জুমবাংলা ডেস্ক : ঘটনার সূত্রপাত ২২ মার্চ সন্ধ্যায়। মাকে বলে যান বাড়িতে ফিরতে রাত হবে, চিন্তা না করতে। এরপর রাত সাড়ে ৮টায় অলিউল্লাহ স্বাধীন ফোন করে জানায়, ‘মা আমি চট্টগ্রাম যাইতাছি, নতুন চাকরি হইছে’। তোর সাথে আর কে আছে; মা জানতে চাইলে স্বাধীন বলে, ‘তুমি অত কিছু বুজবা না আমি সকালে ফোনে সব জানাবো, তোমরা চিন্তা কইরো না।’ তারপর ফোনের লাইন কেটে দেয় স্বাধীন। মায়ের সাথে এটিই ছিল তার শেষ কথা।
কিশোর স্বাধীনকে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রথমে চট্টগ্রাম, পরে ঘুরতে নিয়ে যাওয়া হয় বান্দরবানের লামা উপজেলার রুপসী পাড়া ইউনিয়নের দুর্গম এলাকা শিংঝিড়িতে। এরপর তাকে সেখানে আটকে রেখে তার ফোন থেকেই বাড়িতে কল করে এক লাখ টাকা মুক্তিপণ চাইতে থাকে ফায়েজ ও আরিফুল ইসলাম নামে দুই ব্যক্তি।
দুই দিন ধরে এভাবে ফোনের মাধ্যমে স্বাধীনের মা-বাবার কাছে টাকা দাবি করতে থাকে আরিফ ও ফয়েজ। ছেলের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে প্রতিবারই তাদের বলা হয়, আগে টাকা বিকাশ করো, নয়তো ছেলেকে মাটিতে পুঁতে ফেলব, সে এখন আমাদের হাতে বন্দী আছে। স্বাধীনের দরিদ্র বাবা-মা টাকা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় ২৫ মার্চ রাতের কোন এক সময় তার গলায় প্যান্টের বেল্ট লাগিয়ে আধমরা অবস্থায় শিংঝিড়িতে এলাকায় মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়। এরপর থেকে স্বাধীনের ফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।
গত ২৮ মার্চ সকালে স্বাধীনের বড় ভাই মো. জিলানি বুড়িচং থানায় একটি নিখোঁজ ডায়রি করেন (যার নং ১১৩৬)। ডায়রির সূত্র ধরে স্বাধীনকে খুঁজতে থাকে বুড়িচং থানা পুলিশ। তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে বান্দরবানের লামা উপজেলার বেতঝিরি গ্রামের ফায়েজের শ্বশুর বাড়ি থেকে তাকে ও আরিফুল ইসলামকে আটক করে বুড়িচং থানা পুলিশ। পরে জিজ্ঞাসাবাদে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল বুধবার রাত ২টার দিকে শিংঝিড়ি এলাকার দুর্গম পাহাড় থেকে মাটিচাপা দেওয়া অবস্থায় স্বাধীনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
নিহত হাফেজ অলিউল্লাহ স্বাধীনের গ্রামের বাড়ি দেবিদ্বার উপজেলার ফতেহাবাদ ইউনিয়নের বিষ্ণপুর গ্রামে। বাবা মোবারক হোসেন একজন কৃষক। সাত ভাই বোনের মধ্যে স্বাধীন সবার ছোট। আরিফুল ইসলাম প্রথমে চট্টগ্রামে তাকে ভালো বেতনে চাকরি দিবে বলে বাড়ি থেকে নিয়ে গিয়েছিল।
পুলিশের হাতে আটক আরিফের বাবার নাম মদন খা (মৃত)। তারা কসবা উপজেলার বাসিন্দা। সম্পর্কে সে স্বাধীনের ফুফাতো ভাই। ছোট বেলায় বাবা মারা যাওয়ায় মাকে নিয়ে দেবিদ্বার উপজেলার বিষ্ণপুর নানার থাকতো আরিফ। আটক ফায়েজ (২৮) বুড়িচং উপজেলার ষোলনল ইউয়িনের খাড়াতাইয়া গ্রামের মৃত আবদুল মালেকের ছেলে।
আরিফের মা সুফিয়া বেগম এ ব্যাপারে জানান, ছেলেকে কয়েকদিন আগে কুমিল্লা ইপিজেটে চাকরি করার জন্য তিনি নিজে গিয়ে দিয়ে আসেন। সে কার চক্করে পড়ে এমন ঘটনা ঘটালো তা তিনি কিছুই জানেন না।
নিহত হাফেজ স্বাধীনের বাবা মো. মোবারক মিয়া বলেন, আমার জানাজা পড়াবে বলে ছেলেকে মাদরাসায় পড়িয়েছিলাম। সে ৩০ পাড়া কোরআনে হাফেজও হয়েছিল। চাকরি দেওয়ার কথা বলে নিয়ে আরিফ ও ফয়েজ আমার ছেলেকে জীবন্ত মাটিচাপা দিয়ে মেরে ফেলেছে। আমি হত্যাকারীদের বিচার চাই।
স্বাধীনের মা লুৎফা বেগম জানান, যাওয়ার সময় তাকে বলে যায়, ফিরতে রাত হবে চিন্তা না করতে। পরে রাতে ফোন করে জানায়, চট্টগ্রামে নতুন চাকরি হয়েছে, সেখানে যাচ্ছে। এটাই ছিল তার সঙ্গে স্বাধীনের শেষ কথা।
বুড়িচং থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জানান, তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় আমাদের থানা পুলিশ বান্দরবানে গিয়ে এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য বের করেছে। ঘটনাস্থল লামা থানায়, তাই ওই থানায় এ বিষয়ে হত্যা মামলা হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।