কয়েক হাজার বছর ধরে আমরা ভেবে এসেছি, এই যে মহাবিশ্ব, নিশ্চয় তার মধ্যে মানুষের একটা বিরাট ভূমিকা আছে। আমরা ভেবেছি পৃথিবী মহাকাশের কেন্দ্রে অবস্থিত, পর্যবেক্ষণকারী হিসেবে আমাদের স্থান বিশেষ। প্রাচীন বিজ্ঞানীরা ভেবেছিলেন, মহাবিশ্বের পরিসর—আজ আমরা যা জানি—তার তুলনায় ছিল খুবই ছোট। তাঁরা ভাবতেন, আকাশের নক্ষত্ররা আমাদের খুব কাছে, গ্রিক দার্শনিকদের ধারণা অনুযায়ী মহাকাশের ব্যাস আমাদের বর্তমান সৌরজগতের আকার থেকে বড় ছিল না। এমনই ছোট ছিল তাঁদের মহাবিশ্ব।
১৫৪৩ সালে নিকোলাস কোপার্নিকাস তাঁর De revolutionibus orbium coelestium (খগোল গোলকদের ঘূর্ণন প্রসঙ্গে) বইতে লিখলেন, পৃথিবী নয়, সূর্যই আমাদের সৌরজগতের কেন্দ্র। বিজ্ঞান ও দর্শনজগতের জন্য সেটি ছিল একটি বিপ্লবী বক্তব্য। কিন্তু কোপার্নিকাসের মডেলে সূর্য ছিল মহাশূন্যের কেন্দ্রে, এ ছাড়া তিনি ভেবেছিলেন সূর্য ও আকাশের তারাদের নিজস্ব কোনো গতি নেই।
নক্ষত্রদের গতি সম্পর্কে তাঁর ধারণা প্রাচীন ব্যবিলনীয় ও গ্রিক জ্যোতির্বিদদের থেকে ভিন্ন ছিল না। তাঁরা ভাবতেন, দূরের তারারা এক বিশাল গোলকের পৃষ্ঠে নির্দিষ্ট স্থানে খচিত, নক্ষত্ররা স্থিত, গতিশীল নয়। আমরা আজ জানি, সবকিছুই গতিশীল, আর আমাদের সৌরজগৎ মহাবিশ্বের কেন্দ্রে নয়। শুধু আমাদের সৌরজগৎ নয়, এমনকি যে গ্যালাক্সিতে আমাদের বাস, সেই ছায়াপথ গ্যালাক্সিও মহাজগতের কেন্দ্রে অবস্থিত নয়। আধুনিক মহাজাগতিক বিজ্ঞান বলছে, আপাতদৃষ্টিতে এই সীমাহীন মহাবিশ্বের কেন্দ্র বলে কিছু নেই।
বিজ্ঞানীরা কোপার্নিকাসের মূল চিন্তাটিকে—অর্থাৎ পৃথিবী যে সৌরজগতের কেন্দ্রে নয়—বিস্তৃত করেছেন। তাঁরা বলছেন, পর্যবেক্ষণকারী হিসেবে এই মহাবিশ্বকে অবলোকন করার জন্য আমাদের অবস্থানটা বিশেষ কোনো অবস্থান নয়। এর অর্থ হলো, মহাবিশ্বকে যেকোনো জায়গা থেকেই দেখা হোক না কেন, মোটামুটিভাবে তা দেখতে একই রকম হবে। জ্যোতির্বিদেরা এই ধারণাটির নাম দিয়েছেন মহাজাগতিক নীতি (Cosmological Principle) বা কোপার্নিকাসের নীতি।
এই নীতির একটা অর্থ হলো বড় স্কেলে—অর্থাৎ একটা বড় অঞ্চলজুড়ে—মহাবিশ্বকে দেখতে একই রকম লাগবে। এই ব্যাখ্যা অনুসারে বড় স্কেলে মহাবিশ্বের গঠন মোটামুটিভাবে সমরূপ ও সমসত্ত্ব হবে, মহাশূন্যে গ্যালাক্সিদের বিতরণের ঘনত্ব—অর্থাৎ প্রতি ঘন আলোকবর্ষে বা প্রতি ঘন মেগাপার্সেকে গ্যালাক্সির সংখ্যা একই হবে। এখানে বলে রাখি, ১ পার্সেক দূরত্ব হলো ৩.২৬ আলোকবর্ষ, আর ১ মেগাপার্সেক হলো ১ মিলিয়ন বা ১০ লাখ পার্সেক। কোপের্নিকাসের নীতির অন্য একটি ব্যাখ্যা হলো, মহাবিশ্বের বৈশিষ্ট্য পর্যবেক্ষণকারীর অবস্থানের ওপর নির্ভর করবে না।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।