তৈরি করবে বলে বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।