সাইফুল ইসলাম, মানিকগঞ্জ : মানিকগঞ্জের বিভিন্ন রুটে চলাচলরত প্রায় আড়াই হাজার গণপরিবহন থেকে দৈনিক অর্ধলক্ষাধিক টাকার চাঁদা তোলা হয়। বছরে যার পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় দুই কোটি টাকা। গণপরিবহন থেকে চাঁদাবাজির নেতৃত্ব দেন ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী দুই নেতা। তারা হলেন- জাতীয় শ্রমিক লীগের মানিকগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি বাবুল সরকার ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য ও মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের সাধারণ সম্পাদক এম এ ইরাদ কোরাইশী (ইমন)।
মানিকগঞ্জের বিভিন্ন রুটে চলাচলরত পরিবহন চালক, চাঁদা তোলার দ্বায়িত্বে নিয়োজিত লাইনম্যান, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক সদস্যের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, মানিকগঞ্জ পৌরসভার বাসস্ট্যান্ড, বেউথা ঘাট ও দুধবাজার স্ট্যান্ড থেকে নিয়মিত আড়াই হাজার হ্যালোবাইক, সিএনজি, মাহিন্দ্র ও প্রাইভেটকারসহ বিভিন্ন পরিবহন থেকে নিয়মিত চাঁদা তোলেন ওই দুই নেতা। চাঁদা আদায়ের জন্য তাদের নিজস্ব লোকবল নিয়োগ দিয়েছেন। যারা লাইনম্যান হিসেবে পরিচিত।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড থেকে মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড থেকে শহর ও বেউথা রুটে চলাচলরত আট শতাধিক হ্যালোবাইক থেকে ১০ টাকা করে, মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড থেকে সিংগাইর, বালিরটেক, ঝিটকা, তিল্লি, চরতিল্লি, ঘড়িয়ালা, সাটুরিয়া, দড়গ্রাম রোডে চলাচলরত আট শতাধিক সিএনজি থেকে দৈনিক ৩০ টাকা করে, মানিকগঞ্জ রেন্ট-এ-কার সার্ভিসের প্রায় দুই শত প্রইভেটকার ও মাইক্রোবাস (হায়েচ) থেকে ৩০ টাকা করে, মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড থেকে সিংগাইর রোডে চলাচলরত অর্ধশতাধিক মাহিন্দ্র থেকে ৩০ টাকা করে, মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড থেকে বাংলাদেশ হাট, রাইল্যা, ডাউটিয়া, বিলনালাই, উকিয়ারা, সাকরাইলসহ বিভিন্ন রোডে চলাচলরত চার শতাধিক হ্যালোবাইক থেকে ১০ টাকা করে, পৌরসভার বেউথা হ্যালোবাইক স্ট্যান্ড থেকে হরিরামপুর, ঝিটকা, বাঠইমুড়ী, লাউতা, সরুপাই ও ঘোস্তা রোডে চলাচলরত দুই শতাধিক হ্যালোবাইক থেকে ১০ টাকা করে এবং দুধবাজার এলাকা থেকে শতাধিক হ্যালোবাইক থেকে ২০ টাকা রতে এবং রাতে মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড থেকে ঝিটকা রোডে চলাচলরত সিএনজি চালিত ১০টি হ্যালোবাইক থেকে মাসে ১৫ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করা হয়। সব মিলিয়ে দৈনিক চাঁদা তোলা হয় অর্ধলক্ষাধিক টাকা।
তবে চাঁদাবাজির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি বাবুল সরকার। তিনি বলেন, পৌরসভা থেকে পার্কিং চার্জের জন্য ইজারা নেয়া হয়েছে। ইজারার নিয়ম অনুযায়ী চাঁদা তোলা হচ্ছে। বাড়তি কোন টাকা নেয়া হচ্ছে না।
মানিকগঞ্জ পৌরসভা থেকে পাওয়া তথ্য অনুয়ায়ী, চলতি বছরের ১৩ এপ্রিল (বাংলা ১৪২৯ সনের ১লা বৈশাখ) মানিকগঞ্জ পৌর বাস টার্মিনাল ৯টি কাউন্টারসহ স্থাপনা ব্যতিরেকে টোল আদায়ের ইজারা বন্দোবস্ত দেওয়া হয়। ইজারার শর্তানুযায়ী প্রতিটি বাস থেকে দৈনিক ৫০ টাকা হারে ফি আদায়ের অনুমতি দেয়া হয়। তবে কোন হ্যালোবাইক, সিএনজি, অটোরিকসা, মাহিন্দ্র ও ব্যক্তিগত গাড়ি থেকে ফি আদায়ের অনুমতি দেয়া হয়নি। ইজারার শর্তে আরো বলা হয় যে, ইজারাদার কোন শর্তের খেলাপ বা পালন করতে ব্যর্থ হলে ইজারা বন্দোবস্ত বাতিল পূর্বক জমাকৃত টাকা বাজেয়াপ্ত করা হবে।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ইজারাদার ইজারার শর্তের খেলাপ করেছেন। বিভিন্ন রুটের প্রায় আড়াই হাজার পরিবহন থেকে নিয়মিত চাঁদা তুলছেন। মাঠ পর্যায়ে চাঁদা উঠােনার কাজে বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সিএনজি থেকে টাকা উঠায় বাবু ও আল আমিনসহ কয়েকজন। হ্যালোবাইক থেকে চাঁদা উঠায় শান্ত, সাব্বির, সবুজ, সুমন, সীমান্ত, অপূর্ব, শরীফুল, শাহীন, হাবিব, আদ দ্বীন, জাহাঙ্গীরসহ আরো বেশ কয়েকজন। রেন্ট-এ-কার সার্ভিস থেকে চাঁদা উঠায় টিপু ও বাদল। অপরদিকে বেউথা হ্যালোবাইক স্ট্যান্ড থেকে চাঁদা উঠানোর দায়িত্বে রয়েছেন ফারুক মিয়া এবং দুধবাজার এলাকায় চাঁদা উঠানোর দায়িত্বে আছেন মনোয়ার হোসেন।
একাধিক সিএনজি ও হ্যালোবাইক চালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, লাইনম্যানরা জোরপূর্বক চাঁদা আদায় করে। চাঁদা না দিলে আমাদের গাড়ি চালাতে দেয় না এবং নানা রকম হুমকি-ধামকি দেয়।
লাইনম্যান মনোয়ার হোসেন বলেন, আমরা চাকরি করি, বাবুল সরকার ও ইমন ভাইয়ের নির্দেশে চাঁদা উঠানো হয়।
এ নিয়ে ইজারাদার এম এ ইরাদ কোরাইশী (ইমন) এর মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিয়েও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
মানিকগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মো. রমজান আলী বলেন, হ্যালোবাইক, সিএনজিসহ সব গাড়ি চালকদের গণপিটিশন দিলে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারবো।
মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ গোলাম আজাদ খান বলেন, খোঁজ-খবর নিয়ে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।