জুমবাংলা ডেস্ক : খুলনায় কিছুদিন আগেও মাছ কাটার পর ফেলে দেয়া হতো মাছের আঁশ। এখন সেই আঁশ রোদে শুকিয়ে রপ্তানি করা হচ্ছে চীন, হংকং ও ফিলিপাইনসহ বিভিন্ন দেশে। এ থেকে বাড়তি আয় করছেন বিভিন্ন বাজারে মাছ কাটার সঙ্গে যুক্ত লোকজন।
একসময় বাতিল বা ফেলে দেয়ার জিনিস হিসাবে বিবেচনা করা হতো মাছের আঁইশ, এই পণ্যই এখন বৈদেশিক মুদ্রা আনতে শুরু করেছে বাংলাদেশে।
নগরীর নতুন বাজারে গিয়ে দেখা যায়, সাত থেকে আটজন মাছ কাটছেন। মাছের আঁশগুলো তাদের বসার স্থানের পাশে রেখে দিচ্ছেন। মাছ কাটার সঙ্গে যুক্ত আলী হোসেন নামের একজন জানান, আগে তারা মাছের আঁশ ফেলে দিতেন। তবে গত প্রায় ২ বছর ধরে মাছ কাটার পর আঁশগুলো রেখে দেন। এরপর ভালো করে পানিতে ধুয়ে ২ দিন রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ করেন তারা। ঢাকা থেকে আসা ব্যবসায়ী ও তাদের প্রতিনিধিরা আঁশ কিনে নিয়ে যায়। তারা প্রতি কেজি আঁশ বিক্রি করেন ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। এরপর ঢাকার ১৫ থেকে ২০ জন ব্যবসায়ী সেগুলো বিদেশে রপ্তানি করেন।
মাছ কাটার সঙ্গে যুক্ত রাকিব শেখ জানান, প্রতিদিন তারা সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বিভিন্ন ধরণের মাছ কাটেন। এর মধ্যে বড় মাছগুলোর আঁশ একটু বেশি যত্ম করে ছাড়িয়ে সংরক্ষণ করেন। মাসে দুই থেকে তিন মণ আঁশ সংগ্রহ হয়। তা বিক্রি করে গড়ে প্রতি মাসে ৭ থেকে ১০ হাজার টাকার মতো আয় হয়।
তিনি আরও বলেন, আঁশ কীভাবে ছাড়ালে ভালো হয় সে সম্পর্কে তাদের ধারণা নেই। এ বিষয়ে মৎস্য বিভাগ প্রশিক্ষণ দিলে তারা উপকৃত হতেন।
নগরীর ময়লাপোতা মোড়ের সন্ধ্যা বাজার, বড় বাজার, মিস্ত্রিপাড়া বাজার, জোড়াকল বাজার, নিউমার্কেট কাঁচা বাজারসহ আরও কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি বাজারেই কিছু লোক মাছ কেটে দেন। আগে তারা মাছের আঁশ ফেলে দিলেও এখন তা সংরক্ষণ ও পরে বিক্রি করে বাড়তি আয় করছেন।
জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, খুলনার ২ শতাধিক বাজারে মাছ কাটার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন সহস্রাধিক মানুষ। তবে এর মধ্যে মাছের আঁশ বিক্রি করেন ২ শতাধিক লোক।
এ ব্যাপারে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়দেব পাল জানান, গত বছর খুলনাসহ সারাদেশ থেকে প্রায় দেড়শ’ কোটি টাকার মাছের আঁশ রপ্তানি হয়েছিল। তবে রপ্তানিকারকরা সবাই ঢাকার। সে কারণে শুধুমাত্র খুলনা থেকে কী পরিমাণ বা কত টাকার মাছের আঁশ রপ্তানি হয়েছিল সেই তথ্য আলাদা নেই।
মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, খুলনায় বাজারে যে মাছ বিক্রি হয় তার মাত্র ২০ শতাংশের মতো বাজারে কাটা হয়। বাকি মাছ বাড়ি ও হোটেল-রেস্তোরায় কাটার সময় আঁশ ফেলে দেয়া হয়। কোনো কোনো বাজারে কেউই মাছের আঁশ সংরক্ষণ করেন না।
তিনি বলেন, সব বাজারে মাছ কাটার সঙ্গে যুক্ত লোকজন আঁশ সংরক্ষণ করলে রপ্তানি আয় দ্বিগুন করা সম্ভব। কীভাবে মাছের আঁশ ছাড়াতে হয় এবং যাতে আঁশ নষ্ট না হয় সে ব্যাপারে প্রশিক্ষণ দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। মাছের আঁশ সংরক্ষণ করে বিক্রির ব্যাপারে সচেতনতা কার্যক্রম চলছে।
ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য নির্দিষ্ট অপরাধের শাস্তি পেতে হবে : জামায়াত আমির
বিশেষজ্ঞরা জানান, মাছের আঁশের বিশ্বব্যাপী নানাবিধ ব্যবহার রয়েছে। মাছের আঁশে থাকে কোলাজেন যা খাদ্য, ওষুধ, ফুড সাপ্লিমেন্ট ও কসমেটিকস শিল্পে ব্যবহার হয়। কোলাজেন নামক একটি পণ্য বিক্রি হয় ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে। চীন ও জাপানে এ আঁশ ব্যবহার করে বায়ো পাইজোইলেকট্রিক ন্যানো জেনারেটর তৈরি করা হয়, যেগুলো দ্বারা রিচার্জেবল ব্যাটারিতে চার্জ দেয়া যায়। ঘরোয়া বিদ্যুৎ উৎপাদনেও এটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এছাড়া মাছের আঁশ ব্যাটারি তৈরি, বৈদ্যুতিক পণ্য, কৃত্রিম কর্নিয়া, মাছ ও পোলট্রি খাদ্য হিসেবে ব্যবহার হয়।
সূত্র :চ্যানেল 24
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।