জুমবাংলা ডেস্ক : খুলনার দৌলতপুরের রহিমা বেগমের ‘অপহরণের’ ঘটনাকে ‘সাজানো নাটক’ বলে আখ্যা দিচ্ছেন অনেকেই। এরইমধ্যে জানা যায় বান্দরবান পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইসলামপুরে ভিক্ষা করেছেন রহিমা। এই এলাকার এক বাসিন্দার বাড়িতে চার দিন ছিলেন। এখান থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র আনার কথা বলে ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে কুদ্দুস মোল্লার বাড়িতে চলে যান। সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে পুলিশ।
রহিমাকে উদ্ধারের পর ২৫ সেপ্টেম্বর খুলনা পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান বলেছেন, বান্দরবান থেকে ফরিদপুরে আসেন রহিমা। অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে রহিমা কার বাসায় কতদিন ছিলেন, কি কি করেছেন এসব তথ্য।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ১৩ সেপ্টেম্বর দুপুর পৌনে ১টার দিকে ইসলামপুরের বাসিন্দা কামরুন্নাহার মনির ঘরোয়া হোটেলে ভিক্ষার জন্য যান রহিমা। হোটেলের মালিক মনিকে বলেন, ‘মা আমাকে কিছু ভিক্ষা দাও’।
ভিক্ষার সূত্র ধরেই মনির কাছে আশ্রয় পেয়ে যান রহিমা। থাকেন চার দিন। নাম রহিমা বললেও মনিকে বাড়ির ঠিকানা দিয়েছেন ফরিদপুর। রহিমার সঙ্গে পরিচয় ও বাড়িতে আশ্রয় দেওয়ার বিস্তারিত একটি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন কামরুন্নাহার মনি।
কামরুন্নাহার মনি ইসলামপুরে নিজের বাড়িতে খাবার তৈরি করে ঘরের এক পাশে চেয়ার-টেবিল বসিয়ে বিক্রি করেন। স্বামী ও এক সন্তান নিয়ে তার সংসার। তিন মাস আগে হোটেলের ব্যবসা শুরু করেন। মা নেই, বাবা নবী হোসেন (৭০) কোনও কাজ করতে পারেন না। পাঁচ বোনের মধ্যে চতুর্থ মনি। হোটেলের আয় দিয়ে সংসার চলে তার।
যেভাবে রহিমার সঙ্গে মনির পরিচয়
মনি বলেন, ‘১৩ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটের দিকে আমার হোটেলের সামনে এসে রহিমা বলেন, মা আমাকে কিছু ভিক্ষা দাও। তার কথা শুনে মনে হয়েছিল অসুস্থ। চিকিৎসার জন্য টাকা চাইতে এসেছেন। পরে দেখি সুস্থ। হোটেলের ভেতর থেকে বেরিয়ে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বলি, খালা কি লাগবে আপনার?। তখন রহিমা বলেন, চাল দাও, নয়তো টাকা দাও। আমার দোকানে তখন তিন জন কাস্টমার ছিলেন, তারা ভাত খাচ্ছিলেন। তাদের সামনে আমি রহিমাকে ২০ টাকা ভিক্ষা দিই। আমার দেওয়া দেখে তিন কাস্টমার ১০ টাকা করে ৩০ টাকা ভিক্ষা দেন। চাল লাগবে কিনা জানতে চাইলে রহিমা বলেন, আমি সবকিছু ভিক্ষা নিই। তখন তাকে একবাটি চাল দিই। এরপর চলে যাচ্ছিলেন রহিমা।’
