চাকরিজীবীদের জন্য নতুন অর্থবছরের বাজেটে একটি বড় চমক এসেছে। মহার্ঘ ভাতা নয়, এবার সরকার ঘোষণা করেছে একটি বিশেষ প্রণোদনা, যা সরকারি, বেসামরিক ও রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের জন্য কার্যকর হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের ৩ জুন ২০২৫ সালের প্রজ্ঞাপনে বিস্তারিতভাবে এই সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে। এই পদক্ষেপটি সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য যেমন অর্থনৈতিক স্বস্তি বয়ে আনবে, তেমনি আগামী অর্থবছরের বাজেট কাঠামোতেও এর প্রভাব পড়বে স্পষ্টভাবে।
মহার্ঘ ভাতা প্রজ্ঞাপন: নতুন কাঠামো ও মূল বিষয়বস্তু
২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে মহার্ঘ ভাতা বন্ধ রেখে সরকার যে মহার্ঘ ভাতা প্রজ্ঞাপন জারি করেছে, তাতে বলা হয়েছে ১ জুলাই ২০২৫ থেকে সরকারি ও স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরা তাদের মূল বেতনের ওপর নির্ধারিত হারে বিশেষ প্রণোদনা পাবেন। এই হার নির্ধারিত হয়েছে বেতন গ্রেডভিত্তিক:
- গ্রেড ১ থেকে ৯ পর্যন্ত: মূল বেতনের ১০%
- গ্রেড ১০ থেকে ২০ পর্যন্ত: মূল বেতনের ১৫%
এছাড়াও, ন্যূনতম প্রণোদনা নির্ধারণ করা হয়েছে — কর্মচারীদের জন্য এক হাজার টাকা এবং পেনশনভোগীদের জন্য পাঁচশো টাকা। এই সুবিধা কার্যকর হবে সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ এর ১৫ ধারার অধীনে।
কারা এই বিশেষ প্রণোদনার আওতায় আসবে এবং কীভাবে প্রযোজ্য হবে?
প্রজ্ঞাপনে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে, কোন কোন শ্রেণির কর্মচারী এই সুবিধা পাবেন এবং কীভাবে এটি কার্যকর হবে:
- বয়সভিত্তিক কার্যকারিতা: যারা ১ জুলাই ২০২৫ তারিখে কর্মরত থাকবেন, তারাই মূলত এই সুবিধা গ্রহণ করতে পারবেন।
- পিআরএল ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী: পিআরএল-এ থাকা কর্মচারীরা তাদের পিআরএল শুরুর আগের মূল বেতনের ওপর নির্ধারিত হারে সুবিধা পাবেন। অবসরপ্রাপ্তরাও পাবেন পেনশনভিত্তিক বিশেষ সুবিধা।
- চুক্তিভিত্তিক কর্মকর্তা: তাদের ক্ষেত্রে নিয়োগের পূর্ববর্তী মূল বেতনের ভিত্তিতে সুবিধা প্রযোজ্য হবে। যদি তারা পেনশন পান, তবে পেনশন বা বেতন — যেটি বেশি, সেটির ভিত্তিতে প্রণোদনা নির্ধারিত হবে।
- সাময়িক বরখাস্ত: বরখাস্তকৃত কর্মচারীরা তাদের শেষ মূল বেতনের ৫০ শতাংশের ওপর নির্ধারিত হারে প্রণোদনা পাবেন।
- বিনা বেতনে ছুটিতে থাকা কর্মচারী: তারা এই বিশেষ সুবিধার আওতায় পড়বেন না।
গুলিস্তানে সিটিটিসি’র স্পেশাল এ্যাকশন গ্রুপের অভিযান, গ্রেফতার ৫
প্রভাব ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার আভাস
এই নতুন প্রণোদনা কর্মচারীদের বেতন কাঠামোয় সরাসরি প্রভাব ফেলবে। আগের মতো সরাসরি মহার্ঘ ভাতা না দিয়ে, এই ধরনের পারফরম্যান্স ও গ্রেডভিত্তিক প্রণোদনা ব্যবস্থায় প্রশাসনিক কাঠামোতে একটি বড় পরিবর্তনের সূচনা হতে পারে। এটি একদিকে যেমন বাজেটের ভারসাম্য রক্ষা করতে সাহায্য করবে, তেমনি কর্মচারীদেরও একটা আর্থিক সুবিধা দেবে।
অর্থনৈতিক দিক থেকে সরকারের এমন পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ২০২৫-২৬ বাজেট পরিকল্পনার একটি কৌশলগত অংশ। এতে দেখা যাচ্ছে যে, ৭৯০,০০০ কোটি টাকার বাজেটে পরিচালন ও উন্নয়ন ব্যয়ের মাঝে একটি সামঞ্জস্য আনার চেষ্টা করা হয়েছে।
আরও জানা গেছে, সামগ্রিকভাবে বেতন কাঠামোয় স্থিতিশীলতা আনতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। Zoombangla নিউজ পোর্টালের অর্থনীতি বিভাগে এই প্রণোদনার অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ এবং জাতীয় বিভাগে কর্মচারীদের প্রতিক্রিয়ার আরও প্রতিবেদন পড়া যাবে।
মহার্ঘ ভাতা প্রজ্ঞাপন এই প্রেক্ষাপটে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য একটি নতুন সময়ের সূচনা করেছে। কর্মচারীদের আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য বজায় রাখার পাশাপাশি রাষ্ট্রের ব্যয় ব্যবস্থাপনাতেও এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
FAQ: মহার্ঘ ভাতা প্রজ্ঞাপন সম্পর্কিত সাধারণ প্রশ্ন
১. মহার্ঘ ভাতা প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী কারা এই সুবিধা পাবেন?
সরকারি, বেসামরিক, স্বশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, বিমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ এবং পুলিশ বাহিনীর কর্মচারীরা এই সুবিধা পাবেন।
২. এই প্রণোদনার হার কীভাবে নির্ধারিত হবে?
বেতন গ্রেড ১-৯ এর কর্মচারীরা মূল বেতনের ১০% এবং গ্রেড ১০-২০ এর কর্মচারীরা ১৫% হারে প্রণোদনা পাবেন।
৩. অবসরপ্রাপ্ত বা পিআরএল কর্মচারীদের জন্য কি এই সুবিধা প্রযোজ্য?
হ্যাঁ, পিআরএল বা অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীরা তাদের শেষ মূল বেতন বা বর্তমান পেনশনের ভিত্তিতে এই সুবিধা পাবেন।
৪. সাময়িক বরখাস্তকৃত কর্মচারীদের কি এই সুবিধা প্রযোজ্য?
হ্যাঁ, তবে তারা তাদের বরখাস্তের আগের বেতনের ৫০% এর ওপর গ্রেড অনুযায়ী নির্ধারিত হারে প্রণোদনা পাবেন।
৫. বিনা বেতনে ছুটিতে থাকা কর্মচারীদের ক্ষেত্রে কী হবে?
এই ধরনের কর্মচারীরা কোনো ধরনের বিশেষ সুবিধা পাবেন না।
৬. এটি কি শুধুই ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য?
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, এটি ১ জুলাই ২০২৫ থেকে কার্যকর হবে এবং প্রতি বছর একই তারিখে কার্যকর থাকবে। তবে ভবিষ্যতের বাজেটে এটি পরিবর্তিত হতে পারে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।