সাইফুল ইসলাম, মানিকগঞ্জ : মানিকগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে পাসপোর্ট করতে আসা হুমায়রা (১৬) নামের এক রোহিঙ্গা নারীকে আটক করা হয়েছে। এ সময় ওই নারীর সঙ্গে থাকা আবু তাহের (২২) নামের এক দালালকেও আটক করা হয়। সে কক্সবাজারের চকরিয়া থানার গোয়াইলমারা গ্রামের মো. ইলিয়াসের ছেলে।
রোববার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে তাদের আটক করে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে মানিকগঞ্জ সদর থানায় সোপর্দ করা হয়।
মানিকগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারি পরিচালক নাহিদ নেওয়াজ বলেন, আটককৃত ওই রোহিঙ্গা নারী মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলার চান্দহর ইউনিয়নের চর চান্দহর গ্রামের মো. খলিলুর রহমানের মেয়ে তাসনিম বেগম পরিচয়ে পাসপোর্টের আবেদন করেন। আবেদনের সঙ্গে জন্মসনদ, বাবার জাতীয় পরিচয়পত্র ও চান্দহর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের চারিত্রিক সনদপত্র জমা দেন। কিন্তু তার কথাবার্তায় সন্দেহ হলে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তার আঙ্গুলের ছাপ পরীক্ষা করে দেখা যায়, রোহিঙ্গা হিসেবে তিনি নিবন্ধিত হয়েছেন। রোহিঙ্গা ডাটাবেজে তার নাম হুমায়রা, পিতার নাম হামিদুল্লাহ ও রোহিঙ্গা আইডি নম্বর ১৫৫২০১৭১২২৪১১৫৪৫৯।
নাহিদ নেওয়াজ আরও বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওই নারী স্বীকার করেছেন তিনি রোহিঙ্গা। পরে ওই নারীকে মানিকগঞ্জ সদর থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়েছে। এ বিষয়ে মামলা হয়েছে।
জানা যায়, কক্সবাজারের দালাল আবু তাহেরের সহযোগিতায় মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর এলাকার এরশাদ নামের এক দালালের মাধ্যমে এক লাখ টাকা চুক্তিতে পাসপোর্ট করতে আসেন ওই রোহিঙ্গা নারী। এজন্য এরশাদকে অগ্রিম দেওয়া হয় ৬০ হাজার টাকা। তবে পাসপোর্ট কর্মকর্তাদের হাতে ওই নারী আটক হওয়ার পর সটকে পড়েন দালাল এরশাদ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পাসপোর্টের আবেদনে ওই নারী সিঙ্গাইরের চান্দহর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শওকত হোসেন বাদল স্বাক্ষরিত একটি সনদ ও সিরাজগঞ্জের শাহাজাদপুর উপজেলার সোনাতনী ইউনিয়ন পরিষদ থেকে করা জন্মসনদ জমা দেন।
চারিত্রিক সনদপত্রের বিষয়ে জানতে চাইলে চান্দহর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শওকত হোসেন বাদল বলেন, এটা একটা জাল সনদ। ওই সনদে যে স্বাক্ষর রয়েছে সেটা আমার না। ওখানে যে তারিখ দেওয়া আছে ওই তারিখে আমি কোন সনদ দেইনি।
শাহাজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, ৭-৮ দিন আগে সোনাতনী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সচিবের জন্মসনদ সার্ভারের পাসওয়ার্র্ড হ্যাক হয়েছে। বিষয়টি জানার পর আমি আইডি-পাসওয়ার্ড পরিবর্তনের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি। বিষয়টি ডিডিএলজি স্যারকে জানিয়েছি। স্যার প্রধান কার্যালয়ে জানিয়েছেন। তবে আমরা এখনো কোন সমাধান পাইনি।
সিরাজগঞ্জের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক (ডিডিএলজি) মোহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেন বলেন, আমরা হ্যাক হওয়া আইডির কার্যক্রম স্থগিত করার চেষ্টা করছি। কেন্দ্রীয় সার্ভার নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রে জানানো হয়েছে। প্রতিদিনই এ বিষয়ে যোগাযোগ করছি কিন্তু কোন সমাধান পাচ্ছি না। গত ৭-৮ দিনে সোনাতনী ইউনিয়নের নামে এক হাজারের বেশি জন্মসনদ করা হয়েছে। প্রতিদিনই একশ-দুইশো জন্মসনদ করা হচ্ছে। হ্যাকারকে শনাক্ত করার কাজ চলছে। আমরা জানতে পেরেছি ঢাকার কেরানিগঞ্জ এলাকার একটি ছেলে এটি হ্যাক করেছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করছি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।