দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে বিজ্ঞানীরা মনে করতেন মহাবিশ্ব ক্রমাগত দ্রুতগতিতে সম্প্রসারিত হচ্ছে। এই ধারণাই কিছু গবেষককে ২০১১ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার এনে দেয়। কিন্তু সাম্প্রতিক এক গবেষণা সেই প্রতিষ্ঠিত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলছে, মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ আসলে এখন ধীরে হচ্ছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার ইয়নসেই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইয়াং-উক লি’র নেতৃত্বে পরিচালিত এই গবেষণায় দেখা গেছে, ‘ডার্ক এনার্জি’ (এক রহস্যময় শক্তি, যা মহাবিশ্বের দ্রুত সম্প্রসারণ ঘটায় বলে মনে করা হয়) সময়ের সঙ্গে দুর্বল হয়ে পড়ছে। গবেষকদের মতে, মহাবিশ্ব এখন আর ত্বরান্বিতভাবে নয়, বরং ধীরগতিতে প্রসারিত হচ্ছে।
অধ্যাপক লি বলেন, আমাদের পর্যবেক্ষণ ইঙ্গিত দিচ্ছে, ডার্ক এনার্জির প্রভাব আগের ধারণার তুলনায় অনেক দ্রুত বদলাচ্ছে। তার মতে, যদি এই ফলাফল নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত হয়, তাহলে এটি মহাবিশ্ববিদ্যা (Cosmology)এর ধারণায় বড় পরিবর্তন আনবে।
এই গবেষণা ১৯৯০-এর দশকে পাওয়া তথাকথিত প্রমাণগুলোকেও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। যদিও বিজ্ঞানীরা ওই প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে বলেছিলেন মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ দ্রুত হচ্ছে। তখন দূরবর্তী সুপারনোভা (অত্যন্ত উজ্জ্বল বিস্ফোরিত তারা) পর্যবেক্ষণ করে বিজ্ঞানীরা দেখেছিলেন, সেগুলোর আলো প্রত্যাশার তুলনায় ম্লান। এ থেকেই ধারণা হয় যে মহাবিশ্ব দ্রুত বিস্তৃত হচ্ছে।
কিন্তু নতুন গবেষণায় বলা হচ্ছে, প্রাচীন যুগের তারাগুলো থেকে তৈরি সুপারনোভাগুলোর আলো হয়তো আসলে একটু কম উজ্জ্বল ছিল। ৩০০টি গ্যালাক্সি বিশ্লেষণ করে গবেষকেরা দেখেছেন, এই পার্থক্য হিসাব করলে মহাবিশ্বের সম্প্রসারণের হার আসলে অনেকটা ধীর।
গবেষক দলটি সতর্ক করে বলেছে, যদি ডার্ক এনার্জির শক্তি আরও কমে যায় বা ঋণাত্মক হয়ে পড়ে, তাহলে একসময় মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ থেমে গিয়ে উল্টো দিকে ধ্বসে পড়তে পারে—যাকে বলা হয় ‘বিগ ক্রাঞ্চ’ ( মহাবিশ্বের নিজেই নিজের মধ্যে সংকোচন)।
এই গবেষণা নিয়ে ইতোমধ্যে বিশ্বজুড়ে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মধ্যে নতুন বিতর্ক শুরু হয়েছে। যুক্তরাজ্যের ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কার্লোস ফ্রেঙ্ক বলেন, এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও চ্যালেঞ্জিং আবিষ্কার। হয়তো এটি ভুলও হতে পারে, কিন্তু এটিকে অবহেলা করার কোনো সুযোগ নেই।
ইউরোপের একটিমাত্র দেশকে রাশিয়ার তেল কেনার সুযোগ দেবেন ট্রাম্প!
গবেষণাটি এখনো যাচাই-বাছাইয়ের পর্যায়ে থাকলেও, এটি মহাবিশ্বের ভবিষ্যৎ ও ‘ডার্ক এনার্জি’র প্রকৃতি নিয়ে নতুন করে চিন্তা করার সুযোগ তৈরি করেছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