যেভাবে মনির বাড়িতে আশ্রয় পেয়েছেন রহিমা
মনি বলেন, ‘ভিক্ষা নিয়ে কিছু দূর চলে যাওয়ার পর ওই বৃদ্ধা নারীর জন্য আমার মায়া হয়। ডাক দিয়ে বলি, খালা এদিকে আসেন। হোটেলের ভেতরে এনে জানতে চাই, কোথায় থাকেন? তখন বলেন, বান্দরবানের ৭ নম্বর পৌর এলাকার আর্মিপাড়ায়। ওই এলাকায় আপনাকে কখনও দেখিনি জানালে রহিমা বলেন, আমি তিন মাস ধরে থাকি। এজন্য দেখা হয়নি। তাকে বলি খালা, ইসলামে ভিক্ষা করা জায়েজ নেই, আপনি সুস্থ মানুষ কাজ করে খেতে পারেন, কেন ভিক্ষা করেন? উত্তরে রহিমা বলেন, মা আমার থাকার জায়গা নেই, কেউ তো ইচ্ছে করে ভিক্ষা করে না। আমি পরিস্থিতির শিকার। পরে তাকে বলি, আমার মা নেই, মারা গেছেন। আপনি আমার এখানে থাকতে চাইলে রাখবো। এই কথা শুনে রহিমা আমাকে জড়িয়ে ধরে বলেন, আমিও অনেক মানুষকে থাকার জায়গা দিয়েছি, পরিস্থিতির কারণে আজ আমার এই অবস্থা। পরে ভিক্ষার চালগুলো ৩৫ টাকা কেজিতে আমাকে কিনতে বলেন। মেপে দেখি দুই কেজি ২৫০ গ্রাম চাল। তাকে চালের দাম ৭০ টাকা দিই। এ সময় দুই টাকা, পাঁচ টাকা ও ১০ টাকার নোটসহ ভিক্ষার ২০০ টাকা আমার কাছে জমা রাখেন। বিকালে আমি আর্মিপাড়া থেকে তোমার এখানে চলে আসবো—এই বলে চলে যান।’
মনি আরও বলেন, ‘ওই দিন বিকালে আমার বোনের সঙ্গে ইসলামী ব্যাংকের পৌর শাখায় গিয়েছিলাম। ওই সময় আমার বান্ধবী ফোনে জানায়, তোর বাসায় এক বৃদ্ধা নারী এসেছেন। তখন আমি বান্ধবীকে বলি, তাকে বসিয়ে রাখ, আমি আসতেছি। বাসায় এসে দেখি চেয়ারে বসা। সঙ্গে একটা ব্যাগ, পরনে খয়েরি রঙের পায়জামা, গোলাপি কামিজ ও সবুজ ওড়না ছিল। পরে আমি তাকে হলুদ রঙের একটা ওড়না দিই, ফরিদপুর থেকে উদ্ধারের সময় আমার দেওয়া ওড়নাটি তার গায়ে ছিল।’
মনি বলেন, ‘রহিমাকে বাড়িতে আশ্রয় দেওয়ার পর বলি, যদি এখানে স্থায়ীভাবে থাকেন তাহলে দোকানে যেসব মালামাল আনবো তা বিক্রি করবেন, মা হিসেবে আমাকে সহযোগিতা করবেন। আমি আপনাকে মা হিসেবে সম্মান করবো। এতে রাজি হন রহিমা। আমার বাসায় চার দিন ছিলেন। তবে প্রতিদিন সকাল ৬টার দিকে কাজের কথা বলে বেরিয়ে যেতেন। সকাল ৯টা কিংবা সাড়ে ৯টার দিকে এসে আমাকে কাজে সহযোগিতা করতেন। তিনি সহযোগিতা না করলেও তা নিয়ে আমার মাথাব্যথা ছিল না। এজন্য কোথায় যেতো তাও জানতে চাইতাম না। একদিন জানতে চাইলে বলেছেন, একটা কাজে আর্মিপাড়ায় গিয়েছিলাম। এরপর আর জানতে চাইনি। অসহায় মা হিসেবে তাকে খাবার ও আশ্রয় দিয়ে সহযোগিতা করেছি। এজন্য তার বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাইনি। সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।