সাধারণত বইপত্র পড়ে আমাদের মাথায় মহাবিশ্বের একটা ছবি তৈরি হয়। পৃথিবী ছাড়িয়ে, মহাশূন্যের নিঃসীম শূন্যতার মাঝে ভেসে বেড়ানো কিছু কাঠামো মস্তিষ্কে উঁকি দিয়ে যায়। একদম সহজ করে বললে, ছবিটা হয়তো এমন—আমরা রয়েছি পৃথিবীর ওপরে। আমাদের চারপাশে বায়ুমণ্ডল। পৃথিবীর সীমা ছাড়িয়ে বেরোলে—হাবল বা জেমস ওয়েব নভোদুরবিনের মতো শক্তিশালী একটা চশমা চোখে দিয়ে বহুদূরে তাকালে—আমাদের চোখে পড়বে না কোনো দিগন্ত।

বরং দেখতে পাব অন্ধকারের মাঝে ভেসে বেড়ানো একদল বলের মতো গঠন, আর বহুদূরে প্রচণ্ড উজ্জ্বল এক অগ্নিগোলক। ওই গোলকটি সূর্য। তাকে ঘিরে বলের মতো গঠনগুলোর কোনোটি গ্রহ, কোনোটি উপগ্রহ। আর এলোমেলোভাবে ঘুরে বেড়ানো কিছু কাঠামোর দিকে চোখ পড়বে আমাদের। এদের কোনোটি গ্রহাণু, কোনোটি ধূমকেতু, কিছু বামন গ্রহ ইত্যাদি। সব কটিরই গতিপথে আসলে ছন্দ আছে, তাল আছে—হয়তো প্রথম দেখায় তা আমাদের চোখে নাও পড়তে পারে।
সৌরজগতের মতো হাজারো নক্ষত্রমণ্ডল রয়েছে একেকটি গ্যালাক্সিতে। এরকম একটি গ্যালাক্সি আমাদের মিল্কিওয়ে। একটু কাব্য করে বাংলায় যাকে ‘দুধসায়র’ হয়তো বলাই যায়। যদিও একদম সঠিক বাংলা এটা নয়। বিজ্ঞানমনস্ক কেউ কেউ হয়তো তাই মৃদু আপত্তি জানাতেই পারেন। তা হোক।
পৃথিবী থেকে তো আসলে তা-ই মনে হয় মিল্কিওয়েকে—দুধের নহর। নামটিও সেরকম। সূর্য এর নিতান্ত সাধারণ এক তারা। এই মিল্কিওয়ের মতো আরও কত কত গ্যালাক্সি—ছায়াপথ; আঁচলে তাদের বিছানো হাজারো নক্ষত্রমণ্ডল। এই গ্যালাকটিক কাঠামোর সীমা পেরিয়ে—মানে, গ্যালাক্সিগুলোর বাইরে দাঁড়িয়ে, বা ভেসে ভেসে যদি দেখি, দেখব কয়েকটি করে গ্যালাক্সি একসঙ্গে আছে। গ্যালাক্সির এরকম ঝাঁককে বলা হয় ক্লাস্টার—ঠিক যেন নেকড়ের ‘প্যাক’। এরকম ক্লাস্টারদেরও দল আছে—সুপারক্লাস্টার।
মহাবিশ্বের এমনই একটা ছবি—তাতে মাথা তুলে আছে এই গ্যালাক্সিরা। এই ছবিই ভেসে ওঠে আমাদের করোটির ভেতরে। কিন্তু কখনো কি ভেবে দেখেছেন, এসব গ্যালাক্সির ফাঁকে ফাঁকে কী আছে? ধরুন, মিল্কিওয়ে একটা বড় শহর। তার পাশের বড় শহরটির নাম অ্যান্ড্রোমিডা। জুম আউট করে মানচিত্র দেখলে তো এরকম শহরগুলোই দেখা যায়।
মাঝের জায়গাটা আমাদের চোখ এড়িয়ে যায় সহজেই। মিল্কিওয়ে ও অ্যান্ড্রোমিডার মাঝে কতটা জায়গা? ২.৫ মিলিয়ন, মানে ২৫ লাখ আলোকবর্ষ। মিল্কিওয়ের প্রান্তসীমা থেকে ছুট দিল আলোর একটি কণা। সেই কণাটি ২৫ লাখ বছর ধরে ছুটলে তবেই গিয়ে পৌঁছাবে অ্যান্ড্রোমিডায়। অথচ সৌরজগতের কেন্দ্র—সূর্য থেকে ছুট দিয়ে মাত্র সাড়ে ৮ মিনিটে পৃথিবীতে পৌঁছে যেতে পারে আলো। বুঝতে পারছেন, কী বিশাল দূরত্ব! কী আছে এখানে?
হয়তো ভাবছেন, শুধুই শূন্যতা। কিংবা ভাবতে পারেন, কিছু সামান্য পদার্থ হয়তো ভেসে বেড়াচ্ছে। মনে পড়ে, প্রথম যখন জানতে পারি—গ্যালাক্সিগুলো আসলে কেবলই প্রহেলিকা; বড় শহরগুলো যেমন, মফস্বল বা গ্রামের সেই নির্মল আনন্দ থেকে মন সরিয়ে দেয় আমাদের, চোখ ধাঁধিয়ে দেয়; মহাজাগতিক এই শহরগুলোও ঠিক তাই, অথচ গ্যালাক্সির ফাঁকে ফাঁকে ঘটে চলেছে মজার সব কাণ্ড-কারখানা, আছে নক্ষত্র, এমনকি খুদে গ্যালাক্সিরাও—একটু অবাকই হয়েছিলাম। সেই অবাক করা গল্পটিই বলতে চাই। চলুন, ঘুরে আসা যাক গ্যালাক্সিদের ফাঁকে ফাঁকে। মহাজাগতিক শহরগুলোর সীমা ছাড়িয়ে, বাইরের শূন্যতা, মিশমিশে অন্ধকারে একটু উঁকি দেওয়া যাক।
গ্যালাক্সি-শহরের ফাঁকে চোখ রাখতে চাইলে টেলিস্কোপ লাগবে। কেন? কারণ, দৃশ্যমান আলোয় মহাশূন্যকে মনে হবে অন্ধকূপ। তবে মহাবিশ্বে আলো আছে নানা ধরনের। এগুলো নিয়ে অনেক আলোচনা হতে পারে, তবে সংক্ষেপে এদের চিনে নেব আমরা।
যেমন গামা রশ্মি—মহাকাশ এ ধরনের রশ্মিতে ভরা বলা চলে; অতিবেগুনি আলো—সূর্য থেকে পৃথিবীতে এ ধরনের আলো আসে; এক্স-রে—হাড়-টাড় ভেঙে গেলে যে এক্স-রে করা হয়, তা বোধ হয় বলার দরকার নেই আলাদা করে; দৃশ্যমান আলো—আমরা খালি চোখে দেখি; অবলোহিত আলো—তাপ হিসেবে টের পাই ইত্যাদি।
এসব আলোর নানা ধরনের উৎস আছে, সূর্য থেকে অতিবেগুনি ছাড়াও অন্যান্য ধরনের আলোও আসে—আমরা শুধু সহজে চিনতে এটুকু বলেছি। যাহোক, এসব আলো দেখতে পায় আমাদের টেলিস্কোপ। এই টেলিস্কোপ না থাকলে গ্যালাক্সি-মাঝের বিশাল কর্মযজ্ঞ রয়ে যেত আমাদের চোখের আড়ালেই।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



