জুমবাংলা ডেস্ক: আধুনিকতা আর প্রাকৃতিক পরিবেশের সমন্বয়ে এক অনন্য স্থাপনা গাইবান্ধার ফ্রেন্ডশিপ ট্রেনিং সেন্টার। প্রায় ৩২ হাজার বর্গফুট আয়তনের জায়গা জুড়ে নির্মিত এই ট্রেনিং সেন্টারটি প্রথম দর্শনেই মুগ্ধ হবেন যে কেউ। ভবনের মূল গেট দিয়ে ভেতরে প্রবেশের পর প্রথম দেখায় বোঝার উপায় নেই, এর মূল প্রবেশ দ্বার কোথায়।
গাইবান্ধা শহর থেকে বালাসিঘাট সড়ক দিয়ে প্রায় ৩ কিলোমিটার যেতেই রাস্তার পাশেই প্রতিষ্ঠানটির অবস্থান। রাস্তা থেকে পাঁচফুট উঁচুতে এই স্থাপনাটির ছাদ ঘন সবুজ ঘাসে আবৃত। দূর থেকে দেখে মনে হবে, কেউ যেন সেখানে ঘাসের কৃত্রিম সবুজ গালিচা পেতে রেখেছেন।
ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের মদনের পাড়া গ্রামে ফ্রেন্ডশিপ ট্রেনিং সেন্টারটি। প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে ভ্রমণ পিপাষু মানুষ আসেন এই ভবনটি দেখতে। চরাঞ্চলের হতদরিদ্র মানুষের সেবা দিতে এবং বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নের জন্য সমাজ সেবক রুনা খান এটি প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে তিনি এই প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক।
কর্তৃপক্ষ জানায়, মাটির নিচে অত্যাধুনিক এই ভবনটির নকশাকার ও স্থপতি কাশেফ মাহবুব চৌধুরী। ভবনটির নকশা এমনভাবে করা হয়েছে যে, ওপর থেকে দেখতে অনেকটা প্রাচীন বৌদ্ধ বিহারের মতো। এর নির্মাণশৈলীর অনুপ্রেরণাও নেওয়া হয়েছে প্রাচীন বৌদ্ধ বিহার বগুড়ার মহাস্থানগড় থেকে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঘন সবুজ ঘাসের গালিচায় এক বিশাল স্থাপনা। কি নেই সেখানে? ভবনের জন্য নির্ধারিত জমি খুবই নিচু হওয়ায় পানি আটকাতে চারদিকে বাঁধ দেওয়া হয়েছে। পুরো ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে লাল রঙের ইঁট ও সিমেন্টের গাঁথুনি দ্বারা। ভবনের কোথাও কোনো প্লাস্টার ব্যবহার করা হয়নি। পুরো সেন্টারটিকে দুইটি ব্লকে ভাগ করা হয়েছে । ‘ক’ ব্লকে মূলত অফিস, ট্রেনিং সেন্টার, লাইব্রেরি রয়েছে। ‘খ’ ব্লকে রয়েছে এসি সুবিধাসহ পরিপাটি আবাসিক ভবন। রুমের অবস্থান ও কার্যক্রম অনুসারে পুরো নির্মাণ এলাকা ২৪টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এদের একটির সঙ্গে আরেকটি সংযুক্ত এবং প্রতিটি কক্ষের রয়েছে আলাদা বারান্দা ও খোলা প্যাভেলিয়ন।
দেশের অনন্য এই স্থাপনাটি ২০১৪ থেকে ২০১৬ সালের শ্রেষ্ঠ স্থাপনা হিসেবে সম্মানজনক ‘আগা খান অ্যাওয়ার্ড ফর আর্কিটেকচার’ পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত হয়। এরপর সুইজারল্যান্ড ভিত্তিক আগা খান ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্কের পুরস্কারের জন্য বিশ্বের ৩৮৪টি স্থাপনাকে পেছনে ফেলে চূড়ান্ত মনোনয়ন পাওয়া ১৯টির তালিকায় স্থান পায় এই ফ্রেন্ডশিপ ট্রেনিং সেন্টারটি।
ফ্রেন্ডশিপ ট্রেনিং সেন্টারটির ম্যানেজার লোকমান হোসেন বলেন, ‘ট্রেনিং সেন্টারটি নির্মাণে প্রায় দুই বছর সময় লেগেছে। ভবনটি নির্মাণে খরচ হয়েছে আনুমানিক ৮ কোটি টাকা। এই প্রজেক্টের ডিজাইনের কাজ ২০০৮ সালে শুরু হয়। নির্মাণ কাজ শেষ হয় ২০১১ সালে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ট্রেনিং সেন্টারটি শুধু চরাঞ্চলের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কর্মসংস্থানসহ কয়েকটি প্রজেক্ট বাস্তবায়নের জন্য করা হয়েছে। ট্রেনিং থেকে সুবিধা পাওয়া প্রত্যেকেই তাদের কর্মী এবং সুবিধাভোগী। দুটি কক্ষে একসঙ্গে ১৮০ জনকে ট্রেনিং দেওয়া যায়। আর ডাইনিং রুমে একসঙ্গে ৭০ জন খাবার খেতে পারেন। যেহেতু, এটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তাই প্রশিক্ষণার্থীদের শান্ত পরিবেশে প্রশিক্ষণ দেওয়ার উদ্দেশ্যেই এই ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে। পর্যাপ্ত আলো আর বাতাস প্রবেশের ব্যবস্থা রয়েছে এখানে। ভবনের ছাদে সবুজ ঘাস রয়েছে। কক্ষগুলো মাটির নিচে হওয়ায় সবসময় প্রাকৃতিক ভাবেই ঠান্ডা থাকে সেগুলো।’
লোকমান হোসেন বলেন, ‘মাটির নিচের অন্ধকার দূর করতে সেখানে প্রাকৃতিক আলোর উৎস স্কাইলাইট ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া প্রাকৃতিকভাবে ভেন্টিলেশন ব্যবস্থাও রয়েছে। প্রতিটি ব্লকের উচ্চতা সমান। ভবন এলাকায় ৫টি ওয়াটার পুল রয়েছে। ছাদে যাতে পানি জমে না থাকে, সে জন্য পুরো ছাদে চমৎকার ড্রেনেজ ব্যবস্থা করা হয়েছে।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।