সাইফুল ইসলাম, মানিকগঞ্জ : সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে অবহিত করার মাধ্যমে জনগণের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে ‘এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’ শিরোনামে দেশব্যাপী ব্যাপক প্রচার কার্যক্রম চলছে। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের গণযোগাযোগ অধিদপ্তর একটি প্রকল্পের মাধ্যমে মানিকগঞ্জে জেলা তথ্য অফিস ও জেলা আনসার ভিডিপি কো-অপারেটিভ সোসাইটি এ কাজটি বাস্তবায়ন করছে। এলইডি ভ্রাম্যমান ভ্যানের মাধ্যমে প্রামান্যচিত্র ও নাটিকা আকারে গ্রাম-গঞ্জে এ প্রকল্পের আওতায় চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হচ্ছে।
এ উপলক্ষ্যে আজ শনিবার (০২ অক্টোবর) জেলার সদর উপজেলার জাগীর ইউনিয়ন পরিষদ মাঠে এমন একটি প্রামান্য অনুষ্ঠান প্রদর্শন করা হয়। প্রামান্য অনুষ্ঠানে সরকারের বিভিন্ন মেগা প্রকল্প ও সরকারের ১০ উদ্যোগের উপর নির্মিত প্রামান্যচিত্র, মুজিব শতবর্ষের গান ও নাটিকাও অনুষ্ঠানে প্রদর্শন করা হয়।
প্রামান্য অনুষ্ঠানে পদ্মা সেতু ও রেলসংযোগ, ভাঙ্গা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পায়রা সমুদ্র বন্দর, বঙ্গবন্ধু শিল্পপার্ক, ইকোনোমিক জোন ইত্যাদির উপর নির্মিত প্রামান্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়। এছাড়াও হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল, ঢাকার মেট্রোরেল, বঙ্গবন্ধু টানেল, ঢাকা-কক্সবাজার রেলসংযোগ, ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে, পায়রা ব্রীজ, হাতিরঝিল প্রকল্প ইত্যাদির উপর নির্মিত প্রামান্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। সরকারের এসব মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে দেশের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যে পরিবর্তন সূচিত হবে প্রামান্য চিত্রে তা তুলে ধরা হয়। এছাড়া চলমান করোনা পরিস্থিতিতে জনগণকে সচেতন করতে তথ্যচিত্র দেখানো হয়। বঙ্গবন্ধু জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মের উপর নির্মিত তথ্যচিত্র দেখানো হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক জনাব মুহাম্মদ আব্দুল লতিফ বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম হয়েছিল বলেই বাঙালী জাতি একটা স্বাধীন দেশ পেয়েছে, একটা পতাকা পেয়েছে। তাঁর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে বাঙালীর চির আরাধ্য স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণ হচ্ছে। বিশেষত পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের পর দক্ষিনাঞ্চলের মানুষের জীবনধারা বদলে যাবে। তিনি আরো বলেন, সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ায় আজ পৃথিবী হাতের মুঠোয় এসেছে, ছেলেমেয়েরা ঘরে বসেই লেখাপড়া করছে। করোনাকালে সরকারের শাসনযন্ত্র ডিজিটাল বাংলাদেশের কারণেই সচল ছিল বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ ওমর ফারুক দেওয়ান বলেন, এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো- (ক) গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে প্রচার কার্যক্রম শক্তিশালীকরনের মাধ্যমে তৃণমূল পর্যায়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মেগা প্রকল্প গ্রহণের উদ্যোগ ও এর ফলাফল জনগণকে অবহিত করে সরকারকে সহযোগিতা করা (খ)মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ১০টি বিশেষ উদ্যোগ যেমন- একটি বাড়ী একটি খামার, আশ্রয়ণ, ডিজিটাল বাংলাদেশ, শিক্ষা সহায়তা কর্মসূচি, নারীর