আন্তর্জাতিক ডেস্ক : দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর চতুর্থ দেশ হিসেবে চন্দ্র জয়ের ইতিহাসে নাম লেখালো ভারত। বুধবার (২৩ আগস্ট) বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬টা ৩৩ মিনিটে চাঁদের মাটিতে নেমেছে ভারতের চন্দ্রযান-৩। অবাক করা বিষয় হলো ভারতের এই চন্দ্র বিজয়ে ব্যয় হয়েছে মাত্র ৬১৫ কোটি টাকা।
বুধবার বাংলাদেশ সময় বিকাল ৫টা ২০ মিনিট থেকে এই চন্দ্রযানের ল্যান্ডিং অপারেশন সরাসরি সম্প্রচার শুরু করে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে সরাসরি এই অবতরণ অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
ইসরোর দাবি, চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে এর আগে কোনো দেশই মহাকাশযান পাঠাতে পারেনি। ফলে ইসরোর এই সফলতার মাধ্যমে নতুন ইতিহাস গড়লো ভারত। এই যাত্রায় সফল হওয়ায় চাঁদের মাটিতে নেমে আমেরিকা, রাশিয়া ও চীনের পর বিশ্বের চতুর্থ দেশ হিসেবে নজির গড়লো ভারত।
মহাকাশ গবেষণা সংস্থাটি জানায়, গত ১৪ জুলাই চন্দ্রযান-৩ ভারতের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধওয়ান স্পেস সেন্টারের লঞ্চিং প্যাড থেকে যাত্রা শুরু করে। ১৫ জুলাই পৃথিবীর প্রথম কক্ষপথ পেরিয়েছিল এই চন্দ্রযান। উৎক্ষেপণের পর চাঁদের দিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে দ্বিতীয়বার যানটি কক্ষপথ পরিবর্তন করে ১৭ জুলাই। এর পর যথাক্রমে ১৮ জুলাই, ২০ জুলাই এবং ২৫ জুলাই পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ বলের গণ্ডি ছাড়িয়ে তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম কক্ষপথ অতিক্রম করে চন্দ্রযান-৩। চন্দ্রযানটি চাঁদের কক্ষপথে প্রবেশ করে ৫ অগস্ট। পৃথিবীর কক্ষপথ থেকে বেরিয়ে চাঁদের কক্ষপথে প্রবেশের মাঝের সময়টি উৎকণ্ঠায় কেটেছিল ইসরোর বিজ্ঞানীদের। তবে সব শঙ্কা কাটিয়ে অবশেষে চাঁদের মাটি ছুঁলো চন্দ্রযান-৩।
ইসরোর এই চন্দ্রযানের কেন্দ্রে ছিল এলভিএম-৩ রকেট। যা চন্দ্রযানটিকে শক্তি জুগিয়ে পৃথিবীর কক্ষপথের বাইরে ঠেলে দিয়েছিল। এলভিএম-৩ রকেটের মধ্যে দু’টি স্তরে কঠিন জ্বালানি এবং একটি স্তরে তরল জ্বালানি ছিল। কঠিন জ্বালানি ১২৭ সেকেন্ড ধরে জ্বলে। উৎক্ষেপণের ১০৮ সেকেন্ডের মধ্যে জ্বলতে শুরু করেছিল তরল জ্বালানি। তা ২০৩ সেকেন্ড ধরে রকেটটি চালনা করে।
এর আগে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে চন্দ্রযান-২ মন ভেঙেছিল ভারতীয়দের। এই চন্দ্রযানের ল্যান্ডার সফলভাবে চন্দ্র পৃষ্ঠ স্পর্শ করতে পারেনি। ২.১ কিলোমিটারের কাছাকাছি উচ্চতায় গিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তাই এবারের ল্যান্ডিং নিয়ে বাড়তি উৎকণ্ঠা ছিল বিজ্ঞানীদের। তবে শেষ পর্যন্ত সফল হলেন তারা।
ইসরো বলছে, ২০১৯ সালে চন্দ্রযান-২-এর ব্যর্থতার পর এক ধাক্কায় চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায় তাদের চাঁদের মাটি ছোঁয়ার স্বপ্ন। কান্নায় ভেঙে পড়েন সংস্থাটির তৎকালীন চেয়ারম্যান কে শিবন। কিন্তু দমে যাননি ইসরোর বিজ্ঞানীরা। মন খারাপ সরিয়ে চন্দ্রযান-৩-এর কাজে হাত লাগায় ইসরো। অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন করে চাঁদের মাটি ছোঁয়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। ইতিহাস তৈরির লক্ষ্যে নতুন করে পথ চলা শুরু করে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা।
চন্দ্রযান-২ এর ব্যর্থতার পর ২০১৯-এর ডিসেম্বরে এই প্রকল্পটি শুরুর জন্য ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে প্রাথমিকভাবে ৭৫ কোটি টাকার বরাদ্দ চেয়েছিল ইসরো। এর মধ্যে অত্যাধুনিক সরঞ্জামের জন্য ৬০ কোটি এবং অন্যান্য ব্যয় মেটানোর জন্য বাকি ১৫ কোটি চাওয়ো চাওয়া হয়। টাকা পেয়েই চন্দ্রযান-৩ এর কাজ শুরু করে ইসরো। সবমিলিয়ে চন্দ্রযান-৩-এর বাজেট ছিল মাত্র ৬১৫ কোটি টাকা। যা আমেরিকা বা রাশিয়া চাঁদের অভিযানের ব্যয়ের তুলনায় অনেক কম।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।