জুমবাংরা ডেস্ক: শাহজল ভাওয়াল। ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার সাচড়া গ্রামের বর্গাচাষি । ৪ ছেলে ৪ মেয়ে নিয়ে তার সংসার। সবজি চাষ করে সংসার চালাতেন। উৎপাদন খরচ মিটিয়ে তেমন লাভবান হতে পারেননি। ভাগ্য পরিবর্তনে সিদ্ধান্ত বদল। সবজির সঙ্গে বারোমাসি ফল বেবি তরমুজের চাষ শুরু করেছেন তিনি। দৈনিক ইত্তেফাকের প্রতিবেদক
মনিরুজ্জামান, বোরহানউদ্দিন-এর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বিস্তারিত।
কীটপতঙ্গের আক্রমণ না থাকা, স্বল্প সময়ে ভালো ফলন এবং প্রত্যাশিত বাজার মূল্য পাওয়ায় তিনি বেশ সন্তুষ্ট। এখন বিভিন্ন গ্রামের চাষিরা তার তরমুজের ক্ষেত দেখতে আসেন। লাভের কথা শুনে কয়েকজন কৃষক তার দেখাদেখি বেবি তরমুজ চাষ শুরু করেছেন।
সরেজমিনে শাহজলের খেতে গিয়ে দেখা যায়, মাটি থেকে ১৫-২০ সেন্টিমিটার উঁচু লম্বা মাদা (বেড) তৈরি করে মালচিং পেপার (পলিথিনের মতো) দিয়ে শক্ত করে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। চার হাত অন্তর একটি বেড। ১৬ শতাংশ জমির সবটা জাল দিয়ে নিখুঁতভাবে বেড়া দেওয়া। উপরে ছাউনির মতো ঘুরিয়ে মাচা দেওয়া হয়েছে। সেই মাচায় লাউয়ের মতো ঝুলে আছে ছোট-বড় কালো তরমুজ। দেখতে বেশ সুন্দর। বেশ রসাল ও সুমিষ্ট। কচি অবস্থায় এটি তরকারি হিসেবেও রান্না করে খাওয়া যায়।
শাহজল জানান, গ্রামীণ জন-উন্নয়ন সংস্থার (জিজেইউএস) কৃষিবিদের সহযোগিতা ও পরামর্শে তিনি এবার নিয়ে তৃতীয়বার বেবি তরমুজের আবাদ শুরু করেন। এখানে শারীরিক পরিশ্রম ছাড়া তেমন খরচ হয়নি। প্রতিদিন এলাকার কৃষকেরা বেবি তরমুজের ফলন দেখতে আসেন। চাষপদ্ধতি জেনে যান। কেউ কেউ আবার কিনেও নেন। তিনি বাড়িতে বসেই ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন। এখন তিনি ৪র্থবার সুইট ব্ল্যাক’ বা কালো জাত ও নতুন ‘গোল্ডেন ক্রাউন’ বা হলুদ তরমুজ লাগানোর কথা ভাবছেন। কারণ, এটি বেশ লাভজনক। ইতোমধ্যে ৬০ টাকা দরে ৪ মণ তরমুজ বিক্রি করা হয়েছে। ক্ষেতে আরও ৫ মণের মতো হবে। তরমুজ চাষ করে বেশ ভালো আছেন তিনি।
সাচড়া গ্রামে শাহজলের মতো চান মিঞা , হানিফ, সালাউদ্দিন, আসাদুল্যাহ জানান, এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্ল্যাকবেরি তরমুজ রোপণ করা যায। ৬০ দিনের মধ্যে এ তরমুজের ফলন আসে। যেখানে সাধারণ তরমুজের ফলন আসতে সময় লাগে ১১০ থেকে ১২০ দিন। এবার ব্যাপক ফল এসেছে। এই তরমুজ চাষ করে স্বল্প সময়ে অধিক লাভবান হওয়া যায়৷ প্রতি শতাংশ জমিতে ২৩-২৬টি চারা রোপণ করা যায়৷ জমি তৈরি থেকে শুরু করে ফল আসা পর্যন্ত এক শতাংশ জমিতে ২৪০-২৫০ টাকা খরচ হয়৷ যা থেকে সহজেই ৫ হাজার টাকার অধিক আয় করা যায়৷
চাষিরা জানান, এই তরমুজ সারাবছর চাষ করা যায়। অল্প জমিতে অধিক ফলন হয়। লাভও ভালো পাওয়া যায়। তাই এর আবাদ বাড়ানোর আগ্রহ তাদের। এজন্য তারা প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও পৃষ্ঠপোষকতা চান।
বোরহানউদ্দিন কৃষি অফিস জানায়, ব্ল্যাক বেবি জাতের তরমুজ উচ্চতাপমাত্রা ও হঠাৎ বৃষ্টি সহ্য করে ভালো ফলন দেয়। এটি ভাইরাস মুক্ত তরমুজের জাত। প্রতিটি গাছে ৩-৫টি পর্যন্ত কালো রঙের তরমুজ ধরে। এই তরমুজ লম্বা ডিম্বাকৃতির এবং এর ত্বক পুরু হওয়ায় দীর্ঘ সময় পরিবহনে তরমুজের কোনোরূপ ক্ষতি হয় না।
গ্রামীণ জন-উন্নয়ন সংস্থার বাজার শাখার সহকারী ভ্যালু চেইন ফ্যাসিলিটেটর ইকবাল আহমদ অভি বলেন, ইফাদের অর্থায়নে গ্রামীণ জন-উন্নয়ন সংস্থার বাস্তবায়নে প্রথম পর্যায়ে এবছর বোরহানউদ্দিন উপজেলার ৩০ জন কৃষকের মধ্যে বিনামূল্যে স্যার, বীজ, কীটনাশক, জাল, রশি ও নগদ অর্থসহ তরমুজ চাষের সব উপকরণ দেওয়া হয় ৷ এর মধ্যে সাচড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে ৮টি পয়ন্টে প্রায় ১২৮ শতাংশ জমিতে এই তরমুজ চাষ করা হয়েছে৷ ইতোমধ্যে বাজারে ও স্থানীয়ভাবে বিক্রি হচ্ছে।
বেসরকারি সংস্থা গ্রামীণ জন-উন্নয়ন সংস্থার (জিজেইউএস) সহকারী পরিচালক কৃষিবিদ আনিসুর রহমান টিপু বলেন, ১ বিঘা বা ৩৩ শতাংশ জমিতে এই তরমুজের আবাদ করতে সর্বোচ্চ ৪০-৪৫ হাজার টাকা খরচ হয়। ১ বিঘায় ১ হাজার ২০০ চারা বপন করা যায়।৭০ থেকে ৮০ দিনে বিঘাপ্রতি সর্বনিম্ন ২ হাজার ৪০০ ফল (ওজনে ৫ থেকে সাড়ে ৫ মেট্রিক টন) উৎপাদন করা সম্ভব। সর্বনিম্ন ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও ২ থেকে আড়াই লাখ টাকা বিক্রি করা সম্ভব।
উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. এএইচএম শামীম বলেন, জলাবদ্ধতা হয় না, এমন ধরনের উঁচু জমি এই বারোমাসি তরমুজ চাষের উপযোগী। ‘সুইট ব্ল্যাক’ বা কালো জাত ও নতুন ‘গোল্ডেন ক্রাউন’ বা হলুদ জাতের বারোমাসি বেবি তরমুজের আবাদ এখানকার কৃষকদের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি করছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।