ক্ষমতায়ন, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ, কমিউনিটি ক্লিনিক, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, বিনিয়োগ বিকাশ এবং পরিবেশ সুরক্ষা বাস্তবায়নের মাধ্যমে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবনমান ও আয়বৃদ্ধি এবং বাংলাদেশ সরকারকে যে মধ্যমআয়ের দেশে রূপান্তরের প্রক্রিয়া তাতে দেশের সকল মানুষের সম্পৃক্ততার মাধ্যমে লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করা (গ) দেশব্যাপী গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে উদ্বুদ্ধকরণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি), ভিশন-২০২১ ও ডিজিটাল বাংলাদেশের লক্ষ্য অর্জনে সরকারকে সহযোগিতা করা (ঘ) মাদকের ভয়াবহতা সম্পর্কে বিশেষ প্রচারণাসহ বাল্যবিবাহ ও সন্ত্রাস বিরোধী কার্যক্রম প্রতিরোধে বিশেষ প্রচারনার ব্যবস্থা গ্রহণ করা (ঙ) জলবায়ু পরিবর্তন জনিত উদ্ভুত সমস্যা মোকাবেলা ও পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে খাপ খাওয়ানোর লক্ষ্যে জনগনকে তথ্য প্রদানও সচেতন করা। মৌলিক স্বাস্থ্য, শিক্ষা, শিশুঅধিকার, লিঙ্গ সমতা, নারী অধিকার ও নারীর ক্ষমতায়ন, নারীনির্যাতন ও যৌতুক বিরোধী আইন, নারীর প্রতি সহিংসতা, পরিবার পরিকল্পনা, সেনিটেশন, এইচআইভি/এইডস, এসটিডিসহ বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ বিষয়ে গ্রামীন জনগোষ্ঠিকে সচেতন করা। গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর মাঝে জঙ্গী তৎপরতা, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, খাদ্যে ভেজালমিশ্রণ, নারী ও শিশু পাচার ইত্যাদি প্রতিরোধে প্রচলিত আইনসম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করে সরকারকে রাষ্ট্র পরিচালনায় সহায়তা করা।
এ সময় জেলা তথ্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ নূর হোসেনের সঞ্চালনায় ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সানোয়ারুল হকের সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে প্রচার কার্যক্রম শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ ওমর ফারুক দেওয়ান, জেলা ইসলামী ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক মুহাম্মদ জামাল হোসাইন, আনসার ও ভিডিপির জেলা কমান্ডেন্ট মোঃ এফতেখারুল ইসলাম, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন ও জাগীর ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জাকির হোসেনসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
তিনি আরো বলেন, এসব কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে আনসার ও ভিডিপি কো-অপারেটিভ সোসাইটি (আভিকো) লিঃ এর মাধ্যমে দেশব্যাপী ১৯ হাজার স্পটে প্রামান্য চিত্র প্রদর্শন করা হচ্ছে। এ ছাড়া জেলা তথ্য অফিসের মাধ্যমে ১৯ হাজার ৮৪৪ স্থানে চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হয়। গ্রামীণ নারী সমাজকে সচেতন করার লক্ষ্যে প্রকল্পের আওতায় ১৩৯০টি মহিলা সমাবেশ করা হয়। ভাসমান জনগোষ্ঠীকে সচেতন করতে ৮ হাজার ৫২টি পথ সঙ্গীত অনুষ্ঠান করা হয়। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১০৭ কোটি টাকা।
এর মধ্যে, চলমান প্রান্তিকে মানিকগঞ্জ জেলায় আনসার ও ভিডিপি কো-অপারেটিভ সোসাইটি (আভিকো) লিঃ এর মাধ্যমে ৩৬টি প্রামান্যচিত্র প্রদর্শন করা হচ্ছে। এ কার্যক্রম ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ২ অক্টোবর পর্যন্ত চলমান রয়েছে। এ ছাড়া মানিকগঞ্জ জেলা তথ্য অফিসের মাধ্যমে ৪৭ টি চলচ্চিত্র, ০৪টি মহিলা সমাবেশ ও ৩৬টি সঙ্গীতানুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।