স্পোর্টস ডেস্ক : চলনবিল অধ্যুষিত পাবনার ভাঙ্গুড়ায় মাছ ধরার উৎসবে মেতেছিল হাজারো মানুষ। স্থানীয় ভাষায় যাকে ‘বাউত উৎসব’ বলে ডাকা হয়।
হেমন্তের পূব আকাশে সূর্য উঁকি দেওয়ার আগেই উপজেলার রুহুল বিলপাড়ে জড়ো হন নানা বয়সী হাজারো মানুষ।
শনিবার ভোর থেকে বাউত উৎসবটি শুরু হয়।
উৎসবমুখর পরিবেশে মাছ ধরতে কুয়াশার চাদর ভেদ করে একে একে সবাই নামছেন বিলে। ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে রুহুল বিল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে।
কারও হাতে পলো, কারও হাতে ধর্মজাল-চাকজাল আবারও কেউ নেমেছেন ঠেলাজাল হাতে। সবার হাতেই মাছ ধরার কোনো না কোনো উপকরণ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতি বছর নভেম্বর মাসের শেষের দিকে উপজেলার একেক বিলে সপ্তাহে দুইদিন করে চলে মাছ ধরার এ উৎসব; চলে জানুয়ারি মাস পর্যন্ত।
শনিবার ভোর থেকে উৎসবটি শুরু হয় এই রুহুল বিলে।
এ যেন শৌখিন মাছ শিকারিদের এক মিলনমেলা।
মাছ ধরতে এসেছেন জেলার আটঘরিয়া উপজেলার বেলদহ গ্রামের রতন মোল্লা।
তিনি বলেন, “এই বিলে প্রতি বছর বাউত উৎসব হয়। এটা আমাদের এলাকার সবাই জানে, তাই শখ করে মাছ ধরতে এসেছি। শীতের ভেতর এসেছি ভাই, মাছ পেলে কোনো শীত নাই।”
পাশের ফরিদপুর উপজেলার হাদল গ্রামের মানিক মিয়া। তিনি নাকি আবার ‘মাছ কপালে’ মানুষ। মাছ ধরা তার পেশা নয়, নেশা। বিলে-বিলান্তে ‘বাউত নামার’ খবর পেলেই তিনি ছুটে যান।
যতবারই এসেছেন খালি হাতে বাড়ি ফিরতে হয়নি তাকে। পলো দিয়ে ১২ কেজি ওজনের বোয়াল ধরার অভিজ্ঞতাও আছে মানিক মিয়ার।
“এটি আমাদের মাছ ধরার প্রাণের উৎসব। সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ এই উৎসবে অংশ নেন। মাছ শিকারের চেয়ে সবাই মিলে দলবেঁধে বিলের পানিতে নেমে আনন্দ উপভোগ করাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য।”
ঈশ্বরদী উপজেলার মানিকহাট গ্রাম থেকে খুব ভোরে পাঁচটি নসিমন নিয়ে ৪৫ জনের মতো এসেছেন বাউতে মাছ ধরতে। কথা হয় তাদের সঙ্গে।
তারা জানান, প্রায় ৪৫ কিলোমিটার দূর থেকে এখানে মাছ শিকার করতে এসেছেন। অধিকাংশই পলো নিয়ে এসেছেন, ভালো মাছ পাবেন বলে তাদের আশা।
স্থানীয়রা জানান, শুধু পাবনা জেলারই নয়, পাশের নাটোর, সিরাজগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলার মানুষ আসেন রুহুল বিলে মাছ ধরার এ উৎসবে।
ভাঙ্গুড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা নাজমুল হুদা বলেন, “এভাবে মাছ শিকার করায় মাছের ক্ষতি হয়। কিন্তু এ এলাকার এটা আদি উৎসব, বাধা দেওয়ার মতো পরিস্থিতি নেই।”
ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খান বলেন, “উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় রুহুল বিল। বাউত উৎসব এ এলাকার অতীত ঐতিহ্য। শুনেছি, প্রতি বছরের এ সময়ে এই বিলে মাছ ধরার উৎসব হয়। দূর-দূরান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষ আসেন বাউত উৎসবে যোগ দিতে।”
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